তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ সবার সম্মিলিত চেষ্টাই পারে দেশকে তামাক মুক্ত করতে’- ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত করোনা সংলাপের ২৫ তম পর্বে এ মন্তব্য করেছেন মোঃ সাইফুজ্জামান শিখর, সংসদ সদস্য (মাগুরা-১), আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য (মহিলা আসন-১১), সদস্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সঞ্চালনায় ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক এই লাইভ আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টায়।
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্ব জুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর রিপোর্ট মোতাবেক, তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যান তামাকের কারণে। তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭% বেশি এবং তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯% বেশি। একারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৩৫% তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন। সংখ্যার হিসেবে যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। আবার ১৩ থেকে ১৫ বছরের অপ্রাপ্তবয়স্করাও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার থেকে পিছিয়ে নেই। শতকরার হিসেবে সেটিও প্রায় ৬.৯%। যারা ধূমপান করেন না, কিন্তু পরোক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতির শিকার হন, এমন মানুষের সংখ্যার তা প্রায় ৪ কোটি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। তবে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি এফসিটিসির সাথে অনেকাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের জন্য নতুন হুমকি ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই। এজন্য আইনের সংশোধন করা খুবই জরুরী। আরেকটি বিষয়ও আমি উল্লেখ করতে চাই যে, বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, যা তামাকের ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণের পথে একটি বড় বাধা। আর এজন্য এই কর কাঠামোকে সহজ করতে হবে। এটা করে যথাযথ পদ্ধতিতে তামাক-কর বৃদ্ধি করলে তামাকের ব্যবহার কমাতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
সংসদ সদস্য মোঃ সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশ তামাকমুক্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময়ের ঘোষণা দিতে পারেনি, যেটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। তিনি ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমি আশা করি তার ঘোষণার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাবো। এক্ষেত্রে সরকার তার জায়গা থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং করে যাবে। বিশেষ করে তামাকের বিরুদ্ধে আমরা যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছি সেটি চালিয়ে যেতে হবে।
সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, যারা তামাক চাষে যুক্ত থাকেন তাদের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান সরকার তামাক চাষীয়দেরকে বিকল্প চাষের পথ দেখাচ্ছেন। যা তাদেরকে তামাক চাষ থেকে ফেরাতে সহায়তা করছে। তবে এটাও সত্য, যে কোন আন্দোলনের সফলতা একদিনেই আসে না। এজন্য সময় লাগে। বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ফাঁক রয়েছে সেগুলোর সংশোধন হলে এদেশের মানুষদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের প্রকোপ আরো কমবে বলে আমি আশা করি। এজন্য আমাদের সংসদ সদস্যদের দিক থেকে আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা রয়েছে। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এছাড়া তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণে মূল্যবৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট করারোপ করাটাও জরুরী বলে আমি মনে করি।
প্রসঙ্গত, ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক এই লাইভ আলোচনাটি একযোগে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হয়।#