মিছিলে মিটিংয়ে যতই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি, যতই প্রাণপ্রিয় নেত্রীর জীবন রক্ষার জন্য কান্নাকাটি করি কিন্তু কিছুতেই কিচ্ছু করা যাচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবনটা কোনভাবেই নিরাপদ করা যাচ্ছে না, করা সম্ভবও হচ্ছে না। তিনি যদি গণভবনে নিñিদ্র নিরাপত্তাতেই বসবাস করতেন সেখানে কী বিএনপি মিডিয়া সিন্ডিকেটের নায়কদেরও যথেচ্ছা যাতায়াতের সুযোগ থাকতো?
বিদ্যুত বিভাগের অতিসাধারণ পর্যায়ের ঠিকাদার মোহাম্মদ আলী নামক এক ব্যক্তি অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে যখন তখন গণভবনের তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন এমনকি সেখানে রহস্যজনক কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থানও করছেন। তিনি কার কাছে যাচ্ছেন? যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়া, গণভবনেই দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মঞ্জিলা ফারুকের কাছে।
মোহাম্মদ আলীর বর্ণনা অনুযায়ী দাবি, মঞ্জিলা ফারুকের এক ছেলে জাভেদ ইকবাল টিংকু মাদকাসক্ত হওয়ায় তার মাদকের যোগান দেয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় টাকা পয়সা পর্যন্ত দিয়ে থাকেন মোহাম্মদ আলী। এর বিনিময়ে মোহাম্মদ আলীর ঠিকাদারী কর্মকান্ডে মঞ্জিলা ফারুকের টুকটাক সহায়তা মেলে। সহায়তা মেলে বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যেও। রীতিমত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নাম ভাঙ্গিয়ে চাকরির শতভাগ গ্যারান্টি দিয়েই মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন সেক্টরের নিয়োগ প্রার্থীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে পুলিশ কনস্টেবলের কাঙ্খিত থানায় বদলি করা পর্যন্ত সকল কাজেই গ্যারান্টি সহকারে তদবির বাণিজ্য করে থাকেন মোহাম্মদ আলী। এই তদবির বাণিজ্য অর্থবহ করতে এবং তদবির প্রার্থীদের থেকে টাকা হাতানোর ক্ষেত্রেও মোহাম্মদ আলী ‘গণভবন’কে ব্যবহার করে ধাকেন। অর্থাত চাকরি প্রার্থী কিংবা অন্য কোনো তদবির প্রার্থীদের ভাড়া করা প্রাইভেটকারে তুলে সরাসরি নিয়ে যান গণভবনের তিন নম্বর গেটের সামনে। এরপর মঞ্জিলা ফারুকের টেলিফোন নির্দেশনার ক্ষমতায় নিজে গণভবনে ঢুকে পড়েন আর প্রাইভেটকারে বসা তদবির প্রার্থীদের গেটের বাইরে একটু দূরবর্তী স্থানে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেন। মোহাম্মদ আলী নির্বিঘেœ গণভবনে ঢুকে পড়ছেন এ দৃশ্য দেখেই তদবির প্রার্থীরা বিনা প্রশ্নে সুরসুর করে টাকা গুজে দেয় তার পকেটে, কাধের ব্যাগে।
মোহাম্মদ আলীর এ বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকলীগের নেতা বাড্ডার হীরা। তিনি জানান, আমিই জাভেদ ইকবাল টিংকু ভাইয়ের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সে যে সম্মানী টিংকু ভাইর নামে মাদকসেবনের এমন একটি গুজব ছড়িয়ে তার সম্মানহানি করবে তা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাইনি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কিন্তু যখন তখন অবলীলায় গণভবনে তথা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় ঢুকে পড়া মোহাম্মদ আলীর অবস্থান, মেলামেশা, চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য কোনো কিছুর খোঁজ নেয়ারও প্রয়োজনবোধ করছেন না প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। সেখানে মাদক ব্যবসায়ির ছদ্মাবরণে খোদ গণভবনে ঢুকে পড়া মোহাম্মদ আলী কী শুধুই তদবির কাজে তার দৌরাত্ম্য সীমাবদ্ধ রাখছে? নাকি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি? এ প্রশ্ন উঠেছে ইদানিং ওই মোহাম্মদ আলীর নানা সিন্ডিকেট কর্মকান্ডের কারণেই। তিনি প্রধানমন্ত্রীর গণভবন থেকে বের হয়েই সরাসরি হাজির হচ্ছেন জামায়াত জঙ্গিদের ঘাঁটি খ্যাত মিরপুরের বাইশটেকি এলাকায়। সেখানে অজ্ঞাত লোকজনদের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন মিরপুর পূরবী হলের পূর্ব পাশে আলফালাহ ব্যাংক বুথের সামনে।
পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক নেতা ও বিএনপির ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন্নেছার সাবেক পিএস এস এম জহির, রহস্যময় চরিত্রের ইউসুফ আহমেদ তুহিন ও চরমপন্থী নেতা হিসেবে স্বঘোষিত মনিরুজ্জামান মনি’র নেতৃত্বে গড়ে তোলা বিএনপি মিডিয়া সিন্ডিকেটের কথিত ভ‚য়া সাংবাদিকদের সঙ্গে তার গলায় গলায় পীড়িত। শুধু কী তাই? বাড্ডায় সরকার বিরোধী নাশকতা চালানো মামলার প্রধান আসামি কথিত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার পিন্টুর সঙ্গেও মোহাম্মদ আলীর গোপন পীড়িতি রয়েছে। বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনেও পিন্টুকে সরকার বিরোধী নাশকতার পরিকল্পনাকারী, সংঘটনকারী ও ভয়ঙ্কর ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ পিন্টুর বিরুদ্ধে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সেলিম নিজে বাদী হয়ে নাশকতার মামলা দেন।
গণভবন-বাইশটেকি জামায়াত জঙ্গি ঘাঁটি-মিডিয়া সিন্ডিকেট আর মোহাম্মদ আলী মিলেমিশে কেমন যেন রহস্যময়তার সৃষ্টি করেছে। মাদক সাপ্লাইয়ের অজুহাতে রহস্যময় একটা মানুষ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যখন তখন ঢুকতে পারছে এটা শুনতেই পিলে চমকে যাচ্ছে আমার।
এবার মোহাম্মদ আলীর ব্যাপারে অনুসন্ধানী চোখ মেলতেই বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর সব কাহিনী। অষ্টম শ্রেণী ফেল করেও ইঞ্জিনীয়ার দাবি করা মোহাম্মদ আলীর ব্যাপারে ভুড়ি ভুড়ি তথ্য মিললেও তা নিয়ে সংবাদ রচনার আদৌ কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আমার শঙ্কা ওই এক জায়গাতেই। আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী, জাতির জনক তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ তো?
সূত্রঃ বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের’ সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার ইনভেস্টিগেশন সেল এর ইনচার্জ “সাঈদুর রহমান রিমন” এর ফেসবুক থেকে।