সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দির ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে আজ বৃস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়৷
উক্ত মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ‘মধ্যযুগের চার্চ থেকে যখন ধর্ম আলাদা হয়ে গেছে, তখন আলোকায়নের যুগ শুরু হয়েছে। ধর্ম যার যার। এটি ব্যক্তির কাছে থাকবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের মিল করা যাবে না। ধর্মীয় উগ্রবাদ যত আসবে, প্রগতির চাকা তত উল্টো দিকে ঘুরবে।’ ‘সাম্প্রদায়িকতার বীজ আমাদের মধ্যেই আছে। এটির নিরাময়ের জন্য বক্তৃতা ও আন্দোলন করে কোনো কিছু হবে না। নিজেদের জীবনযাপনের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা না করতে পারলে সাম্প্রদায়িকতা থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজেদের বাড়িতে, মননে ও পাঠ্যবইয়ে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করতে হবে।’
মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতির জনকের কন্যার যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সেটিকে পিছিয়ে ফেলতেই কিছু দুষ্কৃতকারী মাঝেমধ্যে জেগে উঠে। কেন তারা সুযোগ পায়? সেটি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। শুধু রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করব না। আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হলেই এই অপশক্তিকে দূর করা সম্ভব হবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে মধ্যে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ সময় বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এক ভিন্ন উপসর্গ লক্ষ্য করছি। আমরা বলছি আমরা এগুচ্ছি, কিন্তু না। ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের উন্নত দেশেও ধর্ম, বর্ণ, জাতি, আঞ্চলিকতা এসব বিষয়কে উসকে দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে শুধু স্থানীয়ভাবে যারা জড়িত তাদের হাতই নেই। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা। এই জায়গাগুলোতে যদি আমরা উন্নতি করতে না পারি তাহলে এমন ঘটনা বার বার ঘটতেই থাকবে।’
গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমারা সাহা, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম শান্তুনু প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই দাবিতে আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এ সময় তারাও সবাইকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন ও হামলার বিচার দাবি করেন।