হাফিজুর রহমান শিমুলঃ আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য সফল করতে সভাপতি এবং মাদ্রাসার ধুরন্ধর সুপার জোকসাযোসে কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে । তফসিল গোপন করা ভোটার তালিকায় নানাবিধ অনিয়মের মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আদালত সূত্রে এবং বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সরে জমিনে অত্র মাদ্রাসায় গেলে অভিভাবক সদস্য রহিম, শামসুর রহমান, কাজী হাসান, লালন, গিয়াস উদ্দিন সহ একাধিক অবিভাবক সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, কোভিড -১৯ অর্থাৎ করোনা কালীন মহামারীর কারণে মৌতলা সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।যে কারণে মাদ্রাসায় বিভিন্ন পদে ৩টি নিয়োগ আটকেছিল। ৩টি পদে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্য সফল করার মিশনে সুপার মাওঃ মহাসিন আলী, সভাপতি ও দাতা সদস্য সৈয়দ আলী আফছারের যোগসাযোগে নোটিশ বোর্ডে নির্বাচনী তফশিল ও ভোটার তালিকা না টাঙিয়ে অফিস রুমের ভিতরে আলমারির গায়ে দায়সারা ভাবে কাগজ লাগিয়ে রাখে। যাতে করে অফিস খোলা ব্যতীত কেউ না দেখতে পারে এবং বাইরে যাতে বিষয়টি প্রকাশ না পায়। একপর্যায়ে ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিভাবক সদস্যরা অফিসে ঢুকে তফসিল এবং ভোটার তালিকায় নানা অনিয়ম দুর্নীতি দেখতে পায়। প্রবিধানে ২০০৯ এর ১২(১) বিধি মোতাবেক খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুত প্রকাশ ও অনুমোদন করিবার ও ১২(৩) বিধি মোতাবেক অনুমোদনের পরবর্তী কার্য দিবসে সকল শ্রেণীকক্ষে পড়িয়া শোনানো এবং নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও প্রবিধানের ২০০৯ এর ১২(৪)ও ১২(৫) বিধি মোতাবেক খসড়া ভোটার তালিকা অনুমোদনের আগে সকলকে শুনানো এবং নোটিশ বোর্ডে টানানোর বিধি-বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। অফিসের তালাবদ্ধ কক্ষে আটা দিয়ে লাগানো তালিকায় দেখা যায় ভোটার তালিকা এক ব্যক্তির একাধিক ক্রমিকে ভোটার হিসেবে নাম তালিকা বদ্ধ আছে। যেমন ১জন অভিভাবক ভোটার। ইব্রাহিম হোসেন তার নাম ভোটার তালিকায় ৬ নং ক্রমিকে এবং ২০০ নং ক্রমিকে আছে।এইভাবে অনেক অভিভাবক সদস্যদের নাম থাকা সহ জনৈক মিজানুর রহমানের পুত্র মীর মুজাহিদ হোসেন এর জন্ম ২৩/৬/২০১৭ ইং তারিখে। সে অত্র মাদ্রাসায় ভর্তি না হলেও তাকে ভর্তি দেখিয়ে ভোটার তালিকায় ৩ টি ক্রমিকে একই ব্যক্তির ৩ জায়গায় ভোটার দেখানো হয়েছে, ক্রমিক নাম্বার ১০, ১৪ ও ৯১। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট থাকার কথা। নির্বাচনে দাতা সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী, দাখিল বিভাগের সদস্য এবং ইবতেদায়ীতে থাকার বা নির্বাচনের কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র ইবতেদায়ীতে খায়রুল আলম ওরফে বুলবুল এবং কাজী হাসান উদ্দিন লালন দুজন কে নিয়ে নির্বাচন করা হয়। তবে কাজী হাসান উদ্দিন লালন সাংবাদিকদের জানান, অত্র মাদ্রাসার সুপার মাওঃ মহসিন আলী তাকে ভোটের আগের দিন অর্থাৎ বুধবার নির্বাচন হবে না বলে জানালেও বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ অমান্য করে ঠিকই নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এই সমস্ত নানাবিধ অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে মৌতলা গ্রামের মৃত সৈয়দ ইমদাদ হোসেনের পুত্র ও অভিভাবক সদস্য সৈয়দ বাকী বিল্লাহ বাদী হয়ে অত্র মাদ্রাসার সুপার মাওঃ মহসিন আলী, সভাপতি সৈয়দ আফসার আলী, প্রিসাইডিং অফিসার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা নাসিম শাহাদাত, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিবাদী করে বিজ্ঞ কালিগঞ্জ সিনিয়র জজ আদালতে গত ১৩ অক্টোবর দেওয়ানী ৪০৫/ ২০১২ (কালী:) মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বিজ্ঞ আদালত শুনানি করে গত ১৬ -১০ -২০২২ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতের সহকারি জজ সাবরিনা চৌধুরী উভয় পক্ষের শুনানি করে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ প্রদান করেন। উক্ত আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্বাচন করে ফলাফল ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার মহাসিন আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের পত্রিকায় না দেওয়ার অনুরোধ জানান ও বলেন নির্বাচনের তফসিল এবং ভোটার তালিকা নিয়ম মাফিক করা হয়েছে। তবে অত্র মাদ্রাসার নোটিশ বোর্ড দেখাতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় না দেওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।