শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
গণপূর্তমন্ত্রীর সাথে ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধির সৌজন্য সাক্ষাৎ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে সরকার বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্ব গঠন করবে। – পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন খাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী নতুন প্রজন্মের মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার আহ্বান জানান মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। কালিগঞ্জে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী ও সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন আতাউল হক দোলন এমপি Jolpore.com অনলাইন বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পিবিআই  এথেন্স সম্মেলন : দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ৪ দিনের ন্যাপ এক্সপো, উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। -পরিবেশমন্ত্রী সাবের চৌধুরী নলতাকে মাদক ও বখাটেমুক্ত করতে চেয়ারম্যান আজিজুর এর ব্যাতিক্রম উদ্যোগ

‘ঠান্ডা মাংস এবং আগুনের চুল্লি’ আকাশ নির্মাণের এক যৌথ প্রয়াস (পাঠ প্রতিক্রিয়া) – কুশল ভৌমিক

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১, ৭.৪৩ পিএম
  • ২৫৫ বার পঠিত
কবিতার সুনির্দিষ্ট বা একক কোন সংজ্ঞা নেই, তবুও কবিতা প্রসঙ্গে বলতে গেলে অগ্রজ কবি স্বপন সৌমিত্রের একটি কথা ভীষণ মনে পড়ে। স্বপনদা বলতেন-
ক= কথা
বি= বিশেষ
তা= তাৎপর্য
অর্থাৎ কথা যখন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে তখনই তা কবিতা হয়ে ওঠে। দিনশেষে কবিতা আসলে হয়ে ওঠারই ব্যাপার। ক’দিন ধরে পড়ছিলাম পশ্চিমবঙ্গের কবি তৃষ্ণা বসাক এবং বাংলাদেশের কবি তৌফিক জহুরের যৌথকাব্য ‘ঠান্ডা মাংস এবং আগুনের চুল্লি ‘। বইটি প্রকাশ করেছে পুন্ড্রবর্ধন প্রকাশনী। নান্দনিক প্রচ্ছদ এবং চমৎকার গেটআপের বইটি কেবল বহিরাঙ্গে নয় ভেতরেও সুখপাঠ্য। এই বইটির অনেক কবিতাই বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
তৃষ্ণা বসাক এই সময়ের আলোচিত কবি ও কথাকার। লেখালেখির নেশায় ছেড়েছেন বহু লোভনীয় অর্থকরী পেশা। লাভ করেছেন অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। তৃষ্ণা বসাকের কবিতা পড়তে গিয়ে আমার যে কথাটি বারবার মনে হয়েছে তা হলো তৃষ্ণাদির কবিতা মূলত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ এবং অভিজ্ঞানের মিথস্ক্রিয়া।কবিতার উপকরণগুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জীবন ও জীবনবোধ থেকে নেয়া,ফলে কোনকিছুই আরোপিত নয়,ইমিটেশান আছে, মিমিক্রি নেই।
‘বাংলাদেশ ২০০৭’ কবিতাটিতে যেমন আছে পরিভ্রমণের আনন্দ, মনস্তাত্ত্বিক পরিভ্রমণ। আবার ‘ধূলিরাষ্ট্র’নামক দীর্ঘ কবিতায় রয়েছে ব্যক্তিগত বেদনাবোধ। কবির সার্থকতা এখানেই মিথ,(দেখতে পাই শিমুলের উঁচু ডালে/কে বা কারা লাল ডাকবাক্স বেঁধে দিয়ে যায়/ঠিক যেমন অর্জুন অস্ত্র বেঁধে এসেছিল শমিবৃক্ষে) রুপক, উপমার সার্থক ব্যবহারে
এই বেদনাবোধ কীভাবে যেন ছুঁয়ে দেয় সার্বজনীন ডানা—
‘সৌরবলয়ের মধ্যে আমি এক দগ্ধডানা মানুষ
হে মৃত্যু,আমাকে ভুল করেও প্রণত ভেব না!’
কবিতা কোন জড়বস্তু নয়, কবিতার প্রাণ আছে এবং একজন কবিকেই সেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়। ‘অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ‘ কবিতায় আমরা যা প্রত্যক্ষ করি–
‘ কখনো আমি এক ট্রাংক অপ্রকাশিত জীবনানন্দ
উবু হয়ে বসে সুচেতনা দু’হাতে আমাকে তুলে নিচ্ছে
ওর উন্মুখ স্তনের ঘষা লেগে
মৃত অক্ষরগুলো মুছে যাচ্ছে,
প্রজাপতির পাখার রঙের মতো,
আর আমি আবার জন্মাচ্ছি
নবীন কবির গোপন ডায়েরিতে,
জন্মানো ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই আমার…’
‘পুরনো অন্তর্বাস’ ‘ঠান্ডা মাংস’ -এ দুটি কবিতার ভেতর লুকিয়ে আছে এমন এক অন্তর্গত বেদনা যা পাঠান্তে বুকের ভেতর এক অমোঘ শূন্যতা তৈরি হয়।চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে -ও হে জীবনানন্দ দাশ, শোন,পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ দুঃখ পোষে, প্রতিটি মানুষ হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।
লাইব্রেরি নিয়ে দুটো কবিতা রয়েছে এই গ্রন্থে ‘লাইব্রেরি,শার্ট খোলো’ এবং ‘আমাকে নেবে না লাইব্রেরি?’ দুটো কবিতাতেই কবি গ্রন্থের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছেন।লাইব্রেরি ইট কাঠ পাথরের নিছক অবকাঠামো নয়, লাইব্রেরি প্রেমিক অথবা ঈশ্বর।
গ্রন্থভূক্ত কবিতাগুলোর মধ্যে ‘যদি’ এবং ‘মহানিষ্ক্রমণ’ এই কবিতা দুটির প্রতি আমার প্রচ্ছন্ন পক্ষপাত আছে। কবিতা দুটির নির্মাণ কৌশল এতটাই আধুনিক যে অন্তরের ভেতর একটা দোলা সৃষ্টি হয়,
‘soul touches soul through the medium of body’ শরীরের ভেতর দিয়েই একটি আত্মা অন্য আরেকটি আত্মাকে স্পর্শ করে।কবিতার শরীর বোধের স্পর্শ নিয়ে স্থায়ী নিবাস গড়ে আমাদের মননে। এখানেই কবির মুন্সিয়ানা,এখানেই তৃষ্ণা বসাক সফল ও সার্থক।
কবিতার কাঁচামাল অবশ্যই শব্দ কিন্তু শব্দ বিন্যাসই কবিতা নয়। শব্দের ভেতর দিয়ে হেঁটে কবিকে একটি শব্দাতীত জগত নির্মাণ করতে হয়। আসুন পাঠ করা যাক ‘যদি’ শিরোনামের এই কবিতাটির অংশ বিশেষ —
‘যদি আমার বেড়ালের নাম মজন্তালি হয়,
কিংবা আমার কুকুর পুষতে ভালো লাগে,
অথবা ধরুন আমার কোনো পোষ্যই নেই,
যদি আমার নাকটা ঠিক আপনার মতো না হয়,
যদি আমার স্তন থাকে কিংবা না থাকে আর আমি একজোড়া সুডোল স্তন নির্মাণের স্বপ্ন দেখি,
যদি আমি একটা ভাষায় কথা বলি যা আপনি জানেন না,
কিংবা,আমার কোন ভাষাই না থাকে,তো?….
তৌফিক জহুর নব্বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি ও প্রাবন্ধিক। দীর্ঘকাল ধরে সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘উদ্যান’। লেখালেখির হাতেখড়ি সাংবাদিকতা থেকে। পূর্ণ ও খণ্ডকালীন হিসাবে কাজ করেছেন বাংলার বাণী,জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক,ইনকিলাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পত্রিকায়। গদ্যের হাত অসাধারণ হলেও তৌফিক জহুর মূলত কবি। তার কবিতা ভনিতাহীন সকালের রোদের মতো। শব্দের আদর,চিত্রময়তা,রুপক আর কল্পচিত্রের মিশেলে তার কবিতা তাৎপর্যপূর্ণ অথচ সারল্যের ঠাঁসবুননে নান্দনিক ঐশ্বর্য মাখা। বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যায়ে উত্থান হলেও তৌফিক জহুর মূলত রোমান্টিক ঘরানার কবি। চারপাশের জগতকে ভিন্নমাত্রায় পর্যবেক্ষণের মুন্সিয়ানা আর তার সাথে ধ্রুপদী সুর হয়ে বেজে ওঠা নস্টালজিয়া তার কবিতাকে দেয় অনবদ্য দ্যোতনা।’ঠান্ডা মাংস এবং আগুনের চুল্লি’ এই গ্রন্থটিও ব্যতিক্রম নয়। জীবনের পরিচিত গল্পগুলো চিত্রকল্পের ঠাঁস বুননে কীভাবে ছুঁয়ে দেয় স্মৃতিকাতরতার নান্দনিক আকাশ তা এই গ্রন্থ পাঠ করলে পাঠক নিবিড়ভাবে অনুভব করবেন।
তৌফিক জহুরের কবিতার অন্যতম বিশেষত্ব হলো বাংলার পাশাপাশি ফারসি,আরবি,সংস্কৃত ও তৎসম এর স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার। গ্রন্থটির প্রথম কবিতা ‘ফরিয়াদ’, করোনাকালীন পৃথিবীতে মানুষের অসহায়ত্ব এবং তা দূর করতে স্রষ্টার দরবারে কবির আন্তরিক ফরিয়াদ–
‘খুলে দাও আকাশের দরোজা নেমে আসুক রহমত
আশেকের দিলের জলে ভিজে যায় তোমার জমিন।’
‘প্রকৃতি ও মানুষ’ শিরোনামের কবিতাটিও একই প্রেক্ষাপটে লেখা।প্রিন্সেপঘাটে রেলগাড়ি থামে এবং ঝরাপাতা চমৎকার স্মৃতিচারণমূলক কবিতা। তবে আমাকে চমকে দিয়েছে ‘শব্দের গাছ’ শিরোনামের কবিতাটি–
‘ আমি দৌড়ে তোমার আঙিনায় গিয়ে দেখি
এক একটা শব্দের আওয়াজে গাছের জন্ম হচ্ছে
…………..
………….
শব্দ ও স্বপ্নের অলৌকিক সঙ্গমে গাছ হয়’
আরেকটি মুগ্ধতা জাগানিয়া ছোট কবিতা ‘শিশির’। উপলব্ধির সবগুলো জানালা খুলে যেখানে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন—
‘আমি ব্লেড দিয়ে শিশির কাটলাম
শিশিরের আদি পরিচয় বের হলো
মানুষের চোখে যে জল গড়ায় সেটাই শিশির ‘
নস্টালজিয়া বা স্মৃতি কাতরতা রোমান্টিক কবিদের সহজাত প্রবৃত্তি যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক ধরনের পলায়নবাদিতা। বর্তমান সময়ের জরা ব্যাধি কুট কৌশলের বেড়াজাল টপকে রোমান্টিক কবিরা প্রায়ই পরিভ্রমণ করেন অতীতে। না,কোন হেমলক বা সুরায় আচ্ছন্ন হয়ে নয় কবিতার ঐন্দ্রজালিক পাখায় ভর করে। তৌফিক জহুর এই গ্রন্থের অনেকগুলো কবিতায় বারবার ফিরে গেছেন তার শৈশবে, আম্মার স্নেহময় আচলে, পোড়াদহ মেলা,করতোয়া নদী কিংবা রুবী ম্যাডামের স্মৃতি তাকে আচ্ছন্ন করেছে বারবার। ইংরেজ কবি জন কিটস এর মতো কবিও হারিয়ে যেতে চেয়েছেন শৈশবের স্মৃতিমাখা সেইসব সোনালী অতীতে।
‘Away away I will fly to thee
Not charioted by Bachchus and his pards
But on viewless wings of poesy’
( Ode to A Nightingale by John Keats)
বস্তুত ‘ঠান্ডা মাংস এবং আগুনের চুল্লি’ কবি তৃষ্ণা বসাক এবং তৌফিক জহুরের কবিতা নামক অধরা আকাশকে স্পর্শ করার এক যৌথ প্রয়াস। এই নান্দনিক প্রয়াস আমাদের আনন্দ দেয়, সমৃদ্ধ করে। বইটি পাঠক প্রিয় হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
  12345
20212223242526
27282930   
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com