একটা ভেলায় ভেসে কোলকাতা গিয়েছিলাম ব্যক্তিগত কাজে ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। ডেটলাইন শনিবার। কিন্তু শুক্রবার বিকেলটা নিজের মতো করে কবিতায় ডুবে যেতে চেয়েছি।কিন্তু না।হলোনা। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রবল সুযোগ এনে দিলো শুক্রবার বিকেল। আমি ও উদ্যান লিটল ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক হাসানূর রহমান সুমন আমরা বিকেলে গেলাম হলদিরামে। কবিতা ও আড্ডা একসুতোয় বেঁধে বেঁধে আমরা এগোতে থাকি। আসতে থাকলেন সব কাছের বন্ধুরা। কেউ কেউ এই প্রথম আড্ডায় যুক্ত হলেন। আমরা বই বিনিময় করি।কবিতার কথা বলি।আবৃত্তির কথা বলি। আমরা সাম্প্রতিক বাংলা কবিতার গতি প্রকৃতি নিয়ে মৃদু পায়ে পথ চলি। কথার মধ্যে দিয়ে পথ চলায় একটা আলাদা আনন্দ আছে। আছে অচেনা পথে হারিয়ে যাওয়ার এডভেঞ্চার। কথা ও কবিতার মধ্যে দিয়ে আমরা একশ আশি মিনিট সান্ধ্য ভ্রমণ করি বাতাসে পানিতে অন্তরীক্ষে সমুদ্রে পাহাড়ে। একেকটা আড্ডায় ভূমিষ্ঠ হয় নতুন বাক্য। মুগ্ধ হয়ে শুনি বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী ও আমার বন্ধু স্বপ্না দের দারুণ সব কথা। কথা বলি কবিবন্ধু ফুল্লরা মুখোপাধ্যায় ও চন্দ্রিকা ব্যানার্জি ধরের সঙ্গে । ভূত পেত্নি যাঁর গল্পে আলোচনায় স্থান পায়। চন্দ্রিকা ব্যানার্জি ধরের গল্পে মাঝেমধ্যে ভূত পেত্নি কি হেঁটে হেঁটে আসে?
। কথা শুনলাম তরুন আলোচিত কবি দীপশিখা চক্রবর্তীর কবিতা ভাবনা।আবৃত্তি শিল্পী দেবনিষ্ঠা জানা ও আবৃত্তিশিল্পী সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্তের কথাও শুনলাম। বোনাস হিসেবে সুচন্দ্রিমা সেনগুপ্তের হাতে তৈরি মালপোয়া আমাদের জিহবার মনোযোগ কেড়ে নিলো
। হাপুস হুপুস শব্দ, চারদিকে নিস্তব্ধ, পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে…. অবস্থা। হলদিরাম থেকে আমরা দইবড়া, ধোকলা ও মাসালা টি আনলাম। কথা শুনলাম আবৃত্তি শিল্পী রঞ্জনা কর্মকারের সঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন ” অঙ্কুরোদগম” এর সভাপতি ও কবি তাপস মহাপাত্র এলেন। আড্ডা জমে ক্ষীর হয়ে গেলো। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ছবিতোলা, সেলফি চলতে লাগলো তুমুলভাবে। আমাদের আড্ডায় প্রথমবার যুক্ত হলেন কবি রাজশ্রী বন্দোপাধ্যায়। আনন্দের সময়টা ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যায় অনেকটা চায়নার বুলেট ট্রেনের গতির মতো।যেটা ঘন্টায় চারশত পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে দৌড়ায়। এমন একটি বুলেট ট্রেনে চায়নার ইউউ থেকে সাংহাই গিয়েছিলাম দেড়ঘন্টায় সাতশত ত্রিশ কিলোমিটার, ভাবলেই হৃদয় আলোড়িত হয়।নো ঝাঁকুনি, নো কাঁপুনি একটু দুলুনি… ব্যস ইউউ থেকে সাংহাই।ওমন জার্ণি স্মরণীয় হয়ে আছে হৃদয় আঙিনায়। এবারের আড্ডাও তাই। কবি তাপস মহাপাত্র দাদার আগমনের পর গতি আরো বেড়ে গেলো। আড্ডা চলতে থাকলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের উপর ফোকাস রইলো না। একটা অদৃশ্য চুম্বকের আকর্ষণে আমরা ভাসতে থাকি। রূপবতী চাঁদ আকাশে উঠে আলোর বন্যা বইয়ে দিলো, আর আমরা হলদিরামে শীততাপনিয়ন্ত্রক রুমে বসে আকাঙ্খা ও স্বপ্নের ডানায় চেপে অদৃশ্য চুম্বক খুঁজতে থাকি কবিতায়। একে একে সকলেই বিদায় নিলো। বসে রইলাম আমি, কবি তাপস মহাপাত্র ও দেবনিষ্ঠা জানা। রাত নয়টায় এলেন উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী পিয়ালী গঙ্গোপাধ্যায়। আর একপ্রস্ত চা নিয়ে এলেন কবি তাপস মহাপাত্র। এবার গান নিয়ে আড্ডা ও মজার সব সাহিত্যের চুটকি শুরু হলো। যা চললো রাত দশটা অব্দি। আমরা হলদিরাম থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকি রাতের কোলকাতায়। কত বিচিত্র মানুষ। সবাই ছুটছে যাঁর যাঁর নীড়ে। একসময় আমরাও আলাদা হয়ে গেলাম। দুভাগে। আমি ও সুমন উবার ডাকলাম।মেট্রো বন্ধ হয়েছে অনেকটা সময় আগেই। অসংখ্য স্মৃতির ঝাঁপি মাথায় নিয়ে আমরাও ফিরছি মির্জা গালিব স্ট্রিট। স্মৃতিগুলো মস্তিষ্কের নিউরনে ইন্সটল হতে থাকলো ঝমঝম বৃষ্টির শব্দে।