মোঃ ইমাম উদ্দিন সুমনঃঅন্ধকারে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা, অনিয়ম যেন এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। রাত দিনে ২৪ ঘন্টায় ৪ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা গ্রাহকরা।
“শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই স্লোগানকে হাস্যকর হিসেবে দেখছেন গ্রাহকগণ। এসকল অনিয়মের জন্য দায়ীত্ব থাকা ডিজিএম, এজিএম, ইঞ্জিয়ারদের দায়ী করছেন গ্রাহকরা। মাত্রাতিরিক্ত বিল, নতুন লাইন সংযোগে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া, ভুতুড়ে বিল, লোড়শেডিং এসব অনিয়ম দূর্নীতি এখন সুবর্ণচরে স্বর্গরাজ্য।
আদম শুমারীর ২০১১ তথ্য মতে সুবর্ণচরে জনসংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ। হাতিয়ার আংশিক মিলে এই উপজেলায় একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল’ সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ বিদ্যুৎ অতিরিক্ত লোড়শেডিংয়ের কারনে সেবা নিতে আসা রোগিরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে জানাযায়, করোনা রোহিদের জন্য বিদ্যুৎ চালিত ইলেকট্রিক অক্সিজেন নিতে কস্ট হয়। অনেক সময় মৃত্যুর ঝুকিতে পড়ে যান রোগিরা।
সুবর্ণচর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রতিদিন সোস্যাল মিডিয়ায় এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন ফেসবুক এক্টিভিষ্ট। ক্ষোভে ফুঁসছে গ্রাহকরা, বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, অফিসে তালা মারা, জুতা ও পায়খানা মেরে প্রতিবাদ করা, ঝাড়ু মিছিলসহ একাধিক কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিচ্ছে গ্রাহকগন প্রতি মুহুর্তে ফেসবুক জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে । অনেকেই মনে করছেন সরকারের সুনাম নষ্ট করতে একটি কুচক্রী মহল দায়ীত্বে থাকা ব্যক্তিদের যোগসাজশে এসব অনিয়ম করে যাচ্ছে।
সুবর্ণচরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার প্রতিশ্রতি থাকলেও তার নূনতম সেবাও পাচ্ছেনা গ্রহককরা বিশাল জনসংখ্যার এই উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎতের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় সোয়া লক্ষ।
ভুক্তভোগি কামাল বলেন, আমি কম্পিউটার দোকান করি সারাদিনে বিদ্যুৎ না থাকায় আমার রুটি রুজি বন্ধ হওয়ার পথে, মাত্রাতিরিক্ত লোড়শেডিং এর কারনে আমার দুইটি কম্পিটার নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিকবার অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেও কাউকে পাইনি, মাঝে মাঝে ফোন ধরলেও ধমক দিয়ে রেখে দেয়।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আগে আমার বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসতো মাত্র ৪০০ টাকা এখন লোড়শেডিং চলার পরেও প্রতিমাসে বিল আসে ১৪/১৫ শত টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মসজিদের ইমাম জানান, প্রতিটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের সময় বিদ্যুৎ নিয়ে যায়, নিয়ম করেই নামাজের সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না। এখন ভাপসা গরম মুসল্লীদের নামাজ পড়তে কস্ট হয়। তাদের এমন দায়সারা ভাব আমাদের ভাবিয়ে তুলে।
গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমার ঘরে দুইটি শিশু সন্তান আজ ৩ দিন ধরে প্রতি রাতে ১০ থেকে ভোর ৮ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় আমার শিশুবাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমার বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি এখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
কলেজ ছাত্র ফারুক বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের পড়াশুনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন দিলে তারা ফোন ধরেনা দির্ঘদিন ধরে এরকম লোড়শেডিং চলছে, আমরা এর প্রতিকার চাই।
সুবর্ণচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শায়েলা সুলতানা ঝুমা বলেন, অতিরিক্ত লোড়শেডিং এর ফলে আমরা করোনা টিকা নিয়ে বেশি চিন্তিত, বিদ্যুৎ না থাকায় টিকা নিতে আসা মানুষের ফরম স্ক্যান করতে সমস্যা হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগিরা পানি সংকটে ভুগছে এবং গরমে তারা আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে জেনারেল থাকলেও তা বেশী ক্ষন চালানো যায়না। খরচও বেশী। আমরা সুবর্ণচরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই।
চরজব্বার থানার এসআই দিপক বলেন, সুবর্ণচরে বিদ্যুৎ না থাকায় আমরাও অনেক জরুরী কাজ সম্পাদন করতে পারিনা, এখন প্রায় কাজ আমাদের অনলাইনে করতে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে নেট থাকেনা জরুরী কাজ করতে সমস্যা হয়।
এসব বিষয়ে জানতে সুবর্ণচর জোনাল অফিসের ডিজিএম জাহাঙ্গীর মুঠো ফোনে বলেন, চৌমুহনী থেকে সুবর্ণচর এটি বিশাল একটি লাইন, তারে কোন পল্ড হলে খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছি।
জিএম বলেন আমরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি একাধিক অভিযোগ কেন্দ্র করা হয়েছে, মান্নান নগরে মাইজদী গ্রিড নির্মানাধিন, চৌমুহনী থেকে সুবর্ণচরে লাইনটি বড় হবার কারনে একটু সমস্যা হচ্ছে তবে বিগত কয়েকদিন রাতে বিদ্যুৎ ছিলোনা অনেকেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। আশা করছি খুব শিগ্রই এসকল সমস্যার সামাধান হবে।