মাজহারুল রাসেল : কোরবানির ঈদের হাওয়া ও কঠোর বিধিনিষেধের প্রভাব পড়েছে সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচাবাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম কম হলেও নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকার কারণে সবকিছুর দামই বাড়তি।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। বাজারে ক্রেতাও কম। অনেক মুদি দোকানের পাশাপশি মাংসের দোকানও বন্ধ। ছিল না কোনো হইহল্লা। বিক্রেতারা বলছেন, একে ঈদের পর, অপরদিকে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম। আরো দুই-এক দিন পর হয়তো ক্রেতারা বাজারে আসতে শুরু করবেন।
ঈদের আগে বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে চাল। সরু চালের মধ্যে নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬৫ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। পাইজাম ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫৩ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণ ও চায়না ইরি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪৬ টাকা কেজি। সয়াবিন তেলের বোতল এক লিটার ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়, ৫ লিটার ৭০০ থেকে ৭১০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ভালো মানেরটা কেজি ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।
কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের দামই বেশি বেড়েছে। ঈদের আগের দিন যেই কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এলাকাভিত্তিক কাঁচা বাজারগুলোতে বেগুন প্রতিকেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, শশা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকায়। ঈদের আগে ১০ টাকা আঁঁটির লালশাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। লাউ ও চালকুমড়া আকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। লেবু প্রতিহালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানি ঈদের হাওয়া বিধিনিষেধে সরবরাহ কম ও বৃষ্টি-এই তিন কারণে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ।
কাঁচপুর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী দিপু বলেন, ঈদের সময় গাজর ও টমেটোর চাহিদা বেড়ে ছিল। অনেকে সালাদ খাওয়ার জন্য কিনছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে এ দুটি পণ্যের সরবরাহ কম, এ কারণে দাম বেড়েছে।
আরেক ব্যবসায়ী হাসেম বলেন, গাজর ও টমেটোর দাম আগে থেকেই বেশি। এখন ঈদের টানে দাম আরো বেড়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে দাম একটু কমে যাবে। তবে গাজর ও টমেটোর কেজি সহসা ১০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।
মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীরী সানোয়ার বলেন, ঈদের সপ্তাহ খানিক পরে কাঁচাবাজারে এসে দেখলাম সব কিছুর দাম অনেক বেশি। কাঁচা মরিচ কিনতে হলো ১০০ টাকা কেজি, যা আগে ৪০ টাকা কেজিতে কিনেছি। বাজারে সবজিরও বেশি আমদানি নেই। সবাই বলছে লকডাউনের জন্য বেশি মাল আসেনি তাই দাম বেশি।
কাঁচাবাজারে চাহিদার পাল্লায় ভারী থাকে মসলা আর শাকসবজির সরঞ্জামে। মসলাজাতীয় পণ্যের দাম এখনো কিছুটা বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে জিরা কেজি ৩০০ টাকা, দারুচিনি ৩৮০ টাকা, লবঙ্গ ৮৫০ টাকা, এলাচ (ছোট) ২ হাজার ৪০০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা, তেজপাতা ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, রসুন দেশিটা ৮০-৯০ টাকা, বিদেশি ১৪০ টাকা, আদা দেশি ১৩০ টাকা, বিদেশি ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির মতো মাছ বাজারেও অল্পকিছু ব্যবসায়ী মাছ বিক্রি করছেন। তবে ক্রেতা কম, মাছের দামও বেড়েছে। মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। এছাড়া কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে তেলাপিয়া মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩৪০ টাকা, মৃগেল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং রূপচাঁদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
মাংসের বাজারে গিয়ে গরু ও খাসির মাংসের কিছু দোকান খোলা দেখা গেছে। তবে মুরগির দোকান খোলা পাওয়া যায়। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ও দেশি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে।