সৈয়দ খায়রুল আলমঃ
নড়াইলে ছাত্রলীগের জেলা সন্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সমাগম। ১৩৬ বছর আগে চিত্রার পাড়ে নির্মিত হয় নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ। কলেজ চত্বরে বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের নামকরণে নির্মাণ করা হয় সুলতান মঞ্চ। দীর্ঘ আট বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সুলতান মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নড়াইল জেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,এর আগে ২০১৪ সালে নড়াইল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ছাত্রলীগের জেলা সম্মেলন। বাকি ৭ বছর ঢাকা থেকেই কমিটি ঘোষণা করা হতো। ৮ বছর পর জেলা সম্মেলন হওয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। গত এক মাস ধরে চলছে নানা জল্পনা কল্পনাসহ আয়োজন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন,নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস বোস,জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো.নিজাম উদ্দীন খান নিলু,নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি,নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তজা।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ারর মিম। সঞ্চালনা করেন,জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রকিবুজ্জামান পলাশ।
প্রধান বক্তা ছিলেন,বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য। বিশেষ বক্তা ছিলেন সংসগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম, সাজ্জাদ হোসেন,প্রচার সম্পাদক শফিকুল আলম রেজা প্রমুখ।
পদ্মাসেতুর আদলে নির্মাণ করা হয় সম্মেলনস্থল। চারপাশে ছাত্রলীগের দলীয় পতাকা দিয়ে
সজ্জিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড ৪টি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কেন্দ্র ন্থাপন করে। এছাড়া একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। শহরের বিভিন্ন মোড়ে নির্মাণ করা হয় একাধিক তোড়ণ। বুধবার (২০ জুলাই) থেকে সম্মেলনস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকালেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে শুরু করে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সম্মেলনস্থলে আসার আগেই বিশাল প্যান্ডেল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আগত অতিথিরা জাতিয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে আসনে উপবিষ্ঠ হলে ছাত্রলীগের সদস্যরা মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিচার শুরুর পর থেকে ফেসবুকে উস্কানি মুলক পোষ্ট দিয়ে, সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা সেই রামুর ঘটনা থেকে দেখি, রামু, নাছির নগর, সকল ঘটনার সাথে একটি যোগসুত্র খুজে পাওয়া যায়, মনে হয় এ ঘটনাগুলো পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অত্যান্ত দুঃখজনক, আমরা এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই,আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের আশ্বস্থ করেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনা শুনার পরই, দ্রæত ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা চাই এঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা। আমাদের একটাই লক্ষ্য এই অপরাধিদের এমন শাস্তির ব্যাবস্থা করা যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এই ধরনের ঘটনা না ঘটায়, একই সাথে বলতে চাই যদি কেই ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এনে কোন পোস্ট দেয়, দেশে আইন আছে, তাকে আইনের হাতে তুলে দেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে তিনি আরো বলে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নদ্রষ্টা। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নবাস্তবায়নে দেশের এপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে চলেছেন। উন্নয়নের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একটি কুচক্রী মহল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ করছে। দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন,সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে দেশকে আবারো অস্থিতিশীল করতে চায়। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার্থে তিনি দলমত নির্বিশেষে সকল দেশ প্রেমি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান। এর আগে তিনি লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সঙ্গে দেখা করে তাদের খোজ খবর নেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এবং লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা উঠে আসে। নেতৃবৃন্দ বলেন,আমরা সাম্প্রদায়িক দেশ কামনা করিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান বলে জানা যায়।