সেলিম শাহারীয়ারঃদীর্ঘ ১৮ মাস স্কুল করোনায় বন্ধ থাকায় বেড়েছে বাল্য বিবাহ্ ছেলে শিশুরা নিয়োজিত হয়েছে শিশুশ্রমে। করোনার কারনে এক দিকে বেড়েছে সংসারে অভাব অন্য দিকে কর্মহীন পিতার বেকারত্ব তাই বিকল্প উপার্জনের জন্য ছেলেকে স্বল্প মুজুরীতে ভারীকাজে নিয়োজিত করেছেন বাবা। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫র্ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তামিম ও কাইয়ূম। স্কুল খোলার পর তাদের কোন খোঁন না পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনারুল ইসলাম ০৫/১০/২০২১ তারিখে সকাল ৮টায় স্কুলের একজন সহকারি শিক্ষককে সাথে নিয়ে নলতা ইউনিয়নের মাঘুরালী গ্রামে তাদের বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন তাদের পিতা-মাতা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর লেখা পড়া না করিয়ে তামিমকে মটর মিস্ত্রী ও কাইয়ূমকে আসবাবপত্র তৈরীর মিস্ত্রী বানাবে। তাদের উপার্জন সংসারের কাজে আসবে। শিক্ষক আনারুল ইসলাম জানান যে তামিমের বাবা সহিদ মিস্ত্রী ও কাইয়ূমের বাবা কাদির সরদার বললেন “যেখানে কাজ কত্তি দিয়েছি তাড়াতাড়ি বড় মিস্ত্রী হবে কইছে ২/৩ মাসের মধ্যি ১০ হাজার টাকা মাসে আয় কত্তি পারবে। এখন তেমন কিছু দেবে না হাত খরচ দেবে।” যে বয়সে তাদের হাতে বই খাতা থাকার কথা সেই বয়সে তাদের সমস্ত শরীর ভারী পরিশ্রমে জীর্ণ শীর্ণ মবিল কালিতে ভরা থাকবে লোহার বড় বড় যন্ত্রাংশ কিভাবে নাড়াচাড়া করবে এ সব চিত্র যেন আমি চোখের সামনে দেখতে লাগলাম।ভাবছিলাম কিভাবে তাদের বললে বুঝবে, বিদ্যালয়ে শিক্ষা জন্য পাঠাবে। আমি তার বাবা-মাকে নিয়ে বসলাম অনেক কথা বললাম মানুষের জন্য শিক্ষার দরকার, তারা কী সারা জীবন অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে এ সব বলে রাজি করালাম। সত্যি বলতে কি সারারাত ঘুমাতে পারিনি তারা কাথা দিয়েছিলো স্কুলে পাঠাবে.. পাঠাবে তো? আজ ০৬/১০/২০২১ যখন তারা স্কুলে আসলো আমি বুকে জড়িয়ে ধরলাম তারা আমার সন্তানের মত। আমি তাদের দারিদ্রতা বুঝি, বলেছি সাধ্যমত চেষ্ঠা করবো তারা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। আমি কমিটির ও এলাকার মানুষের নিকট থেকে সাহায্য নিয়ে দুপুরে খাওয়া জন্য যে ব্যবস্থা চালু রেখেছিলাম সেটা আবার চালু করবো। শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকালে বুঝতে পারি সে সকালে না খেয়ে বিদ্যালয়ে আসছে।”
প্রতিবেদকে এই কথাগুলা যখন বলছিলেন তখন আদর্শ শিক্ষক মোঃ আনারুল ইসলামের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো পানি। এ সমাজে এমন শিক্ষকের খুবই প্রয়োজন প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকরাই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে যদি এমন পদক্ষেপ নেয় তবে করোনায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীরাই আবার শিক্ষার আলোয় ফিরে আসবে।