আমি “এস আর আকন”একটা দীর্ঘশ্বাস আমার বুকের শূন্যস্থানে পুনরায় শক্তি সঞ্চার করে দিল। চোখ নামিয়ে আমি একাই পথ ধরেছি। আমি হাঁটছি মসজিদের দিকে। রাস্তার ধারে আরও কতশত অপরিচিত মুখ। তারা সবাই তাদের নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আমি দেখলাম, একটি সভ্যতা, একটি সমাজ— যেখানে গরীব আর ধনীদের বিস্তর ব্যবধান। আমি এগিয়ে যাচ্ছি এই মনগড়া সমাজকে উপেক্ষা করে। একটা সময় আমি মসজিদে গিয়ে পৌঁছালাম।
অযু সেরে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। সালাত শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি সালাতে দাঁড়ানোর পর নিজেকে ভিন্ন এক ‘আমি’তে খুঁজে পেলাম । ইমাম সাহেব যখন বলা শুরু করলেন—
‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আর রাহমানির রাহিম…।
আমার সব একাকিত্ব, ক্লান্তি, কষ্ট যেন নিমিষেই ফুরিয়ে গেল। আমি যখন সিজদাহতে ঝুঁকে গিয়ে আমার রবের পবিত্রতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিলাম আমি অনুভব করলাম— আমার ভেতরটা যে অপার শূন্যতায় ঠাঁসা ছিল, সেটা যেন পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে । যখন শেষ বৈঠকে আমি শাহাদাত আঙুল উঁচু করে আমার মহান রবের একাত্মবাদের সাক্ষী দিলাম স্বীকার করে নিলাম বিনা দ্বিধায় যে, তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং ঠিক তার পরেই যখন আমি আমার সমস্ত অহমিকা, গড়িমা ভুলে বিনা সংকোচে নিজের করা সকল অপরাধগুলো মাথা পেতে নিলাম, আর বল্লাম— ‘ইয়া রব, আমি আমার নিজ আত্মার ওপর বড়ই অত্যাচার করেছি, জুলুম করেছি। গুনাহ মাফকারী একমাত্র আপনি। অতএব, আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন । নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ।’ এরপর আমি অনুভব করলাম, আমার রব আমাকে পরম মমতায় গ্রহণ করে নিয়েছেন।
সালাত শেষ হবার পর আমি হিসেব করে দেখলাম, এই এতটা দূর পথ আসতে গিয়ে আমি যাদেরকে হারালাম, যা কিছু হারালাম,তার থেকে অনেক অনেকগুণ বেশি কিছু পেলাম। আমি অর্জন করলাম এক মহান পবিত্র সত্তার অনুগ্রহ, তার ভালোবাসা, তার অভিভাবকত্ব যে, এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে শূন্যতাই যেন সবকিছু। আমি “অাকন” আবিষ্কার করলাম, ‘শূন্যতাই পৃথিবীর সব চাইতে বড় উপহার। কেননা আমি এই শূন্যতা অনুভব না করলে আমার রবের অস্তিত্ব কীভাবে উপলব্ধি করতাম?
এবার ফেরার পালা। আমি উঠে দাঁড়ালাম।মসজিদের জানালা দিয়ে বাইরে দেখলাম একটি ভিন্ন জগৎ। যেখানে হাজারো কোলাহল, ব্যস্ততা, ভেদাভেদ। কিন্তু এতক্ষণ আমি যেখানে ছিলাম, যাদের সাথে কাতারবন্দি হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সালাত আদায় করলাম, তাদের মধ্যেও ছিল ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, কৃষক, চাকর, সুইপার, ড্রাইভার, বাদামওয়ালা কিংবা রিকশাওয়ালা। অথচ এখানে তাদের মধ্যে কারোর থেকে কারোর মর্যাদা কম কিংবা বেশি ছিল না। এখানে ফাস্ট ক্লাস কিংবা সেকেন্ড ক্লাসের কোনো অপশন নেই। এখানে স্যুট-কোটের কদর গায়ে ধুলা কাদাাখা কৃষকের, গায়ে ঘাম মাখা রিক্সাওয়ালা থেকে বেশি নয়। এখানে সবাই সমান। এখানে সবাই প্রজা আর তাদের রাজা, তাদের সুলতান একমাত্র মহামহিম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
আমি একবার জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম- আর একবার ভেতরে। যেন দুটি ভিন্ন পৃথিবীর সংযোগস্থলে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
কিছুটা সময় আমি সেখানে থাকার পরে আমার মনে হলো, সবাই মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। ভেতরের নির্মল বাতাসে যে পবিত্রতার স্নিগ্ধ সুষমায় আমি ডুবে ছিলাম, তা ক্রমশ হাল্কা হচ্ছে। আমি যাত্রা শুরু করলাম সেই চেনা রাস্তা, রোড লাইট, নিয়ন আলোর ক্যানভাসে আঁকা নিরেট কংক্রিটের প্রাচীর ঘেঁষে। আমি প্রবেশ করলাম সেই প্রাচীরে। আবারও মিশে গেলাম এই শহরে ব্যস্ততায়। কিন্তুুএখন আর আমার খারাপ লাগছে না। কোনো যুগলবন্দী প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা গিটার হাতে গানে বিভোর সেই বন্ধুদের দল আমাকে আর ভাবাচ্ছে না। কারণ আমি আমার বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেয়েছি। ইতোমধ্যেই জ্ঞাত হয়েছি শূন্যতার আসল মানে কী। আমি জেনে গিয়েছি, আমি মোটেই একা নই।’”মহান অাল্লাহর অসীম কৃপা/রহমত অামার একাকিত্ব অসাহায়াত্ব একদম দুর করে দিয়েছেন।
যে জীবন নিয়ে আমরা দিনরাত অভিযোগ করি, পৃথিবীর অনেকেই আছে এরকম একটি জীবনের স্বপ্ন দেখে। কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও তারা এরকম জীবনের স্বাদ চেখে দেখতে চায়। আমাদের কাছে যেটা তুচ্ছ, গুরুত্বহীণ, তাদের জন্য সেটাই পরম আরাধ্য। তারপরেও কি আমরা বলতে পারি, ‘আমি ভালো আছি?’ হ্যাঁ পারি, কিন্তুু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসে না। বলার জন্য বলি।
আল্লাহ্ আমাদের কতটা ভালো রেখেছেন। নেয়ামতের কত বারিধারা আমাদের ওপর বর্ষণ করছেন,তা উপলব্ধি করতে হবে। পাশাপাশি কীভাবে এসব নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি তা অামাদের জানতে হবে।
লেখাটা এখানেই শেষ করবো। অামি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে,, অার ভাবছি লেখাটা যদি ফেসবুকে পোষ্ট করার পাশা পাশি একটা বইয়ের কাগজের কয়েকটি পাতায় কালি ফেলানো যেত কতই না ভালো হতো,,অনুভুতিটা দু চোখে সবসময় জলজল করতো।যখন একথা ভাবছি , এরই মোধ্যে অামার দুটি চোখ ঘুমে ঝিমিয়ে অাসছে, রাত গভীর, চারিদিকে নিরবতা,যেন মহান অাল্লাহ তায়ালা অামার অাবার তার কাছে তওবা করে নতি স্বীকার করে মনভরে তার একত্ববাদের ঘোষনা দিয়ে পরম মমতায় স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করে একটু বিছানায় গা মিলিয়ে দিতে অদৃশ্য নির্দেশ অাসছে । হাতে চেষ্টা করে আর লেখা পাচ্ছে না। এই এত বড় একটা লেখা পড়তে গিয়ে কি অাপনার একবারও বোরিং লাগবে?? নাকি উলটো কেমন যেন অারো লেখা বেশী হলে জানার অাগ্রোহ অারো বেশী লাগতো। যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। মনের মোধ্যে পরম বিশুদ্ধ অনুভূতি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আগামির দিন যেন হয় সত্য ও ন্যায়ের পথে।।
লেখকঃ মোঃ সিদ্দিকুর রহমান আকন।