সোনারগাঁ প্রতিনিধি : কালের বিবর্তনে আধুনিকতার দাপটে সোনারগাঁ থেকে হারিয়ে যাওয়া “ঢেঁকি ” নতুন ধান বানা, সেই ঢেঁকিতে ছাঁটা নতুন চালে পিঠার গুঁড়ি আবার ঢেঁকিতে চিড়া কোটা আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অংশ জুড়েই আছে। গ্রাম্য নারীদের সেই আনন্দের গান এখন আর শোনা যায়না। ষাট বা সত্তর দশকে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরেই ঢেঁকি ছিল সংসারের একটি অপরিহার্য উপাদান। ঢেঁকি ছিলনা এমন বাড়ী বা এমন সংসার ছিলনা বললেই চলে। কালের বিবর্তনে সোনারগাঁ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। বলা যায় হারিয়ে গেছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি নিয়ে লেখা অনেক গান, ঢেঁকির সাথে গ্রামীণ নারীর মধুর সম্পর্কের চিত্রটাই যেন ফুটে উঠেছিল। এছাড়া ঢেঁকি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রয়েছে নানা গান ও কবিতা। ঢেঁকি ধান ভানা বা ফসল কোটার একটি যন্ত্র। জানা যায়, আগের দিনে সোনারগাঁয়ে ঘরে ঘরে ধান ভানাসহ গম, চিড়া, হলুদ, মরিচ প্রভৃতি শস্য কোটার জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল ঢেঁকি। ঢেঁকি রাখার জন্য ছিল ঢেঁকি ঘর। ভোর রাত থেকেই বাড়ির মেয়েরা শুরু করতো ধান ভানার কাজ। ঢেঁকির ঢাকুর-ঢেকুর শব্দে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙতো। ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভানতো আর মনের সুখে গান গাইতো তারা। ঢেঁকিতে কে কতটা পাড় দিতে পারে- তাদের মধ্যে চলতো সে প্রতিযোগিতা। গ্রামীণ বধূদের আলতা রাঙা পায়ের স্পর্শে ঢেঁকিও যেন নেচে-গেয়ে উঠতো!
প্রতিবছর নবান্ন উৎসবে গ্রামাঞ্চলে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল গুঁড়ো করার উৎসব পড়ে যেতো। চালের সে গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হতো নানা রকমের পিঠা-পায়েশ। তাছাড়া ঢেঁকিতে ছাঁটাই করা চালের ভাত খেতে খুব সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত। এখন ঢেঁকি আর চোখে পড়ে না। আধুনিকতার যান্ত্রিক ছোঁয়ায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে। সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঢেঁকির শব্দ আর নেই। ফলে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জনপদের কাঠের তৈরী ঢেঁকি।