কীভাবে বঙ্গবন্ধু ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে ভালোবাসলেন, সেটা বলা শক্ত। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বাউল অঙ্গের এই গান থেকেই তো ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নে বিভোর হয়েছেন তিনি। এবং একসময় বলেছেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ সত্তরের নির্বাচনে পোস্টার হয়েছিল, ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’
১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রী। সে সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিরা এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে। কার্জন হলে তাঁদের সম্মানে ছিল এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি যেন সেদিন গাওয়া হয়। সে অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সন্জীদা খাতুন। কেউ একজন সন্জীদা খাতুনের কাছে এসে জানালেন এই ইচ্ছার কথা। সন্জীদা খাতুন পাঁচ স্তবকের পুরো গানটিই সেদিন গেয়েছিলেন। তখনো তিনি জানতেন না, এই গানটি খুব ভালোবেসে ফেলেছেন বলেই সবাইকে শোনাতে চাইতেন বঙ্গবন্ধু।
ষাটের দশকে সভায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অন্য অনেক রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি ‘আমার সোনার বাংলা’ বারবার গেয়েছেন জাহেদুর রহিম। সত্তর সালের গোড়ার দিকে বঙ্গবন্ধু জাহেদুর রহিমকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রেকর্ড করার দায়িত্ব দেন। কলিম শরাফী তখন ছিলেন ইএমআই গ্রামোফোন কোম্পানির ঢাকার কর্ণধার। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে প্রায় দুই শ রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড করা হয়। তার মধ্যে ছিল ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি। ছায়ানটের শিল্পীরা গানটিকে সম্মেলক গান হিসেবে রেকর্ড করতে এগিয়ে আসেন।
১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সদ্যনির্বাচিত পরিষদ/সদস্যদের শপথ করান। সভা শেষে যে দুটো গান পরিবেশন করা হয়, তার একটি হলো ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’, অন্যটি ছিল ‘আমার সোনার বাংলা’। এম এ ওয়াজেদ মিয়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘সেদিন রাতে খেতে বসে বঙ্গবন্ধু একপর্যায়ে গম্ভীর হয়ে আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, “দেশটা যদি কোনো দিন স্বাধীন হয়, তাহলে দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে কবিগুরুর ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গ্রহণ করো।”
শেষ পর্যন্ত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেল।