গাজী এনামুল হক (লিটন) স্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এই সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে একপাড়ে গড়ে উঠেছে স্থানীয়দের বহুমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্য পাড়ে দেশি বিদেশিদের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। এর মাঝেখানে বুক চিরে বয়ে গেছে ব্যস্ততম মোংলা নদী। তবে সকল বান্যিজের ক্ষেত্রে এই নদী বাঁধা মনে করেন ব্যবসায়ীরা। কারণ নদীর ওপর একটি সেতু খুবই জরুরী। দেশ স্বধীনের পর থেকেই স্থানীয়দের এই দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক বানিজ্যসহ সেতুর অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে আশার কথা অবশেষে সেতু হচ্ছে। সেতু নির্মানের লক্ষ্যে মোংলা নদীর ওপর জরিপ চালাচ্ছে একদল সার্ভেয়ার (সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত পরিমাপকারী)। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মাষ্টার প্লানের অংশ হিসেবে এই জরিপ চালানো হচ্ছে। আর এই জরিপের উপর নির্ভর করে মোংলা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের সার্ভেয়ার কো-অর্ডিনেটর মো. হাফিজুর রহমান অন্তর। তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও শতভাগ নিঁখুত তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সবার সাথে কথা বলে পজিটিভ প্রতিবেদন তৈরি করছেন তারা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও বাগেরহাট জেলার একটি ব্যস্ততম ‘মোংলা নদী’। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৪৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার (পাকানো)।
বাগেরহাট জেলার পশ্চিম দিকের অনেকগুলো খাল বিশেষত কুমারখালী নদী, ফয়লা নদীর জলধারা রামপাল উপজেলার কাছে একত্রিত হয়ে মোংলা নাম ধারণ করেছে। আপাতত নদীটি আরো দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে বন্দর নগরী মোংলার পাশে পশুর নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির উজানের তুলনায় ভাটির দিক অধিক প্রশস্থ। এই নদী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রথম শ্রেণির নৌপথ হিসেবে স্বীকৃত। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক মোংলা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর-৭২।
এই নদীর উপর অবশেষে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে। গত ৪ জানুয়ারী থেকে সেতু কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষনসহ নানা রকম তথ্য যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরি করছেন। এদিকে, সেতুটি নির্মিত হলে আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে বলে জানায় পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান, ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দীন ও মশিউর রহমান। তারা বলেন, এপার ওপার মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে। যাতায়াত, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসার ঘটিয়ে এ সেতু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে বলেও জানান তারা।
নদীর ওপারে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত নৌ-বাহিনীর স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র শেখ রফিক বলেন, ‘বর্ষাকালে নৌকায় করে এই নদী পার হতে প্রচন্ড ভয় লাগে। আবার অনেক সময় ঘাটে মাঝি না থাকায় কলেজে যেতে দেরি হয়, ক্লাস মিস হয়। এখানে একটি সেতু হলে আমাদের অনেক উপকার হবে’। আর নদীতে জোয়র না থাকায় একমাত্র ফেরিটি বন্ধ থাকে। যে কারণে পণ্য পরিবহনে বড় বাঁধা হওয়ায় পচনশীল পণ্য গাড়ীতেই পঁচে নষ্ট হয় বলে জানান ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন ও সোহাগ মোল্লা। এতে অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েন তারা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ডিজাইন) মো. লিয়াকত আলী বলেন, মোংলা নদীতে সেতু নির্মাণ করার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষের মাষ্টার প্লানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এখন এর জন্য প্রাথমিক জরিপ চলছে। জরিপের প্রতিবেদন হাতে আসার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবেে ।