শেষ পর্যন্ত শপথই নিলেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। গতকাল মঙ্গলবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মোকাব্বিরকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ শেষে তিনি সংসদে প্রকৃত বিরোধী দলের ভূমিকা রাখবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, এরা (মোকাব্বির, সুলতান) বেইমান, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তবে মোকাব্বির দাবি করেন, নিজ দল গণফোরামের অনুমতি নিয়েই শপথ নিয়েছি। কিন্তু গণফোরাম জানিয়েছে, শপথ নেওয়ার অনুমতি তাকে দেওয়া হয়নি। এদিকে গণফোরাম দলীয় প্যাড চুরির অভিযোগ এনেছে মোকাব্বিরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে মোকাব্বির বলেছেন, হতাশাগ্রস্ত হয়েই এসব অভিযোগ করছে দল।মোকাব্বিরের শপথ ঘিরে গতকাল দিনভর বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন নেতাদের তরজা অব্যাহত ছিল। শপথগ্রহণ করা না করা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। কোন দল সত্যি বলছে বা কোন নেতা মিথ্যা বলছেন তা নিয়ে ধন্ধে পড়ে যান আমজনতা। কেউ মনে করছেন, ক্ষমতার মোহে পড়ে দলকে অস্বীকার করে তারা সংসদে যাচ্ছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, দলীয় কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া প্যাড চুরির মতো তুচ্ছ বিষয় সামনে আসায় নানা রসালো আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সবার প্রশ্ন একটাই, এত অভিযোগের ভিড়ে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির কে?মঙ্গলবার শপথ নিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ বা ৩ এপ্রিল আমার শপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি। সেই অনুযায়ী শপথ নিয়েছি।তবে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘শপথ না নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। তিনি (মোকাব্বির) নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’শপথ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এরা বেইমান, জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছে, প্রতারণা করেছে। এটা তার নিজের দলের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রতারণা।’ মোকাব্বির খান বলেছেন, জনগণের হয়ে কথা বলব। সংসদে অবশ্যই বিরোধী দলের অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালন করব আমি। মোকাব্বির দলীয় প্যাড চুরি করে শপথের আবেদন করেছেন বলেও দাবি করেছে গণফোরাম। এ বিষয়ে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘তিনি দলীয় প্যাড চুরি করে শপথ নেওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন।’প্যাড চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে মোকাব্বির বলেন, যিনি একথা বলেছেন, হয়তো তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, চাওয়া-পাওয়ার হতাশা থেকে এসব বলেছেন তিনি।তবে মোকাব্বিরের শপথে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত এই এমপি বলেছেন, শপথ নিয়ে মোকাব্বির খান জনগণের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি ভোটারদের সম্মান জানিয়েছেন। এ জন্য আমি খুশি এবং আনন্দিত। আশা করি, বাকিরাও শপথ নেবেন।এভাবে সারা দিনে বিরোধী দলগুলোর এসব বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যে দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের মাঝে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা। জনগণ আশা করছে, একসময় পর্দার আড়াল থেকে সত্যিটা ঠিক বেরিয়ে আসবে।একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ছয়টি ও গণফোরাম দুটি আসনে জয়ী হয়। পরে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীরা শপথ নেননি। তবে গণফোরামের সুলতান মনসুর দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ৭ মার্চ শপথ নেন। পরে তাকে গণফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হয়। শেষ পর্যন্ত মনসুরের দেখানো পথেই হাঁটলেন মোকাব্বির।