প্রিয় ক্লাসমেট,
তোদের সাথে অনেকদিন দেখা হয় না, কথা হয় না, অনেকের সাথে কোনও যোগাযোগও নেই। তাই লিখতে বসলাম। হয়তো অনেকেই পড়বে, আবার নাও পড়তে পারে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেনি, অনেকে আবার হাই স্কুলের পরে শিক্ষাকে আর এগিয়ে নিতে পারে নি, কারো কারো কলেজেই শেষ। কয়েকজন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। বেশীরভাগই ইতি মধ্যে সংসার পেতেছে, বিবাহিত কেউ আবার ডিভোর্সি হয়ে চরম নিঃসঙ্গ জিবনযাপন করছে, কারো কারো আবার বিয়েই হচ্ছে না। অনেকেই এখনও জীবনের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে, মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। কেউ আবার স্থবির হয়ে পড়ে আছে, না পারছে এগোতে, না পেছোতে কিংবা সবকিছু ছেড়ে পালাতে। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ এখন ও দুবেলা খাবার খেতে পাচ্ছে না, অভাবে নয়তো রোগশোকে। অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, দু’একজন আবার মাঝে মাঝে বিদেশ ঘুরতেও যাচ্ছে। তরতর করে উপরে উঠে যাওয়া মেধাবী বন্ধুটি বখে যাওয়া সন্তান নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় দিনাতিপাত করছে। দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যে কর্মকর্তার সজ্জিত কক্ষে পাদুকা খুলে অনুমতিক্রমে ঢুকতে হতো হঠাৎ চাকুরী খুইয়ে সে এখন কর্পোরেট পাড়ায় সিভি জমা দিতে ঘুরছে ফিরছে। মামলায় ফেঁসে কেউ সস্তাকাগজের ফাইল হাতে উকিল বারের বারান্দার টুলে স্বপ্ন দেখছে কিভাবে সাজা ঠেকানো যাবে। ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী সবার ক্রাশ বান্ধবীটি এখন প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসায় দেশবিদেশে ডাক্তারের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে চরম হতাশায়। কেউ এখন অনেক ক্ষমতাবান নেতা, যার আঙ্গুলের ইশারায় অনেক কিছুই ঘটে। কেউ কেউ গ্রামে ফিরে গিয়ে চাষাবাদে কিংবা দোকানদারিতে মন দিয়েছে। কয়েকজন মরেও গেছে, তাদেরকে কিন্তু ভুলিনি…
স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার আগে শেষবার যখন আমরা একসাথে ক্লাসে বসেছিলাম, কতইনা স্বপ্নে ভরা আনন্দমুখর ছিলো শেষ দিনটি। সংক্ষিপ্ত জীবনে কে কখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো কেউ জানিনা। তাই পুরানো সহপাঠীকে কল করো কিংবা সহজে যোগাযোগ করার সুযোগ দিও। উচ্চ ডিগ্রি, উচুঁ মেধা, উচ্চ পদ, উচ্চ সম্বৃদ্ধি ভালো অবস্থান, কোনটাই চিরস্থায়ী নয়। জীবন উত্থান-পতনে পূর্ণ, যে কোনওসময় জিবন ঘুরে দাঁড়াতে পারে, জিবন চরম অনিশ্চিত বিষয়। সকলের জিবন সহজ হোক, সুন্দর হোক
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক Hasan Hafizur Rahman