শেখর মজুমদার, স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
স্বরূপকাঠিতে দরিদ্রদের জন্য বিতরণ করা হাঁস, মুরগী ও ভেড়া পালনের ঘর (সেড) নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সীমাহীন দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্ধারিত কাঠের পরিমাপে কম দেয়াসহ পয়েন্ট ২৬ এম এম টিনের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে ২২-২৪ এম এম টিন। তুষার এন্টারপ্রাইজ এর পক্ষে শুভ নামের একজন সাব কন্ট্রাক্টর পূর্নাঙ্গ ঘর তৈরী না করে ঘরের খুচরা মালামাল বিতরণ করছেন উপকার ভোগীদের মাঝে। এ ক্ষেত্রে উপকারভোগীকে পকেটের টাকা খরচ করে কাঠ মিস্ত্রি দিয়ে প্রাপ্ত ঘর নির্মান করে নিতে হচ্ছে।
জানাগেছে সরকার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলার ৪৫০০ দরিদ্র পরিবারের মাঝে হাঁস,মুরগী ও ভেড়া বিতরণ করছে। এরমধ্যে ২০টি করে হাঁস দেয়া হচ্ছে ২২৫০ পরিবারকে এবং ১৩৫০টি পরিবারকে দেয়া হচ্ছে মুরগী। এছাড়াও ৯০০ পরিবারকে দেয়া হচ্ছে ৩টি করে ভেড়া। এসব হাঁস,মুরগীর জন্য ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ফুট প্রস্ত্ম এবং উচ্চতা ৪ফুট ঘর(সেড)। সিপ সেড বা ভেড়ার ছাউনির জন্য দৈর্ঘ্য,প্রস্ত্ম ৫-৪ এবং উচ্চতা ৬ ফুটের ঘর বিতরণ করা হচ্ছে। দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে ১৮শ’ ঘর নির্মান ও বিতরণ করছে। তুষার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী পরিচয় এক হাজার ঘর নির্মানের কাজ করছে সোহাগদল গ্রামের জনৈক সেলিম মিয়া এবং নাহিদ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ বাস্ত্মবায়ন করছে শুভ নামের জনৈক ব্যক্তি। হাঁস এবং মুরগীর সেট নির্মানে খুঁটির জন্য ২ ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে দেড় ইঞ্চি করে। ঘরের বেড়ার তক্তা (কাঠ) পৌনে এক ইঞ্চি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে আধা ইঞ্চির কম। একইভাবে ভেড়া পালনের ঘর নির্মানে ৩-৩ ইঞ্চি খুঁটির পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে সোয়া দুই ইঞ্চি মাপের কাঠের খুঁটি। ঘরের বেড়ার ছাউনির কাঠ দেয়া হচ্ছে আধা ইঞ্চির পাতলা সাইজের। প্রতিটি ঘরে নিচের পাটাতনের ছাউনির কাঠ দেয়া হয়েছে নির্ধারিত সাইজের কম করে। ঘরের ছাউনির টিন পয়েন্ট ২৬ এমএম দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে পয়েন্ট ২২-২৪ এম এম পাতলা টিন। পাঁচ ফুট সাইজের ঘরের ছাউনির টিন দেয়া হয়েছে ঘরের সমান মাপে। সে কারনে কাঠের বেড়ার ওপর পানি পড়ে সহজেই বেড়া নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানান উপকারভোগীরা। স্বরূপকাঠির অলংকারকাঠি গ্রামে আবাসনের বাসিন্দা আঃ করিম ও চম্পা বেগম বলেন,তাদের আবাসনের ২৭ পরিবারকে হাঁস,মুরগী পালনের জন্য আস্ত্ম টিনসহ ঘরের খুচরা মালামাল দেয়া হয়েছে। এখন নিজেরা মিস্ত্রিী দিয়ে ঘর নির্মান করার চেষ্টা করছেন। নিম্নমানের ঘর নির্মান এবং খুচরা মালামাল সরবরাহের বিষয় সাব কন্ট্রাক্টর শুভ বলেন,তিনি প্রানিসম্পদ দপ্তরের অনেক কাজ করছেন। যদি তার কাজ খারাপ হতো তাহলে ডিপার্টমেন্ট সেগুলো বাতিল করে দিত। তিনি বলেন বর্তমানে নেত্রকোনাসহ উত্তর বঙ্গের কাজ নিয়ে ব্যস্ত্ম আছি এলাকায় ফিরে আপনার সাথে কথা বলব। অপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী দাবীদার সেলিম বলেন,কাঠ চেড়াই করতে গেলে সাইজ একটু কমে যায় এবং মালামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় টুকটাক সমস্যা হতে পারে। এ দুই নির্মানকারী মুল ঠিকাদারের নাম্বার দিতে চায়নি।
পশু প্রাণি পালনের ঘর নির্মানে অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তাপষ কুমার ঘোষ বলেন,তার অফিসে কর্মচারী সংকট থাকায় নিয়মিত ঘর নির্মান তদারকি করতে পারছেন না। সে সুযোগে ঠিকাদার ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নিচ্ছে। প্রতিটি ঘরের জন্য সরকারের কত টাকা ব্যয় হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে এ পর্যন্ত্ম সহস্রাধিক ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জিয়াউল হক রাহাত এর সাথে কথা বলতে তার ০১৭১৯১৫২৮৫১ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।