মো. জাবের হোসেন : তালা উপজেলার আম গাছ গুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি।
সরেজমিনে দেখা যায়,প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আম গাছ গুলোতে মুকুল দেখা দিতে শুরু করেছে। এখন সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে মুকুলগুলো। এ বছর গাছে মুকুলের পরিমাণ বেশি। আমচাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্মকর্তারা এবারও তালা উপজেলায় আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
তাদের বক্তব্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সময় মতো পরিচর্যা হলে চলতি মৌসুমে আমের ফলন গত সকল মৌসুম থেকে ছাড়িয়ে যাবে ।তাই আশায় বুক বেঁধে আম চাষিরা আগাম শুরু করেছেন পরিচর্যা। তাদের আশা, চলতি মৌসুমে তারা আম থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তালা উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে হিম সাগর,ন্যাংড়া, গেবিন্দভোগ, মল্লিকা, সিদুর রাঙ্গা, ফজলি, কাঁচা মিঠা, বোম্বায়, লতা আম বেশি চাষ করা হয়।
নগরঘাটা গ্রামের এক আম চাষি জানান , এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য কিছুটা অনুকূলে রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে প্রকৃতি যদি অনুকুলে থাকে তাহলে আমরা এবারও লক্ষমাত্রা অতিক্রম করবো ।
অপর এক আম চাষি জানান, আমের জন্য এখন আর অফ ইয়ার বা অন ইয়ার নেই। বছর জুড়ে গাছের পরিচর্যা করার কারণে এখন প্রতি বছরই আমের ভালো ফলন পাওয়া যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তারা পুরো গাছ সাইপারম্যাক্সিন ও কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে গাছ ধুয়ে দিয়েছেন। এতে গাছে বাস করা হপার বা শোষক জাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যদি সঠিক সময়ে হপার বা শোষক পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের ফলন কমে যেতো বলে জানান এই আমচাষি।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা জানান, ধান-চাল বা অন্য ফসলের মতো আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কৃষি অধিদফতরের কাছে থাকে । বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার জন্য। কারণ সাতক্ষীরা জেলার সকল উপজেলার আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও বেড়েছে চাহিদা।
তালা উপজেলায় ২০১৬ সালে আম চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে । তারপর হতে উপজেলায় আম চাষের কদর বাড়তে থাকে, এবার আমরা আশা করছি প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দেখাতে পারবো । এর মধ্যে আমরা যে যে বাগানে আমের মুকুলের ভালো ফলন দেখতে পাবো সেই বাগানের মালিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি ।
এদিকে, গাছে গাছে মুকুলের সমারোহে আম বাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে। আমের মুকুল বেশি হওয়ায় এবার বেশি দামে বাগান বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সাতক্ষীরার বাগান গুলো কিনতে (এক মৌসুমের জন্য) শুরু করেছেন। সাতক্ষীরার আমের চাহিদা বিদেশে বেড়ে যাওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার ব্যবসায়ীরা বেশি আসছেন।