এক যে ছিলো কন্যে
সে ফিনিক্স পাখির মতো
মাতৃহারা, পিতৃহারা, ভ্রাতৃহারা হায়
স্বজনহারা কন্যের ছিলো দেশ-কল্যাণ-ব্রত।
তার চোখ শুকিয়ে কাঠ
সেথায় দেশপ্রেমের পাঠ।
এক যে ছিলো কন্যে
আমরা তাহার জন্যে
যা পেয়েছি তার-
ফর্দ বানায়- এমন সাধ্য কার।
দানের তালিকা দীর্ঘ তাহার
উপচে পড়ে ভান্ড
কোথায় রাখি ভাবি সদাই
কে কবে ভেবেছিলো এমন যজ্ঞের মতো কান্ড।
কন্যে একদিন ভাবলো
পদ্মায় হবে সেতু
দক্ষিণ-বঙ্গ রবে না দূরে
দীর্ঘ নদীর হেতু।
‘বিশাল নদী, প্রমত্তা সে
কেমনে তারে বাঁধবে
এত টাকাও কোথায় পাবে
কে-ই বা অর্থ সাধবে?’
(–বলে চললো নিন্দুকে
এসব কথা তোলা থাকুক সিন্দুকে)
এগিয়ে এলো বিশ্বব্যাংক
গড়িয়ে এলো টাকা
উড়ে এলো বিশেষজ্ঞ জাপান থেকে ঢাকা
তাদের আবার বিভীষণের গল্প ছিল না জানা
ষড়যন্ত্রে পিছিয়ে গেল
হদ্দ বধির, কানা।
‘ফেল করেছে, ফেল করেছে’
বললো আবার নিন্দুকে
(মুর্খ ওরা, কুপমন্ডুক
ওদের কথায় মরচে পড়ুক সিন্দূকে)।
কন্যে এবার জেদি
পদ্মা তাহার নদী
যে করেই হোক সেতু হবে, দূরকে আনবে কাছে
যে যাওয়ার সে যাবে, ঝাঁপিয়ে পড়ো
নিজের যা কিছু আছে।
ভ্রূ কুঁচকালো, ব্যঙ্গ করলো
ঠোঁট বেঁকিয়ে, নিন্দুকে
‘নিজের টাকায় পদ্মা সেতু? অসম্ভব সে–‘
(এসব কথা তালা মেরে সিন্দুকে-)
একটা করে স্প্যান বসে, একটা করে পিলার
কন্যের স্বপ্ন এগিয়ে যায়
নয় কোন কল্পকাহিনী, থ্রিলার।
এমনি করে নিজের টাকা
এবং কন্যের ভালোবাসায়
পদ্মার বুকে আবেগ বোনে
স্বপ্ন এবং আশার।
নির্মাণ শেষ পদ্মা সেতুর
দুই পাশে তার মোহন আলোর সারি
মা গো, ওই আলোর রোশনাই মেখে
সবাই নাকি যাচ্ছে গ্রামের বাড়ি।
মা গো, খুলনা না কি মাত্র তিন ঘন্টা
সবাই খুশিতে ভাসছি
মা গো, তুমি কোন আকাশে থাকো
কেমনে বলি, ফোন রাখো মা, আসছি।
কন্যে, ওগো কন্যে,
পাত্র মোদের উছলে পড়ে
তোমার দানের জন্যে
মাকেও যদি পেতাম
প্রথম দিনেই যে করে হোক সেতু পাড়ি দিতাম।
লেখকঃ ড. সাবিনা ইয়াসমিন (উপসচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়)