এ,এস,এম, জাফর ইকবাল (যশোর), ঝিকরগাছা : নিত্য পণ্যের মূল্য নিত্য বাড়ছে। আর তাতে পুড়ছে সাধারণ জনগণ। মূল্য বৃদ্ধিতে ক্রেতাশুন্য বাজার। ব্যবসায়ী বা জনগন কেউ ভালো নেই। সামনে শবেবরাত আর রোজায় আরও এক দফা মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। তাদের দাবী, বাজার মনিটরিং জোরদার না করলে আসন্ন রোজার মাসে কষ্ট আরো বাড়বে।
সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে যশোরের ঝিকরগাছার বাজারেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পণ্যের মূল্য। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চাকরিজীবীরাও আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। গত কয়েক সপ্তাহে কাঁচাবাজার, মুদিখানা এবং মাংসের বাজার ব্যাপক অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে রোববার সাপ্তাহিক হাটের দিন সন্ধ্যায় ঝিকরগাছা কাঁচাবাজারে দেখা গেছে ক্রেতা শুন্য। দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায় গত ৭ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে তরিতরকারির দাম কেজিতে ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি কলা ২৫ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, ১০ টাকার টমেটো ২০ টাকা, ৪০ টাকার বেগুন ৫০ টাকায, ৪০ টাকার মেটে আলু ৬০ টাকা, ১৫ টাকার সিম ৩০ টাকা, ২০ টাকার ডাটা ৩৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪০/৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, সাহস বেড়েছে কাঁচা মরিচে। ৮০ টাকার মরিচ ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৪০ টাকার বরবটি ৬০ টাকা আর ১৫ টাকার গোল আলু ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে দাম বেশি উচ্ছে আর সজনের ডাটার। উচ্ছে ১২০ টাকা আর সজনের ডাটা ৩২০ টাকা কেজি। কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, তরকারির মূল্য বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের সবজি ক্রয়ের পরিমাণ কমেছে, যে ক্রেতা ১ কেজি সবজি কিনতেন তিনি এখন ৫০০ গ্রাম সবজি কিনছেন। সবজি কিনতে আসা ক্রেতা রুস্তম আলী বলেন, কয়দিন আগে সবজির যে দাম ছিল এখন তার থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে মুদি দোকানের দ্রব্যের দামও প্রতি কেজিতে প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মসুরের ডাল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায়, ছোলার ডাল ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, মুগের ডাল ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা, জিরা ৪৬০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায়, লবণ ৩২ টাকা থেকে ৪০ টাকায়, এলাচ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দারুচিনি ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, চিনি ১১৫ টাকা, ৮০ টাকার ছোলা ৮৫ টাকা, বিভিন্ন ধরনের ডিটারজেন্ট পাউডার প্রতি কেজি ২০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে, সাবানেও একই অবস্থা। মুদির মাল কিনতে আসা আশরাফ হোসেন জানান, মসলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তরকারিতে এখন মসলা খাচ্ছি না বললেই চলে। প্রয়োজনের তুলনায় এখন অনেক কম মসলা কিনছি।
মুদি দোকান ব্যবসায়ী সন্দীপ কুমার মোদক বলেন, ক্রেতাগন এখন প্রয়োজনের তুলনায় কম পণ্য কিনছেন। বাজার মূল্য বৃদ্ধির কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মাংসের বাজারেও দেখা দিয়েছে চরম অরাজকতা। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে প্রতি কেজি বিভিন্ন ধরনের মুরগির মাংস দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, কাটা পল্টি মুরগির মাংস ২৬০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাটা পোল্টির মাংস কিনতে আসা ভ্যান চালক শহিদুল জানান, পোল্টি গোস্তের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের চেয়ে অর্ধেক কিনছি। আয় ইনকামও কমে গিয়েছে। তিনি আরো বলেন সামনের ঈদে মাংস কিনে খেতে পারবে কিনা বলতে পারছিনা। সাড়ে তিনশ টাকায় কাটা পোল্টির মাংস কিনতে হতে পারে। পোল্টির মাংস বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান, মাংস ক্রেতারা তাদের পূর্বের চাহিদার তুলনায় এখন অনেক কম মাংস কিনছেন।
একই অবস্থা গরুর মাংসের বাজারে।বিগত সাত থেকে ১০ দিনে সেখানে প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী ঈদের বাজারে প্রতি কেজি মাংসের দাম সাড়ে সাতশ থেকে আটশ টাকায় দাঁড়াতে পারে। এখন প্রতি কেজি মাংস ৬৬০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এমনটাই জানালেন মাংস ব্যবসায়ী কিতাব আলী। গরুর মাংস কিনতে আসা আব্দুস সালাম জানান আগামী শবেবরাতে মাংসের দাম আরো ৫০ টাকা বেড়ে যাবে। অর্থাৎ সাধারণ মাংস ৭০০ টাকার জায়গায় সাড়ে ৭০০ টাকা কিনতে হতে পারে।
খাসির মাংস এখন অনেকে খেতে ভুলেই গিয়েছেন। প্রতি কেজি খাসির মাংস গত ১০ দিনে ৯০০ টাকা থেকে এখন ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা দীপক কুমার ঘোষ জানান , খাসির মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষ সোনালী মুরগি এবং পোল্টি মুরগির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা জানতে চাওয়া হলে বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল জানান, আগে টিউশনি করতাম না, পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন টিউশনি করা ধরেছি। আরেকটি কথা হলো ডলারের মূল্য বিবেচনা করলে দেশের সকল চাকরিজীবী মানুষের বেতন কমে গিয়েছে। এ কারণে চাকরিজীবীরাই খুব অস্বস্তিতে রয়েছেন। বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
সরকারি চাকরিজীবী এমদাদুল হক জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রোববার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশিদ জানান, রোজার আগে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সাধারণ জনগণ বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই সরকারের কঠিন মনিটরিং দাবি করেন।