॥ মোঃ আবু তৈয়ব॥ পাহাড়ে কিছুতেই থামছে না আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই ও টার্গেট কিলিং মিশন। আঞ্চলিক সংগঠন তাদের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নেশায় একের পর এক হত্যা, অপহরণ ও গুমের মিশন পরিচালনা করছে। অস্ত্রবাজির এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য চাঁদাবাজী। প্রকাশ্যেই চাঁদাবাজি চালিয়ে অতিষ্ট করে তুলেছে পাহাড়ের ব্যবসায়ী, উন্নয়ন কর্মী ও সরকারি চাকুরেসহ সাধারণ মানুষকে। তাদের চাঁদার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না দীন-দরিদ্র সাধারণ কৃষকরাও। প্রতিনিয়িত খুন অপহরণসহ সীমাহীন চাঁদাবাজীর কবলে চরম উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছে পাহাড়বাসী। গত এক বছরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় অন্ততঃ ১৮ জন নিহত, অস্ত্রসহ আটক ৩২ ও বিপুল পরিমান ভারী মারনাস্ত্রের গুলি, এ কে ২২ রাইফেল, একে-৪৭সহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার উদ্ধার এবং এলাকা আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্তত ৭/৮ বার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে পাহাড়ে। গত বছর ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারী খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় দেশীয় অস্ত্রসহ এক যুবক আটক। ১২ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি রাজস্থলীতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ জে এস এস কর্মী আটক। ১৯ জানুয়ারী বিলাইছড়িতে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৭জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। ফেব্রুয়ারী মাসে ১১ তারিখ লামায় ছাত্রী অপহরণ। ১৬ ফেব্রুয়ারী রাঙ্গামাটি জুরাছড়িতে সেনা অভিযানে অস্ত্রসহ একজন আটক। ১৮ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়িতে অধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে গভীর রাতে গুলিবিনিময়। ২৫ ফেব্রয়ারী প্রকাশ্য দিবালোকে বাঘাইছড়ি রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার সমর বিকাশ চাকমাকে গুলি করে হত্যা। মার্চ মাসে ২ তারিখে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় অস্ত্র, গুলি, ম্যাগজিন, নগদ অর্থসহ ৪ সন্ত্রাসীকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। মার্চ মাসের ২ তারিখে খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় অস্ত্র, গুলি, ম্যাগজিন, নগদ অর্থসহ চার সন্ত্রাসী আটক। ৪ মার্চ রাঙ্গামাটির লংগদুতে নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার। ১৫ মার্চ কাপ্তাই রাইখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ একজন আটক। এপ্রিল মাসে ১ তারিখে রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়িতে সহকর্মীর গুলিতে জে এস এস এমএন লারমা দলের সশস্ত্র কমান্ডার বিশ্ব চাকমা ওরফে যুদ্ধ নিহত। ৪ এপ্রিল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও বাঘাইছড়ি আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি প্রিয়নন্দ চাকমাকে প্রাণনাশের হুমকি। ১০ এপ্রিল রাজস্থলী সীমান্ত সড়কে ১ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার। ২২ এপ্রিল বাঘাইছড়িতে মোটর সাইকেলে আগুন ধরয়ে পুড়িয়ে দিলো সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ২৯ এপ্রিল বান্দরবানে সেনা অভিযানে ভারী মারনাস্ত্রের গুলি, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উদ্ধার।
মে মাসের ৮ তারিখে নানিয়ারচরে চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমার হত্যাকান্ডের আসামী অস্ত্রসহ আটক করেছে যৌথবাহিনী।
জুন মাসের ১৫ তারিখে রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি উপজেলার লুলাংছড়িতে দূর্বৃত্তদের গুলিতে কার্বারী (গ্রাম প্রধান) নিহত। ১৮ জুন কাপ্তাই রাইখালীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ১জন গ্রেফতার। ২০ জুন বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এক যুবককে গুলি করে হত্যা। ২৭ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ইউপিডিএফ’র কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা। ২৮ জুন বান্দনবানের নাইক্ষংছড়ির সীমান্তে অজ্ঞাত পুরুষের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার।
জুলাই মাসের ১০ তারিখে রাঙ্গামাটি রাইখলীতে সন্ত্রাসী দলের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে ১জন নিহত। একই দিনে খাগড়াছড়ির গুইমারাতে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ৪জন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী আটক। ১৮ জুলাই খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খল কুমার ত্রিপুরা নামে এক যুবক নিহত। ১৯ জুলাই বান্দরবানে এক পল্লী চিকিৎসককে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা। ২৫ জুলাই রাঙ্গামাটি মগবান এলাকায় বাসিরাম তংচঙ্গ্যা নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
আগষ্ট মাসের ১ তারিখে রাঙ্গামাটি সেনাবাহিনীর অভিযানে এ কে ২২ রাইফেল, ৭৭ রাউন্ড গুলি, এ্যামুনিশান, ১টি ম্যাগজিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার। ৬ আগষ্ট খাগড়াছড়ির পানছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ইউপিডিএফ মূল দলের গুলি বিনিময় অস্ত্র ও এ্যামেনিশানসহ এক সন্ত্রাসী আটক। একই দিনে রাঙ্গামাটি রাজস্থলীতে জে এস এসের মূল দলের কালেক্টরকে আটক করলো যৌথ বাহিনী। ৮ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফ চীফ টোল কালেক্টর লালন চাকমা অস্ত্রসহ আটক। ৯ আগষ্ট রাজস্থলীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার। ১০ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ মূল দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আটক, চাইনিজ পিস্তল, ম্যাগজিন, ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার। ১৪ আগষ্ট রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়িতে সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপের দুই সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক। একই দিনে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে সেনা অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ ইউপিডিএফ মূল দলের ১জন আটক। ২০ আগষ্ট বান্দরবান বিজিবি অভিযানে ৩টি মর্টাল শেল ও ২টি আর এল গোলা উদ্ধার। ২৩ আগষ্ট রাঙ্গামাটির জুরাছড়িতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় সেনা অভিযানে একে-৪৭সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার। ২৩ আগষ্ট বান্দরবানে রুমায় দূর্গম এলাকার মাটির নিচে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ১২টি মর্টাল শেল উদ্ধার। ২৪ আগষ্ট রাঙ্গামাটি জীবতলী এলাকা সেনা অভিযানে ২টি অত্যাধুনিক আগ্নেযাস্ত্র ও তাজা গুলিসহ ১জন আটক। ২৭ আগষ্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ইছাছড়ি এলাকার পাহাড়ের ঢালুদে যুবকের মরদেহ লাশ উদ্ধার।
সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সেনা ও বিজিবি’র যৌথ অভিযানে জে এস এসের সন্ত্রাসী গ্রুপ সাথে ব্যাপক গুলি বিনিময়। ৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি লংগদুতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কমল ধন চাকমা নামে এক ইউপিডিএফ কর্মী আটক। ১৭ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ির মধ্যম বঙ্গলতলী এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন নিহত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাসায় নিহত হয় সুরেশ চাকমা। ২৪ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামািট সদরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, গুলিসহ জনসংহতি সমিতির কালেক্টর পুনেন্টু চাকমা আটক।
অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখ দুইদিন রাঙ্গামাটিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ ৭জন গ্রেফতার। ১৬ অক্টোবর রাঙ্গামাটি কাপ্তাই চিৎমরমে আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেথোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা। ২৫ অক্টোবর রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলিসহ ১জন আটক।
নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ২নং গাইন্দা ইউনিয়নের তাইতংপাড়ায় নিউরো সার্জন ডা. রেনিন সু তালুকদারকে হত্যা উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি। ২৩ নভেম্বর বান্দরবানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আওয়ামীলীগের নেতা উথোয়ানু মারমা নিহত, স্ত্রী গুলিবিদ্ধ। ২৬ নভেম্বর রাঙ্গামাটি বন্দুক ভাঙ্গায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
ডিসেম্বর মাসের ১৩ তারিখে বান্দরবান সদর উপজেলার ডলুপাড়া থেকে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বান্দরবান জেলা কমিটির সদস্য ও বান্দরবান থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পুশৈথোয়াইর অপহরণের পর হত্যা, মাটি খুড়ে লাশ উদ্ধার। রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে একটি দেশীয় তৈরি এক নলা বন্দুক ও ৪ রাউন্ড কার্তুজসহ ধর্মচরন তনচংগ্যাকে আটক করে যৌথ বাহিনী। ১৪ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় অস্ত্রের মুখে দুই গ্রামবাসীকে অপহরণ। ২০ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১টি ওয়ান শুটার গানসহ একজন সন্ত্রাসীকে আটক। ২৫ ডিসেম্বর বান্দরবা নের রাজবিলার রমতিয়া পাড়া এলাকায় কিরণময় তঞ্চঙ্গ ্যা নামে একজনকে অ স্ত্রের মু খে অপহর ণ। ২৭ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটির কাউখালীতে দেশীয় অস্ত্রসহ ইউনাইটেট ডেমোক্রেটিস ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)’র চাদাঁ কালেক্টরকে আটক। পানছড়ি পাহাড়ী যুবকের তথ্যের ভিত্তিতে হবিগঞ্জের সাতছড়ি থেকে ১৫টি মর্টার শেল, ২৫টি বুস্টার ও ৫১০ রাউন্ড অটো মেশিনগানের গুলিসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার। ২৯ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির ২ কিলো নামক স্থানে আঞ্চলিক দুই গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে নিহত-২ জন, আহত-১, অভিযান চালিয়ে একে ৪৭ রাইফেল উদ্ধার। ৩০ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি দীঘিনালা সেনাবাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সন্ত্রাসীকে আটক।