পূর্ণিমা দাস অকালে ঝরে যাওয়া সম্ভাবনাময় এক কিশোরী। বয়স সবে মাত্র পনেরো। প্রাণচঞ্চল প্রাণোচ্ছল উড়ে চলা ডানামেলা পাখির মতই জীবন চলছিল হাসিখুশিময়।
পূর্ণিমা দাসকে ভালোবাসতো পার্থ মণ্ডল। বয়সের তুলনায় পার্থ মণ্ডল ছয় বছরের পার্থক্য পূর্ণিমার সাথে। বিগত তিনটি বছর ধরে তাদের মনের ভাবের আদান-প্রদান চলছিল। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় পাঠালেও মানুষ আবার নিজেদের ভাগ করে নেয় জাত, ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীতে। তরুণ কিশোর বয়স কি আর এসব বাঁধা মানতে চায় কখনো!! গত ছয় মাস ধরে পূর্ণিমা আর পার্থ মণ্ডল এর সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। পূর্নিমা হয়ত নিজেকে সামলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হবার চেষ্টা করে এবং অপরিণত সম্পর্ক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু চাইলে কি আর পূর্ণিমা নিজেকে আড়াল করতে পারে। পার্থ মন্ডলের অব্যাহত প্রচেষ্টা ,অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ, মনবাসনা পুনরায় পূর্ণিমা দাসকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পার্থ মন্ডলের বাঁকা পথে আবার পা বাড়ায় পূর্ণিমা দাস।
পার্থ মণ্ডল পূর্ণিমা দাশের কোনো সীমাবদ্ধতা, জটিলতা, ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা কোন কিছুকেই আমল দিতে চায়না। সে শুধু পেতে চায় ,সন্দেহ বাড়াতে থাকে পূর্ণিমা দাসের প্রতি। নিশ্চয়ই পার্থ মণ্ডল কে ফাঁকি দিয়ে পূর্ণিমা দাস অন্য কোথাও সম্পর্কে জড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এমন সন্দেহ আর আগের মত পূর্ণিমা দাস এর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে না পেরে পার্থ মণ্ডল প্রতিনিয়ত জিঘাংসার আগুনে জ্বলতে থাকে।
অনেক অভিনয় আর আবেগমিশ্রিত মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় বিশ্বাস করে পূর্ণিমা দাস পুনরায় পার্থ মণ্ডল এর সাথে সাক্ষাৎ করতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। সন্ধ্যেবেলায় পড়ার নাম করে পূর্ণিমা দাস সরল বিশ্বাসে পার্থ মণ্ডল এর সাথে সাক্ষাৎ করতে যায়। ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পূর্ণিমা দাস ,এটা তার শবযাত্রা, শেষ যাত্রা।
সন্ধ্যেবেলায় আলো-আঁধারিতে পূর্ণিমা দাস পার্থ মন্ডলের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া মাত্রই হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ণিমা দাসের উপর।
তাকে টেনে হিঁচড়ে জোর করে পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় পার্থ মণ্ডল। প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকা পার্থ মণ্ডল শুরুতেই বিদ্যুতের তার দিয়ে পূর্ণিমা দাস এর গলায় পেঁচিয়ে ধরে।
শক্তি সামর্থ্য পূর্ণিমা দাস না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
হিংস্র হায়েনার মতো নরপিচাশ পার্থ মণ্ডল জ্ঞান হারানো মেয়েটির উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় ক্ষত-বিক্ষত করে তার সারা দেহ। তার বিকৃত যৌন লালসা পূর্ণ করে গলা টিপে হত্যা করে পূর্ণিমা দাসকে।
পূর্ণিমা দাস এর নিকট থাকা মোবাইলটি নিয়ে আসে পার্থ মণ্ডল। অনেকদূর চলে আসার পর আবার কি যেন কি মনে করে লাশের অদূরে মোবাইল ফোনটি রেখে চলে আসে। যে বিদ্যুতের তার পেছনে পূর্ণিমা দাস কে হত্যা করে সেটি ফেলে দেয় জঙ্গলে আর নিজের ব্যবহৃত মোবাইলটি ফেলে দেয় একটি খালে।
বাসায় এসে অতি স্বাভাবিক ভাবে পার্থ মন্ডল তার সমস্ত জামা কাপড় পরিষ্কার করে গোসল করে নিজে পরিচ্ছন্ন হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে জানে না যে অন্যায়, যে অপরাধ সে করেছে যে কালিমা সে নিজের গায়ে লেপন করেছে তা কোনোভাবে ধুয়ে মুছে ফেলার নয়।
পার্থ মণ্ডল পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে সীমান্ত পৌঁছে যায়, সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার আশায়। কিন্তু পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং বুদ্ধিমত্তায় সীমান্ত থেকে আটক করা হয় পার্থ মণ্ডলকে। ভাবলেশহীন ভয়-ভীতি হীন পার্থ একের পরে তার অপকর্মের কথা বর্ণনা করতে থাকে। তার ভিতরে প্রতি হিংসা এবং জিঘাংসার যে আগুন জ্বলছিল পূর্ণিমা দাসকে হত্যা করে তা নেভাতে চেয়েছে। হয়তো সে জানতো না এভাবে কখনো নিজের অপরাধ আড়াল করা যায় না।
পার্থ মণ্ডলদের মিথ্যা আশ্বাসে যারা বিশ্বাস করে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দেয় তাদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হয়।
গত ২৪/০৯/২০২১ তারিখ সন্ধ্যের পর সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা থানার টিকেট গ্রামের স্কুলপড়ুয়া পূর্ণিমা দাস এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উক্ত ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ /থানা পুলিশ অব্যাহত অভিযান পরিচালনা করে ২৫/০৯/২০২১ তারিখ সন্ধ্যা ৭.৩০ ঘটিকার সময় ভারত সীমান্তবর্তী বৈকারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে আসামির দেখানো মতে পূর্ণিমা দাস হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ক্যাবল, বাইসাইকেল উদ্ধার করা হয়। অন্যান্য ডিজিটাল আলামত সমূহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিচারার্থে আসামিকে বিজ্ঞআদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উক্ত আসামিকে গ্রেফতারে জেলা পুলিশের যে সকল সহকর্মী আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
জয়তু বাংলাদেশ পুলিশ।
লেখকঃমোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)
পুলিশ সুপার ,সাতক্ষীরা।