মিডিয়া ও লেখালেখিতে ইমরুল কায়েস নামেই পরিচিত। জন্ম পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ ইউনিয়ন এর পারঘোড়াদহ গ্রামে। পিতা সুজানগরের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা এবং মাতা মিসেস হাসিনা বেগম একজন গৃহিণী। এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে লেখকের অবস্থান তৃতীয়।
গ্রামের পাঠশালাতেই প্রাথমিক শিক্ষায় হাতেখড়ি। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছেন। এরপর ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন চিনাখড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু কয়েক মাস পরই ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান পাবনা শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর এম একাডেমি স্কুলে। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত (৮ম শ্রেণী) এই স্কুলেই পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে আবারও চিনাখড়া স্কুলে ফিরে আসেন এবং ভর্তি হন নবম শ্রেণীতে। এই স্কুল থেকেই ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত এস.এস.সি পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ১৯৯৯ সালে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে এইচ.এস.সি পাশ করেছেন পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে।
তারপর ১৯৯৯-২০০০ সেশনে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু এখানে মন টেকেনি। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০০০-২০০১ সেশনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন একই বিষয়ে।
ছাত্র জীবনে ছিলেন বিতার্কিক। বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল পর্যায়ের বাংলা ও ইংরেজি বিতর্কে একাধিক পুরস্কার রয়েছে। বিতর্ক করার পাশাপাশি বিতর্ক সংগঠকও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি-ডিইউডিএস এর প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক বিতর্ক উৎসবেও অংশ নিয়েছেন।
এয়ারলাইন্স, ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি চাকরি হলেও সেসবে মন টানেনি। ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনে ২০০৪-০৫ সালে কাজের মধ্য দিয়ে ছাত্রাবস্থাতেই সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন বাংলাভিশনে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। কূটনৈতিক ও পররাষ্ট্র বিট কাভার করেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের জন্য নির্মিত ‘প্রবাসী মুখ’ অনুষ্ঠান নিয়মিত উপস্থাপনা করেন। বর্তমানে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠণ ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ-ডিক্যাব এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ, সচিবালয় সাংবাদিক ফোরাম-বিএসআরএফ এর স্থায়ী সদস্য।
পেশাগত কাজের দক্ষতা উন্নয়নে নানা সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ থেকে প্রফেশনাল সার্টিফিকেট কোর্সসহ তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট-এমআরডিআই, ইন্টারনিউজ, বিশ্বখাদ্য সংস্থা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট-পিআইবি ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেছেন।
বিদেশ ভ্রমণ: পেশাগত দায়িত্ব পালনে লেখক কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কোপ-২১ কাভার করতে প্যারিস যান। এরপর সেখান থেকে যান বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে।
এছাড়া চীন সরকারের আমন্ত্রনে তিনবার (২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে) দেশটির রাজধানী বেইজিংসহ বিভিন্ন শহর সফরের সুযোগ পান। রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে ভারতের আসাম সফর করেন ২০১৮ সালে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে ২০১৯ সালে ত্রিপুরা যান ওই রাজ্যটির সরকারী আমন্ত্রণে। এছাড়া সরকারি আমন্ত্রণে ২০১৬ সালে পাকিস্তান এবং ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া সফর করেন।
পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেন। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন চায়না দুতাবাস সম্মাননা (২০২১), চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি সম্মাননা (২০১৯) এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ সম্মাননা (২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০)।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
আনলাকি থারটিন অত:পর প্যারিস (২০১৬), রোহিঙ্গা গণহত্যা: কাঠগড়ায় সুচি (২০১৭), চায়না দর্শন (২০১৮) ও বিখ্যাতদের অজানা কথা (২০২১)।
অনুবাদ গ্রন্থ:
দ্য রুলস অফ লাইফ (২০১৯), দ্য লজ অফ হিউম্যান নেচার (২০১৯) এবং দ্যা আইজ অফ ডার্কনেস (২০২০)।
এছাড়া প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে দ্য লজ অফ হিউম্যান নেচার বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের অনুবাদ গ্রন্থ।
স্ত্রী মৌসুমী আক্তার স্বপ্না এবং দুই ছেলে ইমরুল জিসান সাদ ও আয়মান ইমরুল সাদিককে নিয়ে সংসার।