(নদী নিশ্চিহ্ন করার সীমাহীন দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী সংবাদকর্মির দালালকথন)
জ্ঞান বিজ্ঞানে যখন মানুষ পিছিয়ে ছিল, তখন মেঘনা নদী এ দেশবাসীকে বহু ভুগিয়েছে। কত হাজার মানুষ কোনরকম প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াই তাদের জায়গা জমি, ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে মেঘনার করালগ্রাস। ডুবিয়েছে নৌকা, তলিয়ে দিয়েছে লঞ্চ, জাহাজ…কেড়ে নিয়েছে হাজারো মানুষের প্রাণ। আজ আমরা শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে, পূর্ব পুরুষের সেসব ক্ষয়ক্ষতি, জীবননাশের প্রতিশোধ স্পৃহায় ভয়ঙ্কর ভাবে জেগে উঠেছি এখন। এবার উল্টো মেঘনার টুটি চেপে ধরেছি। কোথাও প্রাচীর ঘিরে মেঘনা গ্রুপের মতো দখল করেছি মেঘনা নদীর জায়গা, গড়ে তুলেছি বহুতল ভবন, শিল্প কারখানা কত কী।
ক্ষ্যান্ত হইনি তাতেও, স্থানে স্থানে বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছি তার পানি প্রবাহের রাস্তা। এবার একটু শ্বাস ছেড়ে বাঁচার জন্য কাঁদে মেঘনা কাঁদে। এ কান্নার শব্দ পেলে আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। তখন মতলবে কাজী মিজানের মতো ঠিক মেঘনার বুক বরাবর ড্রেজারগুলো নামিয়ে দেই। উচ্চ ক্ষমতার অনেকগুলো ব্লেডযুক্ত ড্রেজার মেশিন দ্বারা কেটে কেটে মেঘনাকে ক্ষত বিক্ষত করে দেই, তুলে আনি বালু’র চামড়া। সেসব বিক্রি করে ফুলে ফেপে উঠি আর কিনে আনি দামি দামি নদী কাটার যন্ত্রপাতি। মেঘনা তুই মানুষ চিনিস না, আমাদের দেখলে বন বাদারের বড় বড় হিংস্র প্রাণীগুলোও যেখানে পালানোর পথ পায় না, সেখানে তুই কোন্ জানোয়ার?
মেঘনা ভাবে আমি বুঝি তাকে খনন করে কাজী মিজানের মতো, নকীব শামীমদের মতো কেবল বালুই তুলি আর তা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাই? মোটেও তা নয়, আমি মেঘনার বুক চিরে খুঁজে ফিরি আমার পূর্ব পুরুষের হাড়গোর, যাদেরকে মেঘনার পানিতেই বিনা দোষে নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ডুবিয়ে নির্মমভাবে জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেইসব পূর্ব পুরুষের হাড়গোর আমার বড়ই দরকার। অন্তত কবর দিয়ে যেন প্রতি বছর জেয়ারত করতে পারি, একগোছা ফুল দিয়ে সম্মান জানাতে পারি। এজন্য মেঘনার দাউদকান্দি ঘাট থেকে চাঁদপুর হয়ে সাগর মোহনা পর্যন্ত খুঁজতে থাকি, খুঁজতেই থাকি। খুঁজি ডাকাতিয়া নদীর এদিক সেদিক, এমনকি তেতুলিয়া নদীর মাঝেও। কি জানি, হারামি মেঘনা যদি স্রোতের ধাক্কায় লাশগুলো তেতুলিয়া নদীতে লুকিয়ে রেখে থাকে…
আমার খোঁজাখুঁজির কষ্ট যন্ত্রণাময় প্রতিবাদেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকার, পরিবেশবাদী, সচেতন নাগরিক সমাজ নামধারীরা। তারা কেউ আমার পূর্ব পুরুষ হারানোর, ভিটেমাটি সর্বস্ব খোয়ানোর জ্বালা বুঝতে চায় না। এ কারণে আমিও তাদের নিষেধাজ্ঞা, সচেতনতার জ্ঞান মেনে নেয়ার প্রয়োজনবোধ করি না। আমি বুঝি মেঘনাকে নিঃশেষ করে সেখানেই লাগিয়ে দিবো সারি সারি গাছপালা। এতে নতুন পরিবেশ সৃজন হবে আমারই হাতে, ছায়া সুশীতল আশ্রয়স্থল হবে হাজার নয়…লাখো মানুষের। শুধু বাড়িঘর, ফসলি জমি, মানুষ গিলে খাওয়া মেঘনার বিষময় পানির ঠাঁই থাকবে না সেখানে, একফোটা পানিরও না….
(বালুখেকো দুর্বৃত্ত কাজী মিজানের (মতলব, চাঁদপুর) দালাল আমি, ভোলা ও লক্ষীপুরে মেঘনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো নকীব শামীমের বালু বাণিজ্যেরও আমিই যোগানদাতা)