✍️ হাইড্রোগ্রাফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন✍️
হাইড্রোগ্রাফি হলো সেই বিজ্ঞান যা সমুদ্র, সমুদ্র তলদেশ এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলের ভৌহাইড্রোগ্রাফিত বৈশিষ্ট্যাবলি পরিমাপ করে। তবে এটি শুধু নটিক্যাল চার্ট এবং প্রকাশনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমুদ্র ও সমুদ্র বিজ্ঞানের সব শাখা-প্রশাখার সঙ্গে জড়িত। সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, সামুদ্রিক পরিকল্পনা, সুনামি ও জলোচ্ছ্বাস মডেলিং, উপকূলীয় এলাকার ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক পর্যটন এবং সমুদ্র প্রতিরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে হাইড্রোগ্রাফি বিশেষভাবে জড়িত। ফলে এর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
হাইড্রোগ্রাফিক পরিষেবাগুলো প্রদান করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান। সোলাস অধ্যায়-৫-এর বিধি ৯ অনুয়ায়ী সব সোলাস কনভেনশন চুক্তিকারী দেশকে জাহাজের নিরাপদ নেভিগেশনের জন্য আবশ্যিকভাবে হাইড্রোগ্রাফিক পরিষেবাগুলো প্রদান করতে হয়।সমুদ্র জরিপ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কর্মকাণ্ড যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। তাই আধুনিক প্রযুক্তি উপযুক্তভাবে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য, সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে হাইড্রোগ্রাফি সার্ভিসের আধুনিকায়নের যাত্রার সূচনা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, ফরাসি সরকারের সহযোগিতায়। আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল যা দ্বিতীয় ধাপে ২০০১ সালে সম্পন্ন হয়। ফরাসি সরকারের প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভিস ডিজিটাল জরিপ শুরু করে। চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাইড্রোগ্রাফিক স্কুলটি ২০০৫ সাল থেকে ক্যাটাগরি ‘বি’ কোর্স পরিচালনার জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অব স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড কমপিটেন্স’ (আইবিএসসি) দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা হাইড্রোগ্রাফির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে।সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জলসীমা নিরাপদ রাখার জন্য বাংলাদেশের হাইড্রোগ্রাফি সংস্থাগুলো নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর সমুদ্র সম্পদের অনুসন্ধান ও ব্যবহার সম্পর্কিত কার্যক্রম ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে। ফলে সমুদ্র জরিপের প্রয়োজনীয়তাও আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি অনুভূত হবে। আমি কবির নেওয়াজ রাজ মনে করি, সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে দেশের হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থাগুলো এবং সমুদ্র ব্যবহারকারী সব সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়াতে হবে।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
এমএমএস”রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।