গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য সরকার অবশ্যই চাপে রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের আহ্বানে সম্মত হওয়ায় সরকার নমনীয় বা চাপে কিনা এমন প্রশ্নে এ কথা বলেন ড. কামাল।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাটাই চাপ। তারা (সরকার) জানেন, যে নির্বাচনে মানুষ অংশগ্রহণ করে না, সেই নির্বাচন থেকে কিছু পাওয়া যায় না। এই উপলব্ধি নিশ্চয়ই তাদের হয়েছে। তা না হলে তো আমাদের আলোচনায় ডাকার কোনো দরকার তাদের ছিল না।’
সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজেরা কতটা নমনীয় হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকে কোনো অনুমান করতে চাই না। লক্ষ্য একটাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা উভয়েই সেটাই চাই।’
চিঠিতে ‘সংবিধানসম্মত’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি তাহলে তাদের অবস্থানেই অনড় থাকার বার্তা দিয়ে দিলেন? এমন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই বোঝা যাবে সরকার কতটা করার জন্য প্রস্তুত, কোন কোন ইস্যুতে তাদের দ্বিধা আছে।
তবে কিছুটা তো বুঝতে পারছি তারা সংবিধানের বিষয়গুলোকে তুলতে চাইবেন, কিন্তু এই সংবিধানকে তো তারাই সংশোধন করেছেন, সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যাপারগুলো যোগ করেছেন, বলেন এ সংবিধান প্রণেতা।
এর আগে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাত দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য সংবলিত চিঠিটি হস্তান্তর করা হয়। চিঠিটি গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
চিঠি হস্তান্তর করতে আওয়ামী লীগের অফিসে যান গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওম শফিকুল্লাহ।
পরে সোমবার বিএনপিকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের ডাকে সাড়া দেয় আওয়ামী লীগ।
সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জানিয়ে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সংলাপে বসবে। আর এই সংলাপে আমাদের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরপর রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ফোন করে সংলাপের বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এবং সংলাপের জন্য গণভবনে নৈশভোজের দাওয়াত দেন।
ফোনালাপে মন্টুর কাছে ওবায়দুল কাদের জানতে চান ঐক্যফ্রন্ট থেকে সংলাপে কতজন অংশ নেবেন। জবাবে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়ার কথা জানান মন্টু। কিন্তু কবে, কখন সংলাপ হবে তা নিয়ে কথা হয়নি ফোনালাপে।
পরে মঙ্গলবার সকালে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের কাছে চিঠি পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধিদল।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চিঠিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে ঐক্যফ্রন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।