সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:০৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
সরকারি বিধি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় জনবল নিয়োগ নগর পরিকল্পনায় নারী পরিকল্পনাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে ” –মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে র‍্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দিলেন পুলিশ সুপার মতিউর রহমান অভিবাসন সংক্রান্ত অপতথ্য রোধে বাংলাদেশ-ইতালি একসঙ্গে কাজ করবে -তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বাউফলের নওমালায় ডাকাতি ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন নায়েব আলী কৃষকবান্ধব একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে- গণপূর্তমন্ত্রী। কাপ্তাই লেকের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবেঃ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী রাজৈরে ট্রাক-ইজিবাইকের সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ যাত্রীর কেএমপিতে কনস্টেবল ও নায়েকদের “দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স” প্রশিক্ষণ ১৬ তম ব্যাচের শুভ উদ্বোধন

শুখা ভালোবাসার উপাখ্যান, বাকরখানি

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১০.০১ এএম
  • ৭৭ বার পঠিত

 

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না, বেচো না বন্ধু, তোমার চোখের মণি

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না, বেচো না বন্ধু, তোমার চোখের মণি

কলা বেচো, কয়লা বেচো, বেচো মটরদানা
কলা বেচো, কয়লা বেচো, বেচো মটরদানা
বুকের জ্বালা বুকেই জ্বলুক, কান্না বেচো না

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি

ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে,
হাজার টাকায় সোনা
ঝিঙে বেচো পাঁচ সিকেতে,
হাজার টাকায় সোনা
বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেচো না

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি

ঘরদোর বেচো ইচ্ছে হলে, করবো নাকো মানা
ঘরদোর বেচো ইচ্ছে হলে, করবো নাকো মানা
হাতের কলম জনম দুখী, তাকে বেচো না

আলু বেচো, ছোলা বেচো, বেচো বাখরখানি
বেচো না বেচো না বন্ধু তোমার চোখের মণি

🍪🍪🍪🍪 🍪🍪🍪🍪

সমীর রায়ের কথা আর প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের এই গানটিই জানান দেয় আমাদের ঐতিহ্যের কত গভীরে মিশে আছে দূরদেশী এক খাবার বাখরখানি।
সকালবেলা নাস্তায় চা-য়ে চুবিয়ে বাখরখানি না খেলে মনেই হয় না নাস্তা করেছি…

১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে সুবাহ বাঙ্গালার নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর তুর্কিস্তান [১] থেকে ক্রীতদাস হয়ে এ আসা সুদর্শন বালক মির্জা আগা বাকের খাঁ’কে কিনে নেন। আগা বাকেরের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ নবাব তাকে লেখাপড়া ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী করে তোলেন। প্রথমে তাকে চট্টগ্রামের ফৌজদারের দায়িত্ব ও পরে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের জায়গিরদারী প্রদান করেন। ফৌজদার থাকাকালে বাকের খাঁর সাথে আরামবাগের নাচনেওয়ালী খানি বেগমের প্রেম জমে উঠে। কিন্ত তাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ায় উজির জাঁহান্দার খাঁর পুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান। সে খানি বেগমকে প্রেম নিবেদন করলে, খানি বেগম তা প্রত্যাখান করে। প্রত্যাখ্যাত জয়নাল খাঁ ক্ষিপ্ত হয়ে খানি বেগমের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তাতে বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে তলোয়ার যুদ্ধ হয়। তলোয়ারবাজিতে জয়নাল পরাজিত হয়ে আত্মগোপন করে। কিন্তু জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে মিথ্যা সংবাদ দেয় যে, আগা বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। উজির জাঁহান্দার খাঁ নবাবের কাছে ছেলে হত্যার বিচার চাইলে আগা বাকের গুম কেসে ফেঁসে যায়। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ আগা বাকেরকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। তাকে ক্ষুধার্ত বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হয় কিন্তু দক্ষযোদ্ধা বাকেরের হাতে বাঘটি মারা যায়। ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে যায়। তখন সে খানি বেগমকে জোরপূর্বক অপহরন করে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে নিয়ে যায়। সে সময় মুক্ত হয়ে খানি বেগমকে উদ্ধার করতে চন্দ্রদ্বীপ যান আগা বাকের। কিন্তু উদ্ধারের চেষ্টাকালে জয়নাল খানি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে, সেখানেই সমাধিস্থ করা হয় তাকে। এরপর মির্জা বাকের সেই অঞ্চলেরই জায়গিরদার হিসাবে থেকে যান। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ (পটুয়াখালী- বরিশাল) অঞ্চলের নামকরন করা হয় বাকেরগঞ্জ ( অপভ্রংশ বাখেরগঞ্জ)। জায়গিরদার থাকা কালে উভয়ের নাম জুড়ে দিয়ে তার পছন্দের খাবারের প্রচলন করেন, যার নাম বাকের-খানি।

তবে এ বিষয়ে আরও একটা জনশ্রুতি আছে। মির্জা আগা বাকের বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের জায়গিরদার থাকাকালে তার প্রেয়সী ছিলো আরামবাগের নর্তকী খানি বেগম। তাদের গভীর প্রেম পরিণয়ে রুপ নেয় নি। কারন মির্জা আগা বাকের রাজত্ব সহ রাজকন্যা লাভ করেন। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খাঁর কন্যার সাথে তার বিয়ে হয় এবং বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের জায়গিরদারি লাভ করায় তাদের প্রেম পূর্ণতা পায় নি। কিন্তু খানি বেগমের স্মৃতি তিনি ভুলে যাননি তাই তার আবিস্কৃত এবং প্রিয় খাদ্য বিশেষভাবে তৈরি রুটির নাম রাখেন তাদের প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করে, “বাকের-খানি”। পরবর্তীতে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে।
🍪🍪🍪🍪 🍪🍪🍪🍪
সে সময় জাহাঙ্গীরনগর (ঢাকা) এবং চন্দ্রদ্বীপ (বাকেরগঞ্জ) ছিলো সুবাহ বাঙ্গালার বানিজ্য কেন্দ্রবিন্দু। বনিকদের মাধ্যমে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও জনপ্রিয়তা লাভ করে বাকরখানি। অঞ্চল ভেদে গাও-জবান, শুকি, শুখা, নিমশুকি, চিনশুকি, কাইচা রোটি, কাশ্মীরি ভিন্ন ভিন্ন নামে। তবে একই ধরনের খাবারের জনপ্রিয়তা আফগানিস্থান, তুর্কিস্তান (তুর্কমেনিস্তান, কাজাখিস্তান, উজবেকস্তান, কিরঘিস্তান) পাকিস্থানেও রয়েছে। তবে উৎপত্তিস্থল হিসাব স্যার যদুনাথ সরকার, উতসা রায় সহ প্রমুখ ইতিহাসবিদের লেখায় ঘুরে ফিরে ঢাকা আর অসম্পূর্ণ প্রেমের কথাই বারবার উঠে এসেছে…

***ক্লাশরুমের দেয়াল আর পার্কে গাছের ছাল কেটে লিখা নামের মতোই আজীবন বাঙ্গালীর হৃদয়জুড়ে পাশাপাশি থাকুক মির্জা আগা বাকের খাঁ আর খানি বেগমের নাম। চায়ের প্রেমে মজে ভিজে যাক বাকরখানি, ওদের প্রেম পূর্ণতা না পেলেও স্বাদের পূর্নতা পাক সকল বাকরখানি ভক্ত। এই প্রত্যাশায়, হাসান হাফিজুর রহমান।

লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক হাসান হাফিজুর রহমান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com