মারুফ সরকার,স্টাফ রির্পোটার: র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
বহুল আলোচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের অর্ধগলিত উদ্ধারকৃত লাশের চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যা কান্ডের মাস্টার মাইন্ড প্রধান আসামী মোঃ নাঈম হোসেন’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব-১।
দুপুরে র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয় উত্তরা,ঢাকা সাংবাদিক সম্মেলনে(ব্রিফ) র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান,গত ১৬ জুন ২০২৩ তারিখ রাত আনুমানিক ৯.ঘটিকায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন রতনপুর ধোপাচালা এলাকার বনের ভিতর ফাঁকা জায়গা থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ভিকটিমের পকেটে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র থেকে নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সে মিরপুর প্রাইম ইউনিভার্সিটির ছাত্র।
উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা রহস্য উম্মোচনের জন্য র্যাব-১ এর আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
ভিকটিম রিয়াদ এবং ধৃত আসামী দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী থানাধীন পশ্চিম নারায়নপুর নামক একই গ্রামের বাসিন্দা। ধৃত আসামী ভিকটিমের দূর সম্পর্কের চাচা। ধৃত আসামী গত ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব প্রবাসী ছিল। সেই সময় প্রবাসীর স্ত্রী অথাৎ তার চাচীকে দেখাশোনার সুবিধার্থে চাচীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক হয় বলে ধৃত আসামী নাঈম হোসেন সন্দেহ করে এবং এই সন্দেহের প্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে চলে আসে।
আসামী বিষয়টি ভিকটিমের নিকট আত্মীয়দের জানায়। ধৃত আসামী ভিকটিমের প্রতি প্রতিহিংসার প্রেক্ষিতে তাকে হত্যার জন্য মনস্থির করে। আসামী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমকে হত্যা করার জন্য উক্ত এলাকার জনৈক পলাশ নামে এক ব্যক্তির সাথে ৫০,০০০/- টাকায় চুক্তি করে এবং সেই মোতাবেক টাকা প্রদান করে। ধৃত আসামী গত ২০২২ সালের জুন মাসের দিকে তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিনাজপুর হতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে এবং ভিকটিমকে হত্যার করার জন্য গত ২০ মার্চ ২০২৩ তারিখ ভিকটিমের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ভিকটিমকে হত্যার করার জন্য জনৈক পলাশকে চাপ দিতে থাকে।
জনৈক পলাশ ও আসামী নাঈম হোসেন ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে তার মেস থেকে গত ১৩ জুন ২০২৩ তারিখ আনুমানিক ৬ঃ৩০ ঘটিকায় ভিকটিমকে গাজীপুর, মৌচাক এলাকায় নিয়ে আসে। তারা ভিকটিমকে চা-নাস্তা খাওয়ানোর পর কিছু সময় তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে। আনুমানিক ৯ ঘটিকার সময় ধৃত আসামী ভিকটিমকে তার ভাড়া নেয়া পুকুর পাড়ে নিয়ে যায় এবং ধৃত আসামী জনৈক পলাশকে হত্যার করার জন্য বলে।
এতে পলাশ অনিহা প্রকাশ করলে আসামী নিজেই ভিকটিমকে হত্যা করা সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামী কৌশলে ভিকটিমের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মোবাইলের সকল ডাটা ডিলেট করে এবং আসামী ও ভিকটিমের মাঝে পূর্বের ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করে। গত ১৩ জুন রাত ০১৪৫ ঘটিকায় ধৃত আসামী ভিকটিমকে সাথে নিয়ে পুকুর পাড় হতে কালিয়াকৈরের রতনপুর ধোপাচালা এলাকার বনের ভিতর চলে আসে। ধৃত আসামী নাঈম হোসেন নিজেই ভিকটিম রিয়াদকে আনুমানিক ২. ঘটিকায় তার পরিহিত টি-শার্ট খুলে ভিকটিমের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।