কেরালার বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সাক্ষী এবার কেরালার মানুষ। গত নয়দিনে যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
শুক্রবার (১৭ আগস্ট) কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়েছে, কেরালায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩২৪। রাজ্যের ১৫ শতাধিক ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন দুই লাখ ২৩ হাজার ১৩৯ জন। রাজ্যজুড়ে পানির স্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় ৮০টি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত চলবে বৃষ্টি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করে কোমর বাঁধছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। গতকাল উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে ঠিক হয়, কেরালায় ভয়াবহ বন্যায় উদ্ধার কাজে গতি আনতে ভারতীয় সেনার তিনটি বিভাগ, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে আরো বেশি জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। ফলে এদিন নতুন করে কেরালায় এক হাজার ৩০০টি লাইফ জ্যাকেট, ৫৭১টি লাইফবোট, এক হাজার রেইনকোট, এক হাজার ৫০০টি শুকনো খাবারের প্যাকেট, এক হাজার ২০০টি রান্না করা খাবারের প্যাকেট, ২৫টি মোটরচালিত নৌযান এবং নয়টি নৌকা পাঠানো হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় কেরালার বন্যা দুর্গত এলাকায় ভারতীয় নৌসেনার ১৬টি বিমানে করে লক্ষাধিক খাবারের প্যাকেট ফেলা হয়েছে। কেরালা বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কাজ চালাচ্ছে ভারতীয় নৌসেনার ৪২টি, সেনাবাহিনীর ১৬টি, উপকুল্রক্ষী বাহিনীর ২৮টি এবং এনডিআরএফের ৩৯টি দল। সেনাবাহিনীর ২০০টি নৌকা, চারটি বিমান এবং কোচিতে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর তিনটি জাহাজ কাজ করছে।
কেরালার আলাপুঝা, এরনাকুলাম, ত্রিশুর, চালাক্কুড়ি, কোচি, পতনমথিট্টায় জারি করা হয়েছে কড়া সতর্কতা। গতকাল নতুন করে ধস নেমেছে ইডুক্কি, মালাপ্পুরম এবং কান্নুর জেলায়। একনাগাড়ে বৃষ্টির ফলে কেরালার বিভিন্ন জেলার ত্রাণশিবিরিগুলোতেও পানি ঢুকতে আরম্ভ করেছে। ফলে ত্রাণশিবির থেকে দুর্গতদের সরিয়ে আনতে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত নৌকা এবং হেলিকপ্টার। কেরালার পম্পা নদী প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় সবরোমালা মন্দিরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কেরালাগামী সমস্ত ঘরোয়া ফ্লাইটের টিকিটের দাম কম রাখতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। আগামী এক সপ্তাহের জন্য কেরালার সমস্ত ফোনকল এবং ডাটা পরিষেবা বিনামূল্যে করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রণালয়।
কেরালার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে শনিবার যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি জেলাতেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। কেরালার তিরুঅনন্তপুরম-কোট্টায়ম-এরনাকুলাম এবং এরনাকুলাম-শোরানুর-পালাক্কড় রেলওয়ে বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় রেল ট্র্যাক পানির তলায় চলে গেছে। কোথাও কোথাও আবার পানির তোড়ে পুরো রেল ট্র্যাকটাই হারিয়ে গিয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কেরালা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১ জুন থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে দুই লাখ আট হাজার ৭৬৭ মিলিমিটার।