প্রকৃতি তার রীতিতে অটল। আজ নয়তো কাল। সাংবাদিকতা অঙ্গনে আবার রাক্ষুসে সাংবাদিক! এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সারাদেশে রাক্ষুসে সাংবাদিকের কমবেশী অস্তিত্ব রয়েছে। এটাকে সমুলে বিনাশ করা উচিত, নয়তো এরা ছোটবড় সাংবাদিকদের গিলে ফেলবে। দেশের রাক্ষুসে সাংবাদিক নিপাত যাক; গণমাধ্যম মুক্তি পাক। দেশে প্রতিনিয়ত রাক্ষুসে সাংবাদিকের ঈন্ধনে পেশাদার সাংবাদিকরা ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমন সব রাক্ষুসে সাংবাদিকদের ঈন্ধণে ওসি প্রদীপের দ্বারা ৬টি মামলার শিকার হয়েছিলেন কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদ মোস্তফা। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দৈনিক সংবাদের কামাল হোসেনকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছিল। সেখানেও বিএমএসএফের প্রতিনিধিদল সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে রাক্ষুসে সাংবাদিকের ঈন্ধনের বিষয়টি পরিস্কার হয়ে ওঠে। একই এলাকায় যুগান্তরের ষ্টাফ রিপোর্টার হাবিব সারওয়ার আজাদকে ইয়াবা নাটকে ফাঁসানোর অপচেষ্টার পেছনেও ছিলো রাক্ষুসে সাংবাদিকদের সরাসরি হস্তক্ষেপ। যদিও ঐসময় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামের ফলে সেখানকার এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের মুখে চুনকালি লেপন করে ২৭ ঘন্টার ব্যবধানে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলো। গাজীপুরের এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি আবুবকর সিদ্দিকের ওপর হামলার পেছনে ছিলো সেখানকার একদল রাক্ষুসে সাংবাদিকের ঈন্ধণ। কুমিল্লার মুরাদনগরে সমকালের প্রতিনিধি শরীফ চৌধুরীকে প্রকাশ্যে নিজ ঘর থেকে টেনে হিচড়ে উঠানে নামিয়ে জবাই করতে উদ্যত হয়েছিলো চেয়ারম্যান গ্রুপ। শরীফের মুক্তিযোদ্ধা পিতা-মাতা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও পিটিয়ে আহত, লাঞ্ছিত করে। এমনকি তাকে ডাকাতি, হত্যা মামলারও আসামী করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে সাংবাদিক নির্যাতন ঘটনার কারণ গবেষণা করতে গিয়ে পেছনে ঈন্ধনদাতা হিসেবে রাক্ষুসে সাংবাদিকের যোগসাজসের অগনিত প্রমান মিলেছে।
এমনি এক ঘটনার অনুসন্ধানে ঝালকাঠিতে মিলেছে চোখ কপালে ওঠারমত চিত্র। সম্প্রতি ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস সিকদারের নামে আইসিটি এ্যাক্টে মামলা করেছে এক রাজনৈতিক দলের নেতা। মামলা দায়েরের পরে তাকে প্রেসক্লাবের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এমন সময় তার বিপদে সহকর্মীরা অধিকাংশই পাশে নেই। অনেকেই তাকে গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। এদের সকলেই আককাস সিকদারের দ্বারা হামলা, হামলা, লাঞ্ছিত কিংবা হয়রাণী অথবা চাকরীচ্যুতির শিকার।
কে এই আককাস সিকদার! জনশ্রুতি রয়েছে চা দোকানী থেকে পত্রিকার হকার পরবর্তী বিএনপির ছাত্রদল থেকে টপকিয়ে এলডিপি নেতা এবং তৎপরবর্তী আইনজীবি এই আককাস সিকদার। হয়তোবা তিনি ভাবতেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী। তার সহকর্মীদের অধিকাংশের দাবী আক্কাস সিকদার কোন সংবাদের ঘটনা ঘটলেই নানারকম ফন্দি-ফিকির চালিয়ে থাকতেন। হয়তো উকিল বেশে, নয়তো সাংবাদিক কখনো প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি পদ ব্যবহার করে টার্গেট করা সাংবাদিকের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে নামে বেনামে নানা কল্পিত অভিযোগ পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মিকে চাকুরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চালাতেন। কিংবা ওই সকল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিপক্ষের লোকজন দ্বারা বিনা পয়সায় মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এছাড়াও আক্কাস সিকদারের অনুমতি ছাড়া কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির নিউজও নাকি করা যেত না। নিউজ করতে গেলেই ভুক্তভোগী সাজিয়ে থানায় কিংবা আদালতে দায়ের করাতেন। প্রেসক্লাব সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে তিনি এসব হয়রানির নেপথ্যের প্রকাশ্যে ইন্ধন দিতেন। বাদ পড়েনি জুনিয়র-সিনিয়র কেউ। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পর্যন্ত হারাতেও হয়েছে। যমুনা টিভি, একুশে টিভি টিভিসহ কমপক্ষে দেড়ডজন সাংবাদিকের নামে মামলার তিনি নেপথ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিককে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুলিয়া দিয়েছেন বহুবার। সমকালের জিয়াউল হাসান পলাশ ও যমুনা টিভির দুলাল সাহাকে এক ঠিকাদারের মিথ্যা মামলায় নিজে উকিল সেজে মামলা দায়েরে সহযোগিতা করে হাজত খাটিয়ে ছেড়েছেন। একুশে টিভি ও যায়যায়দিনের তৎকালীন জেলা প্রতিনিধি আজমীর হোসেন তালুকদারকে স্বস্ত্রীক শিশু সন্তানসহ হাজত খাটাতে প্রকাশ্যে ঈন্ধন দিয়েছেন ওই আক্কাস সিকদার। পরবর্তীতে বৈশাখি টেলিভিশনের শফিউল আজম টুটুলকে হয়রাণী, দিনকালের ওমর ফারুক, ভোরের অঙ্গীকারের এমদাদুল হক স্বপন, আমাদের সময়ের এসএম রাজ্জাক পিন্টু, বাংলা টিভির নজরুল ইসলাম, দৈনিক দক্ষিনাঞ্চলের এইচএম মিজানুর রহমান, নলছিটির মনিরুজ্জামান মনির, যায়যায়দিনের কাঠালিয়া প্রতিনিধি এইচএম বাদল ও সাংবাদিক রাজীব তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা এবং মোহনা টিভির রুহুল আমিন রুবেল, আজকের পরিবর্তনের রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু ও সাংবাদিক বশির আহমেদ খলিফাকে লোক মারফত ডেকে এনে রাস্তায় লোক জড়ো করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে আহত এবং লাঞ্ছিত করে ভিডিও তার ফেসবুকে ছেড়ে মানহানি ঘটায়। এবং প্রতিপক্ষ দাঁড় করিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করালেও পুলিশ চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হামলাকারীদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বশির আহমেদ ঢাকার সাইবার আদালতে মামলা করলে দীর্ঘ তদন্ত শেষে আক্কাস এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে বরিশাল পিবিআই চার্জশীট দাখিল করেছে। এদিকেহামলাকালে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোন ও টাকা কড়ি উদ্ধারে শীঘ্রই আদালতে মামলা দায়ের হচ্ছে বলে জানাগেছে। এখন সেই প্রভাবশালী আক্কাস সিকদার নিজেই ফেসবুকে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার অভিযোগের মামলার আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন তার পাশে নেই সহকর্মীরা। এটা কি প্রকৃতির শাস্তি? এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা/উপজেলায় রাক্ষুসে সাংবাদিক রয়েছেন। তাদেরকে চিহ্নিত করে সাংবাদিকতা অঙ্গন থেকে ঝেড়ে ফেলা উচিত; নয়তো আপনি ঝুঁকিমুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারবেন না। বিশেষ দ্রষ্টব্য হিসেবে বলে রাখতে চাই; আমি কখনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কলম ধরিনা। তবে ‘রাক্ষুসে সাংবাদিককে ছাড় দেইনা’। আপনার এলাকায় এরুপ রাক্ষুসে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করুন।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর,সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি।