ছাগলটির মালিক দরিদ্র চা বিক্রেতা আ. লায়েক ফরাজী মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চুরি যাওয়া ছাগলের মালিক লায়েক ফরাজী নাজিরপুর উপজেলা সদরের আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন একটি ছোট চায়ের দোকানে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য তিনি কয়েকটি ছাগল পালন করছেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে লায়েক ফরাজির একটি ছাগল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়। পরে ওই ছাগলের চামড়া স্থানীয় ঋষি (চামড়া ক্রেতা) বিশ্ব নাথের কাছ থেকে সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে উদ্ধার করা হয়। এ সময় চামড়া ক্রেতা বিশ্ব নাথ জানায় চামড়াটি হাসপাতালের সুইপার বাশার শেখ তাকে দিয়েছে। পরে বাশার শেখ জানায়, চামড়াটি হাসপাতালে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ভুড়িভোজের জন্য জবাই করা ছাগলের চামড়া। তিনি এসময় আরো জানায় হাসপাতালের ডাক্তাররা ছাগলটি গত শুক্রবার রাতে খেয়েছেন।
এদিকে, ছাগলটি শুক্রবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রান্নাঘরে রান্না হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালে রান্নার কাজে থাকা খাদিজা বেগম। আর ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিস কক্ষেই ছাগলের মাংস দিয়ে ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয় বলে জানান ভুড়িভোজে অংশগ্রহনকারীরা।
ভুড়িভোজে অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক শুক্রবার রাতের ভোজের কথা স্বীকার করে জানান, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলে বারী’র দাওয়াতে সেখানে গিয়েছেন। সেখানে খাওয়া মাংসের ছাগল চুরি করা বা ক্রয় করা কিনা তা তাদের জানা নেই। ভোজে অংশ নেয়া এক নারী চিকিৎসক বলেন, ‘ওই রাতে স্যার (ডা. ফজলে বারী) ফোন দিয়ে আমাকে সেখানে নিয়েছেন’।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা প্রত্যক্ষদর্শী মো. সজল হোসেন হাওলাদার বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে আমি আমার স্ত্রীর সন্তান প্রসব উপলক্ষে হাসপাতালের দোতালায় কেবিনের পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম। এসময় ওই হাসপাতালের ঝাড়ুদার মো. আবুল বাশারসহ ৩ জন লোক মিলে একটি ছাগল ধরে নিয়ে হাসপাতালের দোতালায় একটি কেবিনের টয়লেটে আটকে রাখে। পরে তারা ছাগলটি সেখানেই একটি বটি দিয়ে জবাই করে বাজারের শপিং ব্যাগে ভরে নিয়ে যায়।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান জানান, এ বিষয়ে ছাগল মালিক লায়েক ফরাজীর একটি অভিযোগ পেয়েছি।
নাজিরপুর থানার ওসি মো. আশ্রাফুজ্জামান বলেন, ছাগল চুরির একটি অভিযোগ থানায় জমা হয়েছে। তখন আমি থানায় ছিলাম না। অভিযোগকারীকে ঢাকা হয়েছে। তার সাথে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলে বারীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, গত শুক্রবার সকালে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখান থেকে রাতে নাজিরপুরে আসি। রাতে আমার সরকারী বাসভবনেই খাওয়া দাওয়া করি। সেখানে অন্য ডাক্তাররাও ছিল। তবে ছাগল চুরির মতো একটা জগন্য ঘটনার সাথে আমাকে জড়ানো হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। আর চুরি যাওয়া ছাগলের মালিক শনিবার সকালে আমার হাসপাতালে এসে আমায় জানিয়েছিল যে, তার একটা ছাগল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সে তো তখন কোন অভিযোগ করে নি যে, ছাগলটি চুরি করা হয়েছে।
গাজী এনামুল হক (লিটন)
01714040204