দেশের স্বাধীন পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হলেন উপাচার্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৩ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩ উপাচার্যের ১০ জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে থেকে আসা। মাত্র ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের।
জানা যায়, ইবি থেকে প্রথমবারের মতো নবম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হক। পরে দশম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম আলাউদ্দিন এবং বারো তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হারুন-উর-রাশিদ আসকারী।
গত ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম উপাচার্য শেখ আব্দুস সালাম পদত্যাগ করেন। বর্তমানে অভিভাবক শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরই মাঝে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন বিএনপি ও জামায়াত পন্থী কয়েকজন শিক্ষক। বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কয়েকজন শিক্ষক দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে ইবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি নিজেদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে সাত জন শিক্ষকের নাম আলোচনায় রয়েছে। তাঁরা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলীনূর রহমান, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মিজানূর রহমান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নজিবুল হক, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান এবং আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী। তাঁরা সবাই বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে।
এদিকে গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন যোগ্য শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার এক দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করা হয়। এসময় বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
ইবিতে দুইশতর অধিক অধ্যাপক কর্মরত। যার মধ্যে অর্ধশতর অধিক প্রথম গ্রেডের অধ্যাপক রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থি ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষক সংগঠন গ্রীন ফোরাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ সুমন শেখ বলেন, ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি সাবেক উপাচার্য বাহির থেকে এসে ছাত্রদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে নিজের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে চলে গিয়েছেন। আমরা আর ভাড়াটে উপাচার্য চাই না। তাই আমাদের প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষকদের থেকে যোগ্য শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত করা হোক।
এ বিষয়ে গ্রীন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ শুধু আমাদের দাবি নয়, এটা আমাদের অধিকার। সৎ ও যোগ্য শিক্ষককে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।