উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলে সহিংস ঘটনা বেড়েই চলেছে। সামান্য বিষয় নিয়েই শুরু হয় মারামারি। গত ছয় মাসে জেলায় সহিংসতায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন; আহত হয়েছেন শতাধিক। সহিংসতার পর বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, জোরপূর্বক ফসল কেটে নেওয়া এবং আসামি পক্ষকে বাড়িতে উঠতে না দেওয়ারও ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ হত্যকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেল ২১ মে। ওইদিন গভীররাতে পেড়লি ইউনিয়নের জামরিলডাঙ্গা গ্রামের নূরুল খন্দকারের স্ত্রী ছালেহা বেগম (৭৫) বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থা দুর্বৃত্তরা তাকে পুড়িয়ে হত্যা করে। গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর এই বৃদ্ধার ছেলে আরিফ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন।
৮ মে তুলারামপুর ইউনিয়নের মালিডাঙ্গা গ্রামে স্বামী কর্তৃক নববধূ স্ত্রী মিম সুলতানাকে(১৯) শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ ওঠে।
২৫ এপ্রিল কালিয়া পৌরসভার বড়কালিয়া এলাকার সাদাত ব্যাপারির ছেলে রুবেল ব্যাপারি (২৮) নিহত হন।
১৯ এপ্রিল লোহাগড়া উপজেলার বাতাসি গ্রামের আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সালাউদ্দিন (৪৮) ছোটভাই জসিম উদ্দীনের লাঠির আঘাতে মারা যান। ২০ ফেব্রুয়ারি পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের মহিষখোলার আবুল হোসেনের ছেলে আল আমিন (২৮) সংঘর্ষে খুন হন এবং দশজন আহত হন। এ ঘটনায় আসামি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হকসহ ৩০-৩৫টি পরিবারের পুরুষ এলাকাছাড়া।
১৬ ফেব্রুয়ারি হবখালী ইউনিয়নের চর-সিঙ্গিয়া গ্রামে শফিয়ার মোল্যার ছেলে সাবু মোল্যা (৩২) খুন হন।
১৯ জানুয়ারি পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের মোজাফফর ফারাজির ছেলে আজমল ফারাজি (৪৫) জেলার সারুলিয়া এলাকায় নবগঙ্গা নদীতে ট্রলারে বালি তোলার সময় রহস্যজনকভাবে নিহত হন।
১৪ জানুয়ারি চণ্ডিবরপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ভুমুরদিয়া গ্রামের ছানোয়ার মোল্যা (৬৫) খুন হন।
৩ ডিসেম্বর দিঘলিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া গ্রামের ইশারত বিশ্বাসের ছেলে বিল্লাল বিশ্বাস (৫৫) খুন হন।
২৫ নভেম্বর তুলারামপুর ইউনিয়নের বামনহাট সড়ক থেকে দুর্বৃত্তরা জেলার সিঙ্গিয়া গ্রামের চাঁন মোল্যার ছেলে রোহান মোল্লাকে (২০) হত্যা করে তার ইজিবাইকটি নিয়ে যায়।
১০ নভেম্বর কালিয়ার বাঐসোনা গ্রামে সংঘর্ষে পাশের কলাবাড়িয়া গ্রামের ফায়েক ফকিরের ছেলে রায়হান ফকির (২৮) খুন। ওই সময় হামলায় আহত হন ২০ জন।
এছাড়া, ২৪ এপ্রিল শহরের আলাদাতপুর, ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপাশা, ২২ এপ্রিল কুমড়ি, ৬ এপ্রিল শহরের ধোপাখোলা, ৫ এপ্রিল পুরুলিয়া, ২৪ এপ্রিল খলিশাখালী, ২৪ এপ্রিল নোয়াগ্রামসহ আরো একাধিক এলাকায় পৃথক পৃথক সহিংস ঘটনায় দুই পুলিশ, দুই নারীসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার প্রবীরকুমার রায় বলেন, ‘নড়াইলে গরুতে ঘাস-পাতা খাওয়ানোর মতো সামান্য ঘটনা নিয়ে মারামারি হয়। সেই বিচার করলে প্রতিদিনই সহিংস ঘটনা ঘটবার কথা। এটা অনেকটা এখানকার প্রথা। নড়াইলে তিন মাস এসেছি; এরপর সহিংস ঘটনা হয়নি বললেই চলে। জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বর্তমানে অনেক ভালো। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।