সরকারি সিদ্ধান্তে ১৯৯০ সালে গাজীপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায় স্হানান্তরের পর আমরা সেখানে যেতে বাধ্য হই। আমি ইবি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম। তখন কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিন ছিল। রাজনৈতিক প্রয়োজনে স্হানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আমি সুসম্পর্ক গড়ে তুলি । ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের আওয়ামী পরিবারের সকলের সাথেই আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি রশিদ মাস্টার (গুপ্ত ঘাতকদের হাতে নিহত),ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের সাথে আমার অসাধারণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এই মুহুর্তে সবার নাম মনে করতে পারছি না। তবে আজগর,নুরুল,লতিফ (সম্প্রতি মারা গেছেন),নারায়ণ দা,লিয়াকত,বাবুল (প্রয়াত),সাইদার,টগরদের সাথে আমার একটি আত্বার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমার আপদ বিপদে তারা সবসময় ছায়ার মত আমাকে আগলে রেখেছেন। রশিদ মাস্টার আমাকে সন্তানতুল্য মনে করতেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আমার ডিপার্টমেন্টের পুনর্মিলনীতে স্বপরিবারে গিয়েছিলাম। সারাদিন হইহুল্লোরেই কেটেছে। রাতে মনে হলো ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ছোট ছোট রেস্টুরেন্টে খেতাম সে রকম একটি রেস্টুরেন্টে ওদের নিয়ে যাব। ইবি প্রফেসর আশরাফ হরিনারায়ণপুরে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। প্রায় ত্রিশ বছর পর হরিনারায়ণপুরে গেলাম। চেনার কোন উপায় নেই।হরিনারায়ণপুর এখন পুরো শহরে রূপ নিয়েছে । ছোট্র ছিমছাম একটি রেস্টুরেন্ট। সেখানে দেখা হলো ইবির সাবেক ছাত্র ও ইবি থানার ওসি বিপ্লবের সাথে। আমার কথা শুনে ছুটে এলেন স্হানীয় ইউপির তরুণ চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সম্রাট। সম্রাটের বাবা গোলাম মোস্তফা আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান ছিলেন। ছুটে এলেন ইবির প্রাক্তন ছাত্র কলেজ শিক্ষক সত্য বক্ত,আমাদের দুঃসময়ের সঙ্গী নারায়ণ দা সহ আরো অনেকে। চেয়ারম্যান সম্রাট জানালো তিনি নাকি একজন শিক্ষকের কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্য আমার কাছে গিয়েছিলেন আমি কাজটা করে দিয়েছিলাম। এ জন্য তিনি বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন।
আমি অবাক হলাম কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করেই হরিনারায়ণ পুরে আসার পরও এত রাতে (রাত ১০টা) গ্রামের একটি বাজারে এভাবেই আমার সাথে দেখা করতে সবাই চলে আসছেন। আমার স্ত্রী,সন্তানরাও অবাক হলেন। চোখের সামবে তখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অনেক স্মৃতি ভেসে উঠছিল। তখন হাতে গোনা কিছুলোক আওয়ামী লীগ,ছাত্রলীগ করতো। ঐ এলাকায় জীবনের ঝুকি নিয়েই আওয়ামী করতে হতো। এই এলাকায় জাসদ গণবাহিনীর ও অন্যান্য নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন বাহিনীর অভয়ারণ্য ছিল। এই হরিনায়নপুর বাজারে দিন দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনখারাবি করতো। মানুষের নুন্যতম কোন নিরাপত্তা ছিল না। আজ গভীর রাতেও মানুষ নির্ভয়ে চলছে,তারা শান্তিতে আছেন। এসবই জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অবদান।
বেশ কিছু সময় তাদর সাথে কাটালাম। চেয়ারম্যান সম্রাট কোনভাবেই আমাকে খাবার বিল দিতে দিল না। আমাকে একবেলা খাওয়াতে পারা তার জন্য নাকি সৌভাগ্যের ব্যাপার। মনে মনে ভাবলাম যান্ত্রিক এই যুগে কে কাকে মনে রাখে? অথচ ৩০/৩২ বত্রিশ বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের মানুষগুলো আমাকে মনে রেখেছে। তাঁরা আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। এটাও তো কম প্রাপ্তি নয়।
লেখকঃ অধ্যক্ষ শাহ্জাহান আলম সাজু।