দেশের দক্ষিনাঞ্চলে অন্যান্য সেবার ন্যায় চিকিৎসাসেবাও অনেক কাল ধরে পিছিয়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থার কিছু উত্তরণ ঘটেছে, বিশেষ করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরে। তবে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় সাতক্ষীরা জেলায় যে কয়টি চিকিৎসা কেন্দ্র অনেক দিন ধরে সেবা দিয়ে অবিচল আস্থা অর্জন করেছে নলতা শরীফের আহ্ছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসপাতাল সেসবের মধ্যে অগ্রগণ্য।
১৯৮৬ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দিন ব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে অাহ্ছানিয়া মিশনের চক্ষু চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের যাত্রা শুরু। শুরুতেই জনমনে বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল কার্যক্রমটি। এরপর ১৯৯১ সালে নলতা শরীফে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর পাক রওজা শরীফের দক্ষিন পাশে বি.এন.এস.বি. খুলনার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় আহ্ছানিয়া মিশন চক্ষু ক্লিনিক। সেই থেকে পথচলা…
মিশন প্রতিষ্ঠাতা খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর আদর্শে মানবতার সেবার প্রেরণায় তাঁরই দরবারের শ্রদ্ধেয় জনাব খাদেম সাহেব আনছার উদ্দীন আহমদ ৬ বিঘা জমির ওপর প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট ত্রিতল ভবন বিশিষ্ট একটি সর্বাধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার নামকরণ করা হয়েছে আহ্ছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসপাতাল । এখানে চোখের চিকিৎসার আধুনিক সকল সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, ডেন্টাল, মা ও শিশু চিকিৎসার জন্য আলাদা বিভাগ খোলা হয়েছে। আহ্ছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠাতা হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)-এর ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান আহ্ছানিয়া মিশন চক্ষু ও জেনারেল হাসপাতাল-এর শুভ উদ্বোধন হয়।
হাসপাতালটিতে এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত সকল বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা অপারেশন থিয়েটার, অত্যাধুনিক ল্যাব, ফার্মেসি, নবীন-প্রবীনের সমন্বয়ে একদল দক্ষ চিকিৎসক, নিখুত নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। সপ্তাহের প্রতিদিনই সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকছে হাসপাতালটি।প্রতিদিন শুধু চক্ষু চিকিৎসার জন্যই গড়ে প্রায় তিনশত রোগী ভিড় জমান এখানে। অন্যান্য বিভাগ তো আছেই। ব্যবস্থাপনা ফি’র নামমাত্র টাকা ও মিশন দরদীদের সহায়তায় হাসপাতালটি চলমান।
হাসপাতালে ডিসেম্বর মাসজুড়ে চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার উৎসব। দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এ বছরও চিকিৎসা ক্যাম্পের প্রস্তুতি চলছে। খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর জন্মমাস (ডিসেম্বর) জুড়ে প্রতি সপ্তাহে ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের চিকিৎসা ক্যাম্প চলবে।
মেীলভী আনছারউদ্দীন আহমদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত ও নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন পরিচালিত আহ্ছানিয়া মিশন চক্ষু এন্ড জেনারেল হাসপাতালটি একটি অলাভজনক প্রাতষ্ঠান। দারিদ্রপীড়িত প্রান্তিক পর্যায়ে কোন রকম সরকারি অনুদান বা বৈদেশিক সাহায্যের বাইরে এতবড় চক্ষু হাসপাতাল শুধু দক্ষিনাঞ্চল কেন; সারা দেশেই বিরল।
হাসপাতালটি ইতোমধ্যে দক্ষিন বাংলার “গরীবের হাসপাতাল” নামে পরিচিতি পেয়েছে।
হাসপাতালটির উদ্যোক্তা মৌলভী আনছারউদ্দীন আহমদ জানান “অবিভক্ত বাংলা শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক ও ছুফী সাধক হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র:)-এর ডান চোখে অপথালমিক ইনফেলামেশন হওয়ায়, চোখের যন্ত্রণায় কষ্ট পেতেন। তৎকালীন প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. টি আহম্মদ অস্ত্রোপচার করেলেও সেটি সফল না হওয়ায় একটি পাথরের চোখ প্রতিস্থাপন করা হয়। অবিভক্ত বাংলার শিক্ষা আন্দোলনের পুরোধা খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লার চক্ষু হারানোর সেই বেদনা আমাকে আজও তাড়িত করে। সেখান থেকে ‘অন্ধ জনে দেহ আলো’র এই মন্ত্রটি আমাকে এই কাজটি করতে বাধ্য করেছে। হাসপাতালটির মাধ্যমে মানুষ আলো দিশা পাক- এ আমার কামনা”।
লেখক: মোঃ মনিরুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক
Email: monirulislamprism@gmail.com