মোঃ শামীম আহমেদঃ
গত ৯ বছর ধরে শিকক্ষ থাকেন ভারতে অথচ মাস শেষে তার স্বজনরা অগ্রিম সই করে রাখা চেক বইয়ের চেক দিয়ে বেতন তুলে নেন দেশ থেকে। কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে মাসিক রিপোর্টও জমা নিয়মিত। অর্থের বিনিময়ে হাতিয়া শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে গত ৯ বছর যাবৎ এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা ও বাড়তি নানান সুবিধা নিচ্ছেন।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদার। স্কুলটিতে বর্তমানে ৪ জন সহকারী শিক্ষক রয়েছে এবং ছাত্র সংখ্যা ১৫০। এত বড় অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠায় গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
রিঙ্কু মজুমদার উপজেলার উত্তর চরঈশ্বর(দাসপাড়া এলাকার সাবেক সহকারী শিক্ষক বারেন্দ্র দাসের স্ত্রী। রিংকু স্বামী-সন্তান নিয়ে গত ৯ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এবং ছাত্র-গার্ডিয়ান চয়ন দাস, শোভা রানী, মল্লিকা দাস, নিশান বাবু, পাপন দাস ও অসীম দাস সহ অনেকে জানান, গত ৮/৯ বছর পর্যন্ত হেডমাস্টার রিঙ্কু ম্যাডাম ভারতে থাকেন। কয়েক মাসের বেতন ব্যাংকে জমা হলে বেতন তোলার সময় তিনি দেশে আসেন। মাঝে মধ্যে তার আত্মীয়রা চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়। তার এ অনিয়মের ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। কারন ওই সময়ের শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবু রিঙ্কু ম্যাডামের বোনজামাই। উনার ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদার দীর্ঘ বছর ধরে এই দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছে। শিক্ষকতার নামে এমন নীতিহীন কর্মকান্ডকে তারা ভারতে টাকা পাচারের শামিল বলেও উল্লেখ করেন।
তারা আরও বলেন, রিঙ্কু ম্যাডাম সম্ভবত আর চাকরি করবেন না, তবে এতোবছর ধরে সে যে অন্যায়-অনিয়ম করেছে এর কোন শাস্তি হয়নি এবং তার বোনজামাই শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবুরও কোন বিচার হয়নি।
এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলার সাবেক শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবু বলেন, আমি অনিয়ম করার এতো সুযোগ দেইনি।
এদিকে চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা রূপ কুমার দাস জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ১ মাসের মেডিক্যাল ছুটিতে যান প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদার। কিন্তু আজ পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গ থেকে দেশে আসেননি। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় পরিচালনা, স্লীপের টাকা,উপবৃত্তি, কন্টিজেন্সি প্রভৃতি কাজ আটকে আছে। তিনি আরো জানান, ৮-৯ বছর ধরে এমন অনিয়ম চলছে। করোনার আগের বছরগুলোতেও তিনি ১ মাস, ২ মাস অথবা ৩ মাস ভারতে থেকে ৩/৪ দিন স্কুল করে জমে থাকা কাগজপত্রে সই দিয়ে আবার ভারত চলে যেতেন।
স্কুল সভাপতি রণলাল দাস বলেন, প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদারের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাই নি।
এহেন অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে ওই ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান বলেন, প্রধান শিক্ষক রিঙ্কু মজুমদার গত ডিসেম্বরে এক মাসের মেডিক্যাল নিয়ে আর বিদ্যালয়ে না ফেরায় আমি রিপোর্ট দিয়েছি। বর্তমানে তার বেতন বন্ধ রয়েছে। এর আগের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোসলেহ উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি এবং অফিসে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।
নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম’কে রিঙ্কু মজুমদারের এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, এমন ঘটনা আরোও আগে জানলে ভাল হতো। উপজেলা শিক্ষা অফিস কেনো এই অনিয়মকে ধামাচাপা দিয়ে রাখছে তা আমি খতিয়ে দেখব।