শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
অবসরে যাচ্ছেন অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ মাজহারুল ইসলাম বিপিএম কালিগঞ্জের পল্লীতে প্রবাসীর জমি থেকে বৃক্ষ নিধনের অভিযোগ উঠেছে  বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ২৮৮ জন বিজিপি, সেনা ও অন্য সদস্যদের প্রত্যাবাসন যাদের কোন জাত নেই, যাদের কোন ধর্ম নেই তারাই শ্রমিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে- ফরিদপুরে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলার ব্যত্যয় হলে সরকারের উন্নয়ন কাজেরও ব্যত্যয় ঘটবে- পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার নির্দেশ গণপূর্তমন্ত্রীর। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রীর পবিত্র ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাত্রা সাতক্ষীরা জেলার কনস্টেবল ও নায়েক পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের “দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স” এর ১৫তম ব্যাচের সমাপনী ও সনদপত্র বিতরণী অনুষ্ঠান শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের উদ্যেগে বৃক্ষরোপণ যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শামসুর রাহমানের কবিতা পাঠ- তৌফিক জহুর

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১.০২ পিএম
  • ২১৭ বার পঠিত
মধ্য নব্বইয়ে জীবন ও জীবিকার টানে ঢাকা শহরে যখন পদার্পণ করি তখন বাংলা কবিতার আকাশে পঞ্চাশের তারকা কবিদের বিশাল আলোকসজ্জা। চোখ ধাঁধানো সব কবিতা পাঠ করতাম পঞ্চাশের কবিদের। বাংলাদেশে অধিকাংশ দৈনিক পত্রিকাগুলো শুক্রবারে সাহিত্য পাতা বের করে। প্রগতিমনস্ক সবগুলো দৈনিক পত্রিকার সাময়িকী পাতার কবিতা শুরু হতো পঞ্চাশের আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) এর কবিতা দিয়ে। আমরা অপেক্ষা করতাম সে সময়ের সাময়িকী পাতার জন্য। শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক প্রতি শুক্রবারেই হাজির হতেন কবিতা নিয়ে। পড়তাম। কবিতার গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করতাম। নানান কারণে নব্বই দশক আলোচিত। আমাদের সময়ে অগ্রজ আশি, সত্তর, ষাট দশকের তুখোড় মেধাবী কবিদের কবিতা আমরা পেতাম দৈনিকের সাহিত্য পাতা ও বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে। কিন্তু আমাদের চোখ খুঁজে ফিরতো পঞ্চাশে। অনেকদিন ভেবেছি পঞ্চাশ কেন টানে। সাহিত্যের বিভিন্ন অলিগলি ঢুঁ মেরে অবশেষে বুঝেছি পঞ্চাশের কবিদের সৃষ্টি কবিতা আমাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে ত্রিশ পরবর্তী বাংলা কবিতায়। পঞ্চাশের চৌম্বকীয় কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি শামসুর রাহমান। পঞ্চাশের প্রধান কবিরা তীব্র, দীপ্র ও স্বতন্ত্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ত্রিশ পরবর্তী। একজন অনুজের চোখে অগ্রজে গভীর নিবিড় পাঠ পরবর্তী কিছু বয়ান।
শামসুর রাহমানে ডুবে থাকিঃ
কবিতা এমন এক জিনিস যা শরীর আত্মা দখল করে। কবিতা দখলকারী মানুষ এমন দ্যুতি ছড়াতে থাকে যা কাল পেরিয়ে মহাকালের আলোকসজ্জায় শামিল হয়। কবিতা দখলকারী মানুষ তাঁর নিজস্বতার বৃক্ষ এমনভাবে রোপণ করে যার ছায়া শত-শত বছর পাঠকের আত্মাকে আনন্দ দেয়। স্বপ্ন দেখায়। সমাজকে আলোড়িত করে। মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা বুদ্ধি নয়, হৃদয় নয়-কল্পনা। কবিতা এতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে এজন্যেই যে কল্পনা তার পিছনে সবচেয়ে প্রধানভাবে সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে কাজ করে যায়। কবিতা মানে রূপান্তর, কবিতা মানে বদল, কবিতা মানে পরিবর্তন। কবিতা মানে অবৈকল্য নয়, কবিতা মানে তির্যকতা। কবিতা নয় বস্তুফলক, এমনকি কবিতা কল্পনাফলকও নয়। কবিতা বস্তুরে রূপান্তরিত করে এমনকি কল্পনাকেও পরিবর্তিত করে। কবিতা একই সঙ্গে কাজ করে মনন ও কল্পনা ও অনুভূতি ও উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে; আবার মনন অতীত, কল্পনা অতীত, অনুভূতি অতীত, উপলদ্ধি অতীত, অভিজ্ঞতা অতীত জিনিস নিয়ে। দৃশ্যজগৎ ও অদৃশ্য জগৎ মিলে মিশে কবিতায় অন্য এক সত্যতর জগৎ জাগ্রত করে। আমরা সাব হেডলাইন দিয়েছি “শামসুর রাহমানে ডুবে থাকি”- এই যে ডুবে থাকা, শামসুর রাহমানের ভাষা যতদুর যায় ততদূর হাঁটতে থাকি। শামসুর রাহমানের কবিতার গভীরে প্রবেশ করে উপলব্ধি করেছি, নীরবতা ছাড়া, নির্জনতা ছাড়া তাঁর কবিতার গভীরতম ভেতরে প্রবেশ করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কিন্তু তাঁর ভাষা নির্মাণ শৈলী অত্যন্ত সহজ সরল। অর্থাৎ আমরা বলতে চাইছি তাঁর কবিতার অন্তর্নিহিত তরজমা বুঝতে নিবিষ্ট মনে পাঠ করতে হবে। শামসুর রাহমানের “মনে-মনে” কবিতাটি লক্ষ্য করি:
“জানিনা কী ক’রে কার। মমতার মতো
শান্ত শুভ্র ভোর এসে ঝরে,
জানিনা কী ক’রে এত। নীল হয় রোজ
ধ্রুপদী আকাশ, ঘাসে। এত রং, রোদে
জীবনের সাড়া, বিকেল হাওয়ায় এত। নির্জন ভাষা
(জানলো না কেউ) তবু। কী ক’রে যে বেঁচে আছে তারা। ”
খুব গভীরভাবে পাঠ করলে এই কবিতাটির গহন আনন্দ আমাদের চিত্তে এমনভাবে দোলা দেয়, আমরা আলোড়িত হই। পুরো ছ’মাত্রার মাত্রাবৃত্তেই পড়ে ফেলা যায়- এরপরেই আকস্মিক চারমাত্রার ঢেউ আমাদের আলোড়িত করে। [৬+৬+২, ৬+৬, ৬+৬+২, ৬+৬+২, ৬+৬+৬+২, ৬+৬+৬]।
শামসুর রাহমান তাঁর বিশাল কবিতার জগৎকে- ভাব, ভাবনা, বক্তব্যকে কেন্দ্রে রেখে চারপাশে বিকশিত মঞ্জুরিত হয়েছেন। ত্রিশের আধুনিকতা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। তাই তাঁর কবিতায় আমরা গদ্য কবিতার আলাদা নির্মাণ শৈলীর সরঞ্জাম লক্ষ্য করি। তাঁর গদ্য কবিতা জীবনের স্বপ্ন হয়ে আমাদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। তিনি মুক্তক অক্ষরবৃত্তেই আমাদের প্রাণে দোলা দেন তাঁর কবিতার ভুবন দিয়ে। আমরা বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। তাঁর মুক্তক ছন্দে কবিতা পাঠে আমরা অদ্ভূত এক আনন্দ লাভ করি। মনে হয়, একথাটি আমারই চিন্তার মধ্যে এসেছিলো কোনো এক নির্জন দুপুরে। আমরা রংধনুময় আকাশ খুঁজে পাই।
“অনিদ্রার বিভীষিকায় তুমি এলে”
-অনন্তের একবিন্দু আলো-
বাহুতে উজ্জীবনের শিখা, উদ্ধারের মুদ্রা উন্মীলিত
দমকা বাতাসের আনন্দে কেঁপে উঠলো বুকের তারা;
শশকের উৎকণ্ঠা নিয়ে তোমাকে দেখলাম
রূপালী, উর্নাজালের শত্রæতা সাধলো
দুরন্ত উদ্দাম একরাশ চুল। ”
[কোনো একজনের জন্যে: প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে]
ঘরোয়া শব্দ, জীবন্ত উপমা, মিথ, দর্শন শামসুর রাহমানের কবিতায় প্রবলভাবে উপস্থিত। যে কোনো বিষয়ে একজন কবি চিন্তা করেন অন্যভাবে। পঞ্চাশের আধুনিক কবিরা শুধুমাত্র বিষয় বস্তুতে নয় কলাকুশলতায়ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। এ কারণেই কবি ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখেছেন, “সমগ্রভাবেই পঞ্চাশের কবিরা তিরিশের কবিদের অতিচেতন আঙ্গিকতা থেকে মুক্ত (রবীন্দ্রবলয় থেকে বেরোনোর অন্যতম উপায় হিসেবে তিরিশের কবিদের যেতে হয়েছিল ঐ পথে); পঞ্চাশের কবিদের যে সহজ স্বতঃস্ফূর্তি, বাকরীতিকে অঙ্গীভূত করে কবিতাকে একালের জীবনের অনেক কাছাকাছি এনে ফেলা কলাকুশলতারও অজটিল মসৃণ প্রয়োগ, পঞ্চাশের পুরো বাংলা কবিতার প্রধান কএকজন কবিতা কর্মীর সঙ্গে শামসুর রাহমানেরও তাতে প্রধান অংশ আছে।” [করতলে মহাদেশ:আবদুল মান্নান সৈয়দ, পৃষ্ঠা-১৫৯]
শামসুর রাহমান কবিতা লেখার পয়তাল্লিশ বছর পর আমরা যখন কবিতার জগতে পা রাখি তখন তিনি আমাদের কাছে বিষ্ময়ের বরপুত্র। তাঁর কবিতার অজস্র চিত্র ও চিত্রকল্প আমাদের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর গদ্যকবিতা ও ছন্দোবদ্ধ কবিতা দুয়েরই উজ্জ্বল ঐশ্বর্যে আমরা মুগ্ধ। শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে চিত্র রচনায় তাঁর কুশলতা অসামান্য। সৌন্দর্যের উপলব্ধি, মনুষত্ববোধ সম্পন্ন মানুষই প্রকৃত রচনার মধ্যে দিয়ে মানুষের জয়গান গেয়ে চলেন। শামসুর রাহমান ক্রমশ তাঁর কবিতায় মানুষের মঙ্গলের কথা বলেছেন। কবি মাত্রই মননশীল। কবি মাত্রই অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন বিদ্রোহী কলমযোদ্ধা। পুরাতনের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জড়তার বিরুদ্ধে কবির কলম বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। শামসুর রাহমানের কবিতায় আমরা তা খুঁজে পাই। একটি কথা বলা দরকার, ব্যঞ্জনার সূক্ষতা ও ব্যাপ্তি যেমন আধুনিক কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনি সেই ব্যঞ্জনাকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে হলে পাঠককে বিদগ্ধ ও সূক্ষ অনুভূতিশীল হতে হবে। শামসুর রাহমান বহু বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতার শুধু একমুখী বিশ্লেষণ করলে কবিকে সম্পূর্ণরূপে বর্তমান প্রজন্মের কাছে চিত্রায়ন করা যাবেনা। আমরা নিচে কবির কয়েকটি কবিতার উদাহরণ দিচ্ছি। তাহলে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। যদিও তিন-চারটে কবিতার অংশ বিশেষ উপস্থাপন যথেষ্ট নয় বলে মনে করি। তবুও তাঁর কবিতার বহুমুখী গতিবিধি নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
১)কোদালে অবহেলে উপরে আনি
মাটির ঢেলা আর মড়ার খুলি
শরীফ কেউকেটা কী করে চিনি?
#
শরীফ কেউকেটা কী করে চিনি?
মাটির নীচে পঁচে অন্ধ গোরে
হয়তো সুন্দরী কুরপা কেউ
করোনা বেয়াদপি বান্দা তুমি
#
করোনা বেয়াদপি বান্দা তুমি
বাদশা কেউ নাই গোলাম সব
বেগম পেতে চায় বাদীর সুখ
আউড়ে গেছে কত সত্য পীর
[কবর খোঁড়ার গান : প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে]
২)“যার পরনে নীল শাড়ি, মেঘলা খোঁপায় রক্তজবা
যার নখ সূর্যোদয়ের রঙে সজীব,
যার কণ্ঠস্বরে রাত্রির মমতা যুগল পাখির
শব্দহীন ভালোবাসা আর গহীন অরণ্যের বুকচেরা জ্যোৎস্না
সত্যের মত সে দাঁড়িয়ে থাকে জানালা ধরে
বৃষ্টির দুপুরে। ” [বহুদিন পর একটি কবিতা : ইকারুসের আকাশ]
৩)“স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারীর উজ্জ্বল সভা”
[স্বাধীনতা তুমি]
শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বাংলা কবিতার একটি অধ্যায়। মননের সঙ্গে আবেগের, বুদ্ধির সঙ্গে প্রবৃত্তির, বাস্তবের সঙ্গে আদর্শের, ক্ষণিকতার সঙ্গে চিরন্তনতার একটা অকল্পনীয়, অচিন্তনীয় মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন শামসুর রাহমান। সে কারণেই বারেবারে ফিরে ফরে তাঁর কবিতার জগতে আমাদের যেতে হয়। আধুনিক বাংলা কবিতাকে পাঠ করতে হলে শামসুর রাহমানকে পাঠ করতেই হবে।
তথ্যসূত্রঃ
i) করতলে মহাদেশ: আবদুল মান্নান সৈয়দ
ii) আল মাহমুদ ও অন্যান্য: তৌফিক জহুর

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
  12345
27282930   
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com