মোতালেব বিশ্বাস, ইবি।।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীকে র্যাগিল এর অভিযোগ ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোঃ তাহমিন ওসমান, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২২-২০২৩ এর নিকট থেকে প্রাপ্ত অভিযোগপত্র বিবেচনায় এনে এবং গত ০২ সেপ্টেম্বর ওরিয়েন্টেশন ক্লাশের পর ২০২১-২০২২ শিক্ষবর্ষের কিছু সিনিয়র ছাত্র তাহমিন ওসমানের সাথে চরম খারাপ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ০৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের সামনে এবং ০৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের পাশে আবার হয়রানি করে।
উক্ত বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে একটি গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো। উক্ত বিষয়ে কারোর নিকট কোনো তথ্য প্রমাণাদি থাকলে তা লিখিত আকারে সশরীরে নিম্নস্বাক্ষরকারীর অফিসে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ টার মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।
অভিযুক্তরা হলেন- হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মিজানুর রহমান ইমন, হিশাম নাজির শুভ, শাহরিয়ার হাসান পূলক ও সালাউদ্দিন সাকিব।
এছাড়া পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীকে অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নিজস্ব বক্তব্য প্রদান করতে নির্দেশ প্রদান করে ব্যবসায় প্রশাসনের অনুষদ কক্ষে ডেকেছে তদন্ত কমিটি।
এর আগে, গত শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) অফিস টাইমের একদম শেষে ভুক্তভোগী তাহমিন ওসমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরে কাছে অভিযোগ দিয়েছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে পরিচয়পর্ব শেখানোর নামে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর কয়েকজন সিনিয়র জিমনেশিয়ামের পেছনে নিয়ে পরিচয় কিভাবে দিতে হবে তা শেখানো শুরু করে। হাত-পা সোজা থাকতে হবে এরকম নির্দেশ তাদের। কিন্তু আমার হাত একটু মুঠ করায়। তারা বলে, তোর কী আমাদেরকে থাপড়াইতে ইচ্ছে করছে? ওইদিন আবার সন্ধ্যায় সাদ্দাম হলের সামনে সবার দিকে তাকিয়ে সালাম দিতে না পারায় মিজানুর ইমন আমাকে বলেন, তুই শুধু ওদের দিকে তাকিয়েই সালাম দিলি। আমাদের দিকে তাকালি না।
পরেরদিন ৩ সেপ্টেম্বর বিভাগের ক্রিকেটে খেলা ছিল বিকেল। বিকালে খেলার মাঠে আমি যেতে দেরি করি। খেলা শেষে শুভ এবং সাকিব ভাই আমাকে জিমনেশিয়ামের সামনে নিয়ে জিজ্ঞেসা করেন কেন আসতে দেরি করেছি। দেরি করার কারণে আবার তারা মানসিক নির্যাতন শুরু করে। তারা বলেন, যদি আমাদের কথা না মানিস। তোকে ব্যাচ আউট করে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে অভিযুক্তরা বরাবর নির্দোষ বলে দাবি তুলছে। অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ইমন বলেন, ‘আমরা ছোটভাইদের পরিচয় নিতে সবাইকে ডেকেছিলাম। পরবর্তীতে ক্রিকেট খেলা নিয়ে তাকে পানি আনতে বলা হয়েছিল। পরে বিষয়টা শিক্ষকরা জানতে পারলে সবাই মিলে বসে কথাবার্তা ঠিকঠাক করে নিয়েছি। কিন্তু সাদ্দাম হলের সামনে অকথ্য ভাষার অভিযোগ যেটা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন অকথ্য ভাষায় তাকে হেনস্তা ও মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। উদ্দেশ্যমূলক আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ১ম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগের দিনেই সব দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সচেতনতামূলক মাইকিং করা হয়েছে পরপর কয়েক দিন। বিলবোর্ডে র্যাগিং বিরোধী প্রচার রয়েছে। তারমধেই এইসব চলছে। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, কর্তৃপক্ষকে মার্ক করেছি, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমি বিভাগীয় সভাপতি ও ইবি থানার ওসিকে চিঠি দিয়েছি। একজন সহকারী প্রক্টরকে সার্বক্ষণিক দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছি। প্রভোস্টকে চিঠি দিয়েছি তাকে ১ টি সিট দেয়ার জন্য। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।’