নলতা শরীফঃ সুমাইয়া আর মোমেনা। মায়ের আচঁলছোয়া আদর অথবা বাবার বায়না ধরা শৈশব এরা দেখেনি। জীবন তাদের কাছে গ্রাফ-কাগজের উত্থান-পতনের মতো জটিল সমীকরণ। তবে এই কৈশোরেই জীবন যুদ্ধে জিতে যাওয়া সৈনিক তারা। টিকে থাকার জীবনে স্বপ্নকে তারা লালন করেছে গভীর মততায়, সাহসী লড়াইয়ে। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সুমাইয়া পেয়েছে ৪.৬১ আর মোমেনা পেয়েছে ৪.১১।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন- সম্প্রসারিত কার্যক্রম, ঢাকা পরিচালিত উত্তরার চালাবনে ‘নলতা শরীফ কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন এতিমখানা’ অবস্থিত। এটিই ৪০ জন অসহায় এতিম মেয়ের আপন ঠিকানা। যে অসহায়ত্ব নিয়ে এতিম মেয়েরা এই ঠিকানায় আসে অচিরেই সে অসহায়ত্ব ভুলে গিয়ে আহ্ছানিয়া মিশনের এক প্রাণবন্ত পরিবারের উচ্ছ্বল সদস্য হিসেবে তারা জায়গা পায়। এদের কেউ শিশু শ্রেণিতে পড়ে, কেউ প্রাথমিক, কেউ মাধ্যমিক, কেউ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষায় ব্যস্ত।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সুমাইয়া অার মোমেনা অংশ গ্রহণ করে। দু’জনই উত্তরার হাজী বিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। ঢাকা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সুমাইয়া ৪.৬১ এবং মানবিক বিভাগ থেকে মোমেনা ৪.১১ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। মনের গহীনে পোষাপাখির মতো তাদেরও স্বপ্ন আছে। চিকিৎসক হবে সুমাইয়া আর মোমেনা আইনজীবী। তবে পেশাগত জীবনে যাই হোক সামাজিক জীবনে তারা মানুষ হতে চায়- অনুকরণীয় মানুষের মতো। সুযোগ পেলে নিজেদের প্রমান করতে চায় তারা। কান্নামাখা শৈশব ভুলে তারা প্রশান্তির ভবিষ্যৎ চায়।
বাবা হারা মেয়েগুলে এই বয়সেই কষ্ট লুকাতে শিখেছে। কখনো অনিবার্য কান্নাকে চেপে দেয় বুকের ভেতর, কখনো জামার হাতায় মোছে চোখের জল। একান্ত হাহাকারগুলো কখনো তাদের নিজস্ব শুণ্যতায় নিয়ে যায়। তবে দিনশেষে চোখে চিকচিক করে স্বপ্নের কিরণ, শুণ্যতার হাহাকার পায় পূর্ণতার অধিকার। বাবা মা হারিয়ে এই স্বপ্নটুকু নিয়েই তাদের বেঁচে থাকা।
তাদের লালিত স্বপ্নগুলো পুরণেই কাজ করছে আহ্ছানিয়া মিশন। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন-সম্প্রসারিত কার্যক্রম, ঢাকার সমন্বয়ক এ এফ এম এনামুল হক জানালেন বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা। এখন কতৃপক্ষ এতিমখানার মেয়েদের ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে পড়ায়। অচিরেই এতিমখানা ক্যাম্পাসেই নিজস্ব স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা জানান তিনি। এতিমখানা সম্প্রসারণ, কারিগরি শিক্ষা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় চলমান বলেও জানান তিনি। সুমাইয়া, মোমেনার সাফল্য এতিমখানার অন্য মেয়েদেরকেউ ছুয়ে গেছে।
এতিমখানা কতৃপক্ষ বলছে, আহ্ছানিয়া মিশনের সেবার আদর্শে এখানে এতিম-অসহায় মেয়েদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে যা প্রয়োজন তাই-ই করা হবে।
মোঃ মনিরুল ইসলাম
কলামিস্ট, রাষ্ট্র বিজ্ঞান গবেষক ও অধ্যাপক