মোঃ জাহিদ হাসান।। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নে নির্মিত মাহমুদপুর গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ব সংরক্ষণ এবং অবকাঠামাগত উন্নয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ফাইলবন্দী থাকায় শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শহীদ পরিবারের সন্তান এবং গোপালপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, একাত্তর সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মাহমুদপুর গ্রামের বটতলায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও কাদরীয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে উভয় পক্ষেই ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেই যুদ্ধের এক পর্যায়ে রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় কাদরীয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে গেলে হানাদার বাহিনী শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। তাদের বেপরোয়া গুলি বর্ষণে নারী ও শিশুসহ ১৭ জন শহীদ হন। বহু নারী ধর্ষিতা হন। আহত হন ৬০/৬৫ জন। যুদ্ধাহতদের অনেকেই এখনো পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘদিন গণহত্যার বিষয়টি উপেক্ষিতই ছিল। গোপালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে টানা ২৫ বছর ধরে গণহত্যা দিবসটি পালন করে আসছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন মাহমুদপুর বটতলায় ‘‘স্বাধীনতা ৭১” নামে একটি সুদৃশ্য স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণ করেন। এ স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্র নাথ সরকার বিমল জানান, বর্তমান সরকার একাত্তরের সকল গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রসমূহ ও গণহত্যা চিহ্নিতকরণ এবং গণকবর সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন। এ তিন কারণেই মাহমুদপুর বটতলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য ও পবিত্র স্থান হিসাবে বিবচিত হওয়ার দাবি রাখে। উপজেলা পরিষদ এখানে স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করলেও ডিজাইন মোতাবক স্থাপত্যের সৌন্দর্য রক্ষা এবং শহীদদের স্মৃতির প্রতি যথাপোযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য বাড়তি অবকাঠামো নির্মাণের স্বার্থে ২০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বেশ কম দামে এখানে জমিও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এক বছর পার হলেও সেই ফাইল স্থির হয়ে আছে।
উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ মল্লিক জানান, মাত্র ২০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের জন্য যথা নিয়মে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নকশা মোতাবেক অবকাঠামো উন্নয়ন, সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ফান্ড দেওয়া যাবে। জমি অধিগ্রহণ সমাপ্ত হলেই কাজ শুরু করা যাবে।