ভায়োলেট জেসপ, তিনবার জাহাজডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র নারী। যেনতেন জাহাজ নয়, হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানির জাহাজ টাইটানিক অলিম্পিক এবং ব্রিটানিক।
অল্প বয়সে বাবার মৃত্যু আর মায়ের অসুস্থ্যতার কারণে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে জাহাজে স্টুয়ার্ডেস কাজ নেন আইরিশ -আর্জেন্টিনীয় ভায়োলেট জেসপ।
প্রথম বিপদ আসে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯১১ তারিখে সদ্য কমিশনড জাহাজ অলিম্পিক ইংলিশ উপকূলে ঘন কুয়াশার মধ্যে যুদ্ধ জাহাজ HMS Hawke এর সাথে ধাক্কা খায়। ডুবন্ত অলিম্পিক থেকে ভায়োলেটসহ সমস্ত যাত্রিদের জরুরি উদ্ধার করে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
পরের বার তিনি টাইটানিকের স্টুয়ার্ডেস, ১২ এপ্রিল ১৯১২ এর ঘটনা প্রায় সবারই জানা। মাত্র দুজন বেঁচে যাওয়া স্টুয়ার্ডেসের একজন ভায়োলেট। টাইটানিক যখন দু ভাগ হয়ে যাচ্ছিলো ঠিক সেসময়ে তার ঠাঁই হয় ১৬ নং লাইফ বোটে। এসময় তিনি একজন ডুবন্ত শিশুকে উদ্ধার করেন। পরের দিন সকালে ভায়োলেট এবং অন্যান্য জীবিতদের RMS Carpathia এসে উদ্ধার করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, হোয়াইট স্টার লাইন ব্রিটানিকসহ তাদের কিছু জাহাজকে হাসপাতালে রূপান্তরিত করে। অভিজ্ঞতার কারনে সে জাহাজে ভায়োলেট জেসপকে ব্রিটিশ রেডক্রসের স্টুয়ার্ডেস নিয়োগ করা হয়।
২১ নভেম্বর ১৯১৬ তারিখে গ্রিসের কাছে এজিয়ানে HMHS Britannica(His Majesty’s Hospital Ship) জার্মানদের ভাসমান মাইনে আঘাত করে। ব্রিটানিকা দুটুকরো হয়ে মাত্র ৫৫ মিনিটে ডুবে যায়। ভায়োলেট জেসপ লাইফ বোটে আশ্রয় নেন, বোটটি জাহাজের চলন্ত প্রোপেলারের নিচে চলে যায়। এখানে ৩০ জনের মৃত্যু ঘটলেও তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান তবে জানে বেঁচে যান।
বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ায় তার নাম পড়ে Miss Unsinkable,তাকে নিয়ে লেখা হয় বই, বানানো হয় ডকুমেন্টারি। জীবনীকার জন ম্যাক্সটোন-গ্রাহাম জানতে চান আপনার জীবনের স্মরনীয় মুহুর্ত কোনটা? তিনি বলেন, অবসর গ্রহনের পর একদিন এক অচেনা কন্ঠের ফোন কল পাই। সে জিজ্ঞেস করে,
: তুমি কি ভায়োলেট?
: হ্যাঁ
: টাইটানিক ডোবার সময় এক শিশুকে
বাঁচিয়েছিলে, মনে আছে?
: হ্যাঁ
: সেদিনে তোমার বাঁচানো শিশুটা আজ অনেক
বড় হয়েছে। বহু খুঁজে তোমার নম্বর বের করে
কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন করেছি…আমিই সেই
শিশু…
#HasanHafizurRahman
* সেদিনের বেঁচে যাওয়া শিশুটির নাম আসাদ
থমাস।
** ১৯৭১ সালের ৫ ই মে মৃত্যুর কাছে হার
মানেন কখনও জলে না ডোবা ভায়োলেট
জোসেপ। আগামী পরশু তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর আইন প্রশিক্ষক Hasan Hafizur Rahman