‘দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার ২৭ মার্চ বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারে একটি হোটেলে ‘ইনোভেটিভ বিজনেস অপরচুনিটিজ ফ্রম বেলজিয়াম’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। বেলজিয়ামের রপ্তানি উন্নয়ন সংগঠন ওলোনিয়া এক্সপোর্ট-ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সি এবং ফ্ল্যান্ডার্স ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ট্রেড যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে কোনো বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আমাদের দেশের অর্থনীতির আকার যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ও বাড়ছে, এ সব কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে বেলজিয়ামের স্বত:প্রণোদিত এই সেমিনারের বিশেষত্ব চিহ্নিত করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগে বিদেশিদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সাধারণত আমরাই বিদেশে গিয়ে সভা-সেমিনার করি, আর আজ বেলজিয়ামের কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এসে এখানে সেমিনার করছে। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি বিনষ্ট হয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না এবং কোনো দেশ এভাবে এসে সেমিনার করবে না, সতর্কবার্তা দেন তিনি।
সম্প্রচার মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে একশত ইকনোমিক জোন তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইকনোমিক জোন উৎপাদনে গেছে। দেশি, বিদেশি বিনিয়োগ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা ভাবনায় রেখেই এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো তৈরি হচ্ছে। সে জন্য বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আমাদের জন্য ভালো।
বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাম থেকে পরিবেশ রসায়ন পিএইচডি অর্জনকারী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেলজিয়াম একটি উন্নত দেশ। বেলজিয়াম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট সেখানে বসে। সেই দেশ থেকে যদি আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসে, বিশেষ করে হাইটেক শিল্প, যে খাতে আমরা এখনো সেভাবে পৌঁছায়নি, সে সব খাতে বিনিয়োগ আমাদেরকেও সে সব ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তুলতে পারবে। এই উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক সেমিনারে সে ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এতে করে নি:সন্দেহে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।’
এর আগে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী দেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬০তম থেকে ৩৫তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে যখন সারা বিশ্ব থমকে গিয়েছিল, তখন বিশ্বের যে মাত্র ২০টি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধ্বনাত্বক হয়েছে, আমাদের দেশ তার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। জাপানের নিক্কি গবেষণা সমীক্ষায় করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম ও এশিয়ায় শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল সমীক্ষায় ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়ে আমরা ভারতকে ছাড়িয়ে গেছি।’
ঢাকায় নিযুক্ত বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যান্ডারহ্যাসেল্ট (Didier Vanderhasselt), ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সামির সাত্তার, বাংলাদেশে বেলজিয়ামের কনসাল ড. আরিফ দৌলা প্রমুখ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
বেলজিয়ান সংস্থা ফ্ল্যান্ডার্সের ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনার বাবেটে ডেসফোসেজ (Babette Desfossez) এবং বেলজিয়ামের কৃষি, চিকিৎসা, নিত্যপণ্য, যানবাহন এবং নির্মাণ প্রযুক্তি বিষয়ক বাণিজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সেমিনারে বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য সেমিনার আয়োজক বেলজিয়ান বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ২৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন।