মাজহারুল রাসেল : অপরূপ, নয়নাভিরাম দৃষ্টিনন্দন ফুল ও বহুবিধ ভেষজ ঔষধিগুনসম্পন্ন ফল চালতা। চালতা ফুলের বিকাশ ও পরিপূর্ণতা বড়ই বৈচিত্রময়। সোনারগাঁ উপজেলার গ্রাম থেকে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে চালতা ফুল ও পুষ্টি গুনসমৃদ্ধ ফল।
বর্ষা ঋতু আষাঢ় ও শ্রাবণে চালতা ফুল ফুটে। ফুল বেশ বড় হয়, প্রায় পাঁচ ইঞ্চির ব্যাসের। সুগন্ধীযুক্ত এই ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি থাকে। এই পাপড়িগুলোকে আঁকড়ে ধরে রাখে ফুলের বৃতি এবং এই বৃতিই মূলত ফলে রূপান্তরিত হয়। এ ফুল সাদা রঙের। এই ফুলের ব্যাস ১৫ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। ফুলে পাঁচটি মোটা পাপড়ি থাকে। বৃতিগুলো পাপড়িকে ঘিরে রাখে। ফোটার পর ফুলে মৌমাছির আগমন ঘটে। মৌমাছিরা মধু আহরণ করতে গিয়ে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে বসে। এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে এবং ধীরে ধীরে সেটি একটি পরিপূর্ণ ফলে পরিণত হয়।
আমাদের পরিচিত টক স্বাদের চালতা ফল আসে এ ফুল থেকে। চালতা বহুবিধ ঔষধিগুনসম্পন্ন হলেও মূলত এর আচার আমাদের দেশের নারীদের জন্য দুষ্প্রাপ্য, লোভনীয় ও মুখরোচক খাবার হিসাবে ব্যাপক সমাদৃত।
গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত হয়। শাখা-প্রশাখা অবিন্যস্ত ও প্রসারিত। সবুজ পাতা খাঁজকাটা ধরনের। সবুজের মাঝে শুভ্র চালতা ফুল বেশ আকর্ষণীয়। দীর্ঘাকার ঘন পাতার আচ্ছাদন এ ফুলকে আড়াল করে রাখে। এর বৃতির রং সবুজ, মাংসল ও স্থায়ী। মিষ্টি সুগন্ধি এ ফুলের পরাগধানী কাঁচাহলুদ রঙের পরাগকেশর মণ্ডিত। বৃতির সবুজ, দলের শুভ্রতা, পরাগের হলুদ এবং তারকাবৃতির গর্ভমুণ্ড এ ফুলকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্যময়তা। ফুলের সৌন্দর্যময়তাই এই বৃক্ষকে দিয়েছে রূপসী গাছের মর্যাদা।
এ বিষয় সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার বলেন,’ চালতা ফুলের বৃতিগুলো দ্রুত ফলে পরিণত হয়। এর ফুল দু-এক দিনের বেশি স্থায়ী হয় না। প্রভাতে পাপড়ি মেলে আর সন্ধ্যায় ঝরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রঙে পরিবর্তন আসে। নিষিক্ত ফুলই চালতা ফলে পরিণত হয়। ‘
একটি চালতা ফলের গাছে বছরে একবারই ফল ধরে। প্রতিটি চালতা ফল স্বাভাবিকভাবে ২৫০ থেকে প্রায় ৫০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে। চালতা গাছে প্রথমে ফল ধরে।
ফলের আকার যখন ডিমের আকৃতি ধারন করে তখন ওই ফলের মধ্য থেকে অপরূপ, বাহারী, বিরল ধরনের ফুল ফোটে। চালতার ফুল সাধারণত রাতে ফোটে ।
চালতা গাছে ফুল ফোটার পর একদিনের মধ্যেই ফুলের পাপড়ি নিস্তেজ হয়ে ঝড়ে পড়ে। একটি ফলে একদিনের জন্যই পরিপূর্ণ একটি ফুল ফুটে ঝড়ে যায়।
চালতার ফুল ফোটার পর মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছির আনাগোনা ঘটে। মৌমাছিরা চালতার ফুল থেকে মধু আহরণ করতে গিয়ে একফুল থেকে অন্য ফুলে বসে।
এভাবেই চালতার পরাগায়ন ঘটে ফুলটি ফলে পরিণত হয়ে থাকে।অতীতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিষ্ময়কর ও বহুবিধ ঔষধি গুনসম্পন্ন এই চালতা ফুল ও ফল দেখা গেলেও বর্তমানে এই ফুল ও ফল ক্রমেই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
চালতা এবং এর আচার সবার কাছেই বেশ পরিচিত। তবে গুণের দিক থেকে চালতা মোটেই হেলা করার মতো নয়।
চালতা দিয়ে প্রধানত মজার সব আচার করা হয়। চালতা পুষ্টিগুণেও সেরা এবং রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে এর ব্যবহার।
এ বিষয় সোনারগাঁও সরকারি ডিগ্রী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক বলেন,’ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম চালতায় আছে আমিষ ০.৮ গ্রাম, শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলোক্যালরি।’
জানা গেছে, কচি চালতার রস চিনি ও পানিসহ শরবত করে খেলে জ্বরের প্রকোপ কমে এবং কাশির উপশম হয়।চালতার শরবত সুস্বাদু।
চালতার আচার, চাটনি, জেলি খুবই মুখরোচক। বিভিন্ন প্রকার ব্যঞ্জনে বিশেষত চিংড়ি সহযোগে টক রন্ধনের জন্য চালতা বেশ উপযোগী।