“পত্রাবলী ১”
প্রিয়তমা,
সত্যি করেই বলছি তাই বিশ্বাস করো বা নাই করো। তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে কয়েক জনম পার করে দেওয়া যায়। আমি একজন সুন্দরের পূজারী সেই কারনেই তোমার বর্ণনা আমি দিচ্ছি।
তোমার যে অবয়ব নিয়ে আমার সামনে আর্বিভূত হও, তোমার মুখের অভিব্যক্তির মধ্যে যে কারুকার্য, তোমার অভিব্যক্তির মধ্যে যে ভাষা খেলা করে, তোমার চোখের মধ্যে যেভাবে দারুন দারুন স্বপ্ন ঝিলিক দিয়ে উঠে, তোমার ভিতর যে জীবন লুকিয়ে আছে তা আমাকে অন্য এক পৃথিবীতে নিয়ে যায়। সৌন্দর্য্য পিপাসু যে কোন মানুষ, যে সত্যিকার অর্থে মানুষের চোখের ভিতর দিয়ে তার মনের সৌন্দর্য্য কে দেখতে পছন্দ করে, তার কাছে অবশ্যই সব সময়, সবকালের সুন্দরতম মেয়ে তুমি।
তোমাকে ভালোবাসার বহুকিছু আছে। তোমাকে এই কারনে ভালোবাসা উচিত যে কারনে স্রষ্টা এত সুন্দর করে তোমায় সৃষ্টি করেছে। যে কারনে এত সুন্দর ভাবে তুমি আমার সামনে আর্বিভূত হও। আমি পৃথিবীতে অনেক সুন্দর মেয়ে দেখেছি কিন্তু আমি সাধারন মেয়েদের মধ্যে অনন্ন্য সুন্দর বিষয় গুলা আবিষ্কার করতে পারিনি।
তুমি যখন কথা বলো, কথা বলার সময় তোমার দাঁত গুলো যখন দারুন ভাবে বের হয়ে আসে, মুখের অভিব্যক্তি যে ভাবে খেলা করে, মনে হয় অন্য এক পৃথিবীতে তুমি আমায় নিয়ে যাচ্ছো। এত সুন্দর চমৎকার লাগে তোমায়। তুমি যখন কথা বলো, সদ্য ফোটা গোলাপের পাপড়ির মত লাল ঠোঁট যখন নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে তখন মনে হয় এটাই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সৌন্দর্য্য, আমাকে মুগ্ধ করার। তোমার ঠোঁটের উষ্ণতা আমাকে অমরাবতীর স্বাদ পাইয়ে দেয়। ঠোঁটের দাগ কালশিটে এখনো লেগে আছে। সে যেন নিরোদো দম্পতীর মতো পাশে শুয়ে জীবন ভিক্ষা। তোমার পরাগ মেখে দুনিয়ার সবথেকে সুখের রাজ্যে আরোহন করা।
তোমার কথা বলার ভঙ্গি তোমার কন্ঠকে আরো সুন্দর করে তোলে। কোকিলের কুহু কুহু ডাক যতটানা ভালো লাগে তার থেকে ভালো লাগে তোমার কন্ঠ। তুমি যখন হাসো মনে হয় এই বুঝি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মুহূর্ত, রামধনু তার রং ছড়াতে প্রস্তুত দূর গগণে। সূর্য মুখীরা ও লজ্জ্বা পাবে তোমার হাসি দেখে।
তুমি যখন কথা বলতে বলতে একুটু এলোমেলো হয়ে যাও, কথার রেশ হারিয়ে ফেলো তখন আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবথেকে নিষ্পাপ দৃশ্য আমার সামনে অবতারন হচ্ছে। তোমার সমস্ত সৌন্দর্যের কাছে আমি দুর্বল। তোমাকে ভালো না বাসলে আমার অন্যায় হবে। এত যত্ন করে যে বিধাতা তোমায় সৃষ্টি করেছেন তার অনন্য সাধারন সৃষ্টিকে পায়ে ঠেলা হবে যদি তোমাকে ভালো না বাসা হয়।।।
“পত্রাবলী ২”
প্রিয়তমা,
একটা সময় ছিল তোমার কথা ভেবে অনেক কাঁদতাম। তোমার সাথে কথা বলা অবস্থায় মোবাইল কানে নিয়েও জোরে জোরে চিৎকার করে কেঁদেছি, কেন জানো? তোমাকে ভালবাসি বলে।
পরিচিত এক বড় ভাই দুদিন কান্না করতে দেখে ফেলেছিল, তবুও কান্না করা থামাতে পারিনি আমি। ঐ ভাইটির বুকে মুখ লুকিয়েও কেঁদেছি। জোরে কান্না করতে করতে বলেছিলাম, “ভাই, সে আমার ভালবাসা বুঝলনা”
কয়েকদিন প্রশ্ন করেছিলাম, আমার জন্য কি কখনো কাঁদো তুমি?
উত্তরে বলেছিলে, “আমার চোখের পানি এত সস্তা না”
আমি জানি আমার চোখের পানি অনেক সস্তা। তাই খুব অল্পতেই ঝরে পড়ে।
আমি এখন কান্না করা ভুলে গেছি। এখন আর তোমাকে ভেবে দুই চোখে জল আসেনা। মনকে খুব করে শান্তনা দেই, “যার জন্য কাঁদিসরে মন, সে কি কখনো তোর ছিল? ”
এখন আর খাবার নিয়ে বসে থাকিনা, যে কেউ ফোন করে একটি বারের জন্য বলবে, “খেয়ে নিও”
আজকাল কেউ শুভ সকাল না বললেও আমার সকালটা খুব শুভই হয়।
রাত জাগাটা পুরোনো অভ্যেস থাকায় বেলা দশটা এগারোটায় ঘুম ভাঙ্গলেও নিজেকে খুব বেশী সতেজ মনে হয়। পিছুটান আর মায়াটা হারিয়ে গেছে অন্ধকার কোন গলিতে।
বারবার বলেছিলাম বিবেকের কাঠগড়ায় নিজেকে দাড় করাও। কাকে কাঁদাচ্ছ? কেন কষ্ট দিচ্ছ একটু ভাবো।
অনেক কষ্টে জর্জরিত হয়ে নিজেকে বিবেকের সামনে হাজির করেছিলাম।
“কার জন্য কাঁদি আমি? যে আমাকে কাঁদায়?
কাকে ভালবাসি আমি? যে আমাকে শুধু অবহেলাই করে গেল?
আমি বাধ্য হয়েছি কঠোর হতে। নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছি আমি। আমি আর তোমাকে ভালবাসিনা। তোমাকে ভেবে আর কান্না করিনা।
দিনেতো অনেক কথাই বলেছি, রাত এলে কেন যেন মনে হয় আমি পরাজিত সৈনিক। দিনশেষে রাতে যখন একা হই, তখন ভাবতেই হয়, আমি মনে হয় তোমাকে সত্যিই ভুলতে পারিনি।
অনেকদিন জানা হয়না তুমি কেমন আছো?
ভাল আছো তুমি? বড্ড জানতে ইচ্ছে হয়। আবার পরক্ষনেই ভেবে শান্তি পাই, ভালইতো আছো আমাকে ছাড়া। এখনতো আর আমি রোজ ঝগড়া করিনা তোমার সাথে।
হয়তো যাকে পেয়ে আমাকে পর করেছো সে তোমাকে অনেক ভাল রেখেছে।
তোমার দেয়া ফিরোজা রংয়ের পাঞ্জাবীটা এখনো আছে। গায়ে পড়িনা, ইস্ত্রী দিয়ে হেঙ্গার করে আলনায় সাজিয়ে রেখেছি। এই পাঞ্জাবীটায় তোমার ছোঁয়া লেগে আছে।
আমি তাকিয়ে থাকি, খুব করে তাকিয়ে থাকি পাঞ্জবীর দিকে।
একটা সময় ছিল খুব বেশী জ্বালাতন করতাম। শুভ সকাল, নাস্তা করেছো কিনা, শরীর ও মন ঠিক আছে কিনা, কলেজ যাবা কিনা, বাসের বাইরে হাত বের করে রাখলে কিনা, বাসায় ফিরেছো কিনা, রাতের খাবার খেয়ে লক্ষী মেয়ের মত ঘুমিয়েছো কিনা। এই হাজারটা জানতে চাওয়ার মধ্যে অনেকটা ভালবাসা ছিল, আর তোমার ছিল হাজার গুণ বিরক্তি। আজকাল আর বিরক্তও করিনা তোমাকে।
আমার দোয়া ও শুভকামনা এটাই, আমাকে ছাড়া ভালোই থাকো।
পুড়ে যাওয়া ক্ষত বিক্ষত মনটাকে যতই বলি, আমি তোমাকে ভালবাসিনা, তোমাকে ভুলে গেছি। কিন্তু অবুঝ মনটা কেন যেন খুব করে তোকে খুঁজে ফিরে।
তুমি যেদিন বলেছিলি, আমি যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেই আর ভুলে যাই, সেদিনই ক্ষমা করে দিছি। কিন্তু তোমাকে আজো ভুলতে পারিনি। বাকি জীবনে পারব বলে মনেও হয়না। ভয় নেই, তোমাকে জ্বালাতে আসবনা। দূর থেকেই দোয়া ও শুভকামনা রইল, আল্লাহ যেন তোমাকে মাফ করে দেন।
তবে আরেকটা অনুরোধ, নতুন কাউকে আর কষ্ট দিওনা। সবাই সইতে পারেনারে, দরজা লাগিয়ে বা অন্ধকার রাতে বালিশ চেপে কাঁদতে হয়। আমি ভাল নেইরে, এখনো তোমাকে ভালবাসি।
{চলবে…}
গাজী মোখলেছুর রহমান
নবীন লেখক