বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
কালিগঞ্জে আছিয়া লুতফর প্রিপারেটরি স্কুলে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত সলেমান মামুন ব্যারিস্টার সুমন দুই দিনের রিমান্ডে ডিএমপির ৩৮তম পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা আলেমরাই এক দিন এদেশে নেতৃত্ব দেবেন।।ধর্ম উপদেষ্টা কে এই নতুন ডিএমপি কমিশনার? দৌলতপুরে বসতবাড়িতে ডাকাতির সময় মা-ছেলেকে হত্যার দায়ে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ আজ সার্চ কমিটির বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কথা জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় জরুরি। – পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পাবনায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রিফিলের সময় বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের চালক নিহত, আহত একজন

বিশ্বের আলোচিত নারী গোয়েন্দাদের গল্প

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৩.২৫ পিএম
  • ৫৮১ বার পঠিত

প্রতিটি দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও বিভিন্ন দেশের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দাদের গুরুত্ব অপরিসিম। স্থান কাল ভেদে গোয়েন্দাদের নির্দেশিত কর্মকর্তা ছাড়া সকলের কাছে গোপনীয়তা রক্ষা করে চলা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে নারী গোয়েন্দাদের সফলতা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ সফলতা হিসাবে তারা সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে সুচারুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। নারী গোয়েন্দারা গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন ছদ্মবেশ নিতে দক্ষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা আসল পরিচয় লুকাতে অন্য একটি কাজ জোগাড় করে তথ্য হাসিলের পথে হাঁটে। এসব ব্যাপারে তাদের বিশেষ অনুশীলনী রয়েছে। নারী গোয়েন্দাদের পাতা ফাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা থেকে শুরু করে বিয়ে করার মতো ঘটনাও ইতিহাসে রয়েছে। বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান নারী গোয়েন্দাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, একজন গোয়েন্দা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দক্ষ ও সফল, যে ছলনায় সেরা। বুদ্ধিমতী গোয়েন্দাদের সফলতার হার রয়েছে বেশি। সেই সকল আলোচিত নারী গোয়েন্দাদের নিয়ে আজকের পথচলা।

মাটা হ্যারি
মাটা হ্যারির নাম নারী গোয়েন্দাদের তালিকা করলে প্রথমেই ওঠে আসে। তিনি গোয়েন্দার আড়ালে নৃত্য শিল্পী এবং বাইজি হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। ১৮৭৬ সালের ৭ আগষ্ট নেদারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সরিয়ে ফেলা বা সেই তথ্য পাচার করা কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না মাটা হ্যারি। গোয়েন্দা পরিচয় লুকাতে তিনি এক বৃদ্ধ লোককে বিয়ে করে ইন্দোনেশিয়া চলে আসেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় এসে নাচ-গানে পারদর্শিতায় সকলের কাছে সেলিব্রেটি হয়ে উঠেন। কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তিনি নারী গোয়েন্দা। প্যারিসে, ইউরোপে ছুটে চলেন বিভিন্ন সময়। বহু বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় তাকে ঘিরে অসংখ্য স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে। তবে এত কিছুর আড়ালে তার গোয়েন্দাগিরির কথা কখনোই কেউ বুঝতে পারেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেই সময় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। জার্মানদের হয়ে ইউরোপ ঘুরে ঘুরে অসংখ্য গোপন যুদ্ধতথ্য সংগ্রহ করে পাচার করতে থাকেন এই দুর্ধষ্য নারী গোয়েন্দা। যদিও একসময় দাবি করেন, তিনি আসলে ফ্রান্সের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করেছেন, তবে সেটা প্রমাণিত নয়। পরবর্তীতে জার্মান ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৫ অক্টোবর ১৯১৭ তাকে হত্যা করে।

নূর ইনায়াত খান
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার জন্য গোয়েন্দাদের আসল নাম লুকানো থাকে প্রায় সবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপন কোড নাম ব্যবহার হয়ে থাকে। এমনই একজন নারী গোয়েন্দা নূর ইনায়াত খান। যাকে ‘স্পাই প্রিন্সেস’ বা রানী গোয়েন্দা হিসাবে অবিহিত করা হয়। তার ব্যবহারিত নাম ছিল মেডিলিন। ১৯১৪ সালের ২ জানুয়ারি রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভারতের সুফি মাস্টার ও সঙ্গীত শিল্পী ইনায়াত খান এবং মা আমেরিকার ওরা রায় বাকের। নুর ইনায়াত খান বিট্রিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করতো। জার্মান বিভক্ত হয়ে গেলে ফ্রান্সে বসবাস করতেন। নুর ইনায়াত খান ওমেনস অক্সিলারি এয়ারফোর্স এ যোগদান করেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ওয়ারলেস অপারেটর হিসাবে ফ্রান্সে পাঠান ১৯৪৩ সালের জুনে। সেখান থেকে রেডিও তরঙ্গ এর মাধ্যমে কোর্ড ভিত্তিক তথ্য প্রেরণ করতেন। গোয়েন্দা হিসেবে তাকে ঘুণাক্ষরেও কেউ সন্দেহ করেনি। তার গুপ্তচরবৃত্তির খবর নাজিদের হাতে পৌঁছে যাওয়ার পর তিনি গোয়েন্দা কার্যক্রম থামিয়ে দেন। অক্টোবরে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা তাকে গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করেন। দীর্ঘ ১মাস ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য বাহির না করে তিনি সুচতুরভাবে ফাঁকি দেন সবাইকে এবং একটা সময় তিনি সকল গোপন তথ্য নিজের কাছে জমা করতে শুরু করেন। তার কাছে অসংখ্য গোপনীয় যুদ্ধ তথ্য থাকায় ৩০ বছর বয়সেই তাকে গ্রেফতার করে দশ মাস ধরে কারাবন্দী রাখা হয়। ১৯৪৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৩ জন নারী এজেন্ট এর সাথে তাকেও হত্যা করা হয়।

ন্যান্সি ওয়েক
নারী গোয়েন্দাদের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে ভয়ঙ্কর গুপ্তচরের ক্ষেত্রে। ন্যান্সি ওয়েক এমনই একজন খ্যাতি সম্পন্ন গোয়েন্দা যিনি ১৯১২ সালের ৩০ আগস্ট নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। নাজি বাহিনীকে বিভ্রান্ত করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ন্যান্সি ওয়েকের নামটি চলে আসে শুরুতেই। তার ব্যবহারিত নাম হেলেনা। এ ভয়ঙ্কর নারী গোয়েন্দা মূলত ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা নিয়ে। এক সময় সাংবাদিকতাকে বিদায় জানান এক ফরাসি শিল্পপতিকে বিয়ের পর। ভিয়েনায় হিটলারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ১৯৩৩ সালে এই নারী গোয়েন্দা। এই প্রতিবেদনটি করার পর নারী গোয়েন্দা হিসেবে নাজি বাহিনীর কাছে সহজে পৌঁছার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। সেই সুযোগ বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান তিনি। বিয়ের পর তিনি ফ্রান্স রেজিস্টেন্সের গেরিলা বাহিনী মাকিসে যোগদান করেন। গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হঠাৎ ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। অবাক করা ব্যাপার হলো সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে লন্ডন যান এবং ব্রিটেনের স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভে (এসওই)-তে যোগ দেন। আবারও গোয়েন্দার কাজে মন দেন এই ভয়ঙ্কর গোয়েন্দা। জার্মানরা তাকে ‘হোয়াইট মাউস’ বলে ডাকত। ১৯৪২ সালের পর গেস্টাপো বাহিনীর মোস্টওয়ান্টেড তালিকায় শীর্ষে ছিলেন ন্যান্সি ওয়েক। তাকে হত্যার জন্য উঠেপড়ে লাগে পুরো এলিটফোর্স এমনকি তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫০ লাখ ফ্রাঙ্ক। ন্যান্সির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৪৪ সালের এপ্রিল থেকে ফ্রান্সের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত ফ্রান্স রেজিস্টেন্সের সাত হাজার গেরিলা সেনা নিয়ে ২২ হাজার জার্মান সেনার মোকাবিলা করেন। এতে ১৪০০ জার্মান সেনা নিহত হয়। অপরদিকে রেজিস্টেন্সের গেরিলা সেনা মারা যায় ১০০ জন। ন্যান্সির হদিস না বলার জন্য তার স্বামীকে খুন করে গেস্টাপো। পরে ব্রিটিশ বিমান মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি নেন ন্যান্সি। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট ৯৮ বছর বয়সে মারা যান দুঃসাহসী এ গোয়েন্দা।

ক্রিস্টিনা স্কারবেক
ক্রিস্টিনা স্কারবেক ১৯০৮ সালে ১ মে, পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতায় ১৯২০ সালে নিজ স্টেট ছেড়ে ওয়ারশে চলে যান। পরবর্তীতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবার উপর রাগ করে এক রাখাল বালকের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এক সময় ব্রিটিশ স্পেশাল অপারেশনের হয়ে যুদ্ধ মাঠে সক্রিয় ছিলেন বিখ্যাত নারী গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা স্কারবেক। বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডের আক্রান্ত হওয়ার পর এই নারী গোয়েন্দা যুদ্ধ তথ্য চুরির কাজ শুরু করেন। তার বিশেষত্ব ছিল কোন পথে সেনাসদস্যরা কখন পার হবে সে সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য চুরি করে পাঠানো। তার দেওয়া তথ্য ধরেই হামলা পরিচালনা করা হতো। ক্রিস্টিনা স্কারবেকের তথ্য ছিল নির্ভুল। চুরি করে তিনি নিজেই ছুটে যেতেন তথ্য পৌঁছে দিতে। তথ্য নিয়ে পালানোর সময় তিনি শত্রুপক্ষের নজরে পড়ে যান। সে সময় তিনি পাহাড়ে লুকিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নাজিদের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। কারাগারে নির্মম অত্যাচার চালানো হতো তার ওপর। কিন্তু সাহসী ও বুদ্ধিমান গোয়েন্দা ক্রিস্টিনা ঠিকই বোকা বানান নাজিদের এবং কারাগার থেকে পালিয়ে আসেন। যদিও কেউ কেউ বলেছিলেন, তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তবে সেসব তথ্যবহুল নয়। ১৯৫২ সালে একটি ক্রুজশিপে ভ্রমণের সময় তাকে হত্যা করা হয়।

জোসেফাইন ব্যাকার
নৃত্যশিল্পী ও গায়িকা হিসেবে সুখ্যাত জোসেফাইন ব্যাকার ১৯০৬ সালের ৩ জুন আমেরিকায় জন্ম গ্রহণ করেন। অনেকেরই জানা ছিল না জোসেফাইন ব্যাকার একজন দুর্ধর্ষ নারী গোয়েন্দা ছিলেন। ফ্রান্সের যুদ্ধ দল কৌশলে তার নৃত্যশিল্পী ও গায়িকার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে নারী গোয়েন্দা হিসেবে ব্যবহার করে। একজন সেলিব্রেটি বলে তার ওপর কোনো সন্দেহ পড়েনি নাজিদের। তাকে সহজেই নাজি বাহিনী দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ঘুরতে অনুমতি দিত। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ তুলে নেন জোসেফাইন। তার অপরূপ সৌন্দর্য অনেক উচ্চপদস্থ যুদ্ধ সেনাকেও বোকা বানিয়েছিল। তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক স্থাপনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে আড়ালে গোপন তথ্য চুরি করত সে। সেন্ট লুইসের রূপবতী এই নৃত্যশিল্পী প্রায়শই নাচ-গানে মাতিয়ে কৌতুকের আড়ালে আসল খবর বের করে নিতেন। কিন্তু বেশিদিন তিনি গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে যেতে পারেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হওয়ার পর তার ওপর সন্দেহ পড়ায় তিনি সরে আসেন। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১২ এপ্রিল ফ্রান্সে মৃত্যু বরণ করেন।

ভার্জিনিয়া হল
ভার্জিনিয়া হল ১৯০৬ সালের ৬ এপ্রিল বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি, ইতালিয়ান ও জার্মানি শাস্ত্রে পড়ালেখা করেছেন। তার ইচ্ছা ছিল গবেষণার পাঠটি ইউরাপে করতে। বাবার সাহায্যে কন্টিনেন্ট ভ্রমণ এবং ফ্রান্স, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠ শেষে পোল্যান্ডে আমেরিকান দূতাবাসে কেরানি হিসাবে যোগদান করেন ১৯৩১ সালে। দুর্ভাগ্যবসত ১৯৩২ সালে তুরস্ক শিকারের একটি গলি তার বাম পায়ে লাগে। যার ফলে তার বাম পা কেটে কাঠের কৃত্রিম পা সংযোগন করা হয়। যার ফলে এই চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি ওশিংটনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ¯œাাতক স্কুলে পড়ালেখা করেন। ১৯৪১ সালে একটি সংবাদ সংস্থায় যোগ দেন।
ভার্জিনিয়া হল ১৯৪৪ সালে ইউএস এর (ওএসএস) স্পেশাল ব্রাঞ্চে যোগ দেন। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে গোয়েন্দাগিরিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন গুপ্তচর ভার্জিনিয়া তার অসাধারণ গোয়েন্দাবৃত্তিতে বোকা বানিয়েছিলেন জার্মান বাহিনীকে। কাঠের তৈরি নকল পা নিয়েই তিনি যুদ্ধের ময়দানের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে পাচার করে দিতেন মার্কিন বাহিনীর কাছে। তাকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ ছিল না জার্মানদের। তাকে লিম্পিং লেডি বা খোঁড়া নারী বলে ডাকত। ১৯৪৪ সালে এসওইর গুপ্তচর হিসেবে তাকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়। সেখানে ফরাসি সেনাদের যুদ্ধ ও গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ দিতেন ভার্জিনিয়া। ফ্রান্সের জার্মান সেনাদের মধ্যে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির কাজেও তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তথ্য পাচার ও ভুল তথ্য দিয়ে শত্রুপক্ষের মধ্যে কলহ সৃষ্টির সফলতা তাকে অনন্য করেছে। ১৯৮২ সালের ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোরে ৭৬ বছর বয়সে মারা যান সর্বকালের সেরা ছদ্মবেশী এ নারী গোয়েন্দা।

সিসিলি পার্ল
যুদ্ধজয়ী নারী গোয়েন্দা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ফরাসি নারী সিসিলি পার্লের নাম লেখা রয়েছে আপন বৈশিষ্ট্যে। তার কোড নাম ছিল পলিন। সিসিলি পার্ল ফরাসি গোয়েন্দাগিরিতে সেরা সাফল্যের একটি। নারী গোয়েন্দা হিসেবে তার সফলতা অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে সারাবিশ্বে। পার্ল ১৯৪৩ সালের ৮ জুন যোগ দেন এসওই-তে। সেখান থেকেই গোয়েন্দা হিসেবে তার অফিসিয়াল কাজ শুরু হয়। জার্মানদের আক্রমণে ফ্রান্স দুই ভাগ হওয়ার বেদনাবিধুর স্মৃতি তাকে নারী গোয়েন্দার মতো জীবনে ঝুঁকি থাকার মতো কঠিন কাজটি বেছে নিতে বাধ্য করে। ১৯৪৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এসওইর গোয়েন্দা হিসেবে ফ্রান্সে ফিরে আসেন। বিশ্বযুদ্ধে অবস্থার দ্রুত উত্থান-পতন ঘটছে। এমন সংকটময় সময়ে গোয়েন্দা হিসেবে তার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। কিন্তু সাহসী সিসিলি পার্ল তার দায়িত্ব পালন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ পাচার করে দেওয়াই শুধু নয়, একজন টিম লিডার হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মিত্রবাহিনীর দেড় সহস্রাধিক সেনাকে। সিসিলির গোয়েন্দাবৃত্তি আর প্রশিক্ষণের কথা কানে যায় জার্মান বাহিনীর। তার মাথার জন্য ১০ লাখ ফ্রাঙ্ক পুরস্কার ঘোষণা করে জার্মানি। একজন নারী গোয়েন্দা হিসেবে এতটা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পেরেছে এমন নজির নেই বললেই চলে। একবার সুযোগ পেয়ে সিসিলি ও তার অধীনস্থ সেনাদের ওপর আক্রমণ চালায় দুই হাজার নাজি সেনা। এ ধরনের হামলা মোকাবিলার জন্য তৈরি ছিল না সিসিলি বাহিনীর। কিন্তু গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়ায় সিসিলি ও তার বাহিনী। এ নারী গোয়েন্দার বুদ্ধিমত্তার জোরে হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল সেবার। সেই যুদ্ধ ১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হন ৮৬ জার্মান সেনা। বিপরীতে মিত্রবাহিনীর ২৪ জন প্রাণ হারান। অন্তত আটশ বার জার্মান সেনাদের ব্যবহার করে উত্তর ও দক্ষিণ ফ্রান্সের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার কমান্ডেই নিহত হন হাজারখানেক নাজি সেনা। পরবর্তীতে তার কাছেই আত্মসমর্পণ করেন ১৮ হাজার জার্মান সেনা। একজন নারী গোয়েন্দা হয়ে তার যুদ্ধ পরিচালনার এই অভূতপূর্ব সাফল্য সবাইকে হতবাক করে দেয়।

আন্দি বোরেলেন
আন্দি বোরেলেন ১৯১৯ সালের ১৮ নভেম্বর এভেলাইনস, ফ্রান্সে এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বয়স যখন ১৪, তিনি স্কুল ছেড়ে একটি বেকারির দোকানে কাজ করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯ বছর বয়সে নার্সের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে যুদ্ধ শিবিরে আহত সৈনিকদের সেবা করা শুরু করেন। ১৯৪০ সালে যখন দেশ পরাজয়ের কাছাকাছি তখন যারা দেশের হয়ে কাজ করতে আগ্রহী তারা ও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। সেখানেই আন্দি বোরেলেন এর যাত্রা শুরু। নারী গোয়েন্দাদের ইতিহাসে সেরা হামলাকারী হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে আন্দ্রি বোরেলেনের। তাকে দেখে সবাই বিভ্রান্ত হতেন। শারীরিক সৌন্দর্যের কারণে কেউ হঠাৎ করে বিশ্বাসই করতে চাইতেন না এই নারীই বড় বড় হামলা পরিচালনা করছেন। আন্দ্রি বোরেলেন যুদ্ধকালীন গোয়েন্দার কাজটি নেওয়ার আগে থেকেই পেশায় গোয়েন্দা ছিলেন। তবে এর আগে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কাজ করলেও যুদ্ধ হামলা করেননি। তার জন্ম ফ্রান্সে। বোরেলেন ১৯৪২ সালে যোগ দেন ব্রিটেনের স্পেশাল অপারেশনস এক্সিউটিভে। এখানে যোগ দেওয়ার পরই রূপ বদলায় তার। ১৯৪৩ সালের মার্চ থেকে জার্মানির একটি পাওয়ার স্টেশন এবং আরও কিছু স্থাপনায় সফল আক্রমণ চালান। তবে হামলার দায়ে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার হলে অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার পর নাজি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে তার শরীরে প্রাণঘাতী ইনজেকশন পুশ করা হয়। তবে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরে ১৯৪৪ সালের ৬ জুলাই ২৪ বছর বয়সী আন্দি বোরেলেন কে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়।

ভিয়োলেট রিন
ভিয়োলেট রিন ২৬ জুন, ১৯২১ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন ব্রিটিশ ট্যাক্সি চালক এবং মা ছিলেন ফ্রেঞ্চ। ভিয়োলেট তার বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। এগারো বছর বয়সে তার পরিবার প্যারিস থেকে লন্ডনে চলে যায়। সেখানে তিনি ব্রিক্সটন সেকেন্ডারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। চৌদ্দ বছর বয়সে ভিয়োলেট বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং ব্রিক্সটনে একটি হেয়ার ড্রেসার সেন্টারে সহকারী হিসেবে এবং পরবর্তীতে অক্সফোর্ডের স্ট্রিট শাখায় একটি ডিপার্টমেন্টের বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৪০ সালে লন্ডনে তার সাথে হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভুত ফ্রাঞ্চ সেনাবাহিনীর অফিসার অ্যাতানি জাবোর সাথে সাক্ষাত হয়। অ্যাতানির সাথে ৪২ দিন পরিণয়ের পর ১৯৪০ সালের ২১ আগস্ট তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরের বছরই অ্যাতানিকে উত্তর আফ্রিকা পাঠানো হয় “এল অ্যালাম্যাইনের” যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য। জাবো যুদ্ধে থাকা কালীন জন্ম নেয় একমাত্র কন্যাসন্তান তানিয়া। কিন্তু তার পারিবারিক সুখের দিনগুলোতে হঠাৎ ছেদ পড়ে। সন্তান জন্মের কয়েক দিন পরই ১৯৪২ সালে জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাঁধে চোট পেয়ে মারা যান অ্যাতানি। তার স্বামীর মৃত্যুই তাকে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রেরনা যুগিয়েছিল। ১৯৪১ সালে তিনি আগে থেকেই অক্সিলারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন এবং এরপর তিনি “বিশেষ অপারেশন এক্সিকিউটিভে” যোগ দেন ভায়োলেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের টার্গেটকৃত নানা অন্তর্ঘাতমূলক অপারেশনের সফল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই গোয়েন্দা। ১৯৪৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনে ফিরে আসার সময় জার্মান সেনাদের হাতে নিহত হন ভায়োলেট।

 

হাসানূর রহমান সুমন
সিনিয়র সহকারী সম্পাদক
সাপ্তাহিক হিতবানী

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
      1
23242526272829
30      
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com