ঢাকা, রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩: ত্রাণ চাইনা,ভিক্ষা চাইনা, উপকূলের মানুষের জন্য টেকসই ভেরীবাদ চাই, উপকূলের মানুষের জীবনমালের নিরাপত্তা চাই। বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছাসে ১৯৭০ সাল থেকে বছরে লাখ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। উপকূলের মানুষ আর কোনো জীবনহানি চায়নাা। তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা জীবনমালের নিরাপত্তা চায়।
রাষ্ট্রীয় বাজেটে উপকূলীয় ১৮ জেলার জন্য পৃথক বাজেটের দাবি করা হয়। যেভাবে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা-উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য মন্ত্রণালয় করা হয়েছে, যেভাবে হাওরাঞ্চলের জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তেমনি উপকূলের জন্য উপকূলীয় মন্ত্রণালয় কিংবা উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। উপকূল দিবস উপলক্ষে শনিবার ১১ নভেম্বর রাত ৯টায় দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অংশগ্রহণে অনলাইনে উম্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির সভাপতি আহমেদ আবু জাফর। সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলে অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নের দাবি করেন। ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৯৯১ সালের বন্যা, ২০০৭ সালের সিডরসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের স্মৃতিচারণ করে বক্তারা বলেন, ভয়াল ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সালের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বরগুনা-ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। লাখো মানুষ প্রলয়ঙ্করী এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায়। সেই ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে আজো বেঁচে আছেন অনেকে। স্বজন হারানো সেই বিভীষিকাময় দিনটি মনে পড়তেই আঁতকে উঠেন কেউ কেউ। জানা যায়, উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। শুধু বরগুনা-ভোলাতেই কয়েক লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। অসংখ্য জনপদ বিরাণ ভূমিতে রূপ নেয়। উত্তাল পায়রা, বিষখালী, সুগন্ধা, বলেশ্বরসহ উপকূলীয় নদ-নদী আর তাদের শাখা-প্রশাখাগুলো রূপান্তরিত হয়েছিল লাশের মিছিলে। ঝড়ের আঘাতে লণ্ড-ভণ্ড হয়েছিলো পুরো উপকূলীয় এলাকা। নদ-নদীতে এত মরদেহ ছিল যে ঐসময়ে মহকুমা প্রশাসন মাছ ধরায় পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হতে থাকে। মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে উঠতে শুরু করে সমুদ্র। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসে পর্বতসম উঁচু ঢেউ। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে লোকালয়ের উপর। আর মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গবাদি পশু, বাড়ি-ঘর, ক্ষেতের সোনালী ফসলসহ অনেক কিছু। পথে প্রান্তরে খোলা আকাশের নীচে পড়েছিলো কেবল লাশ আর লাশ। মরণপুরীতে রূপ নেয় গোটা দক্ষিণাঞ্চল। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এ ঘূর্ণিঝড়কে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিল।
সভায় স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএমএসএফ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা কুয়াকাটার সাংবাদিক মিজানুর রহমান, এশিয়ান নারী ও শিশু শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মুহাম্মদ আলী, বাংলা পোর্টালের সাব এডিটর মোস্তাফিজুর রহমান মিরাজ, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফরিদুল মোস্তফা খান, ভোলার সাংবাদিক রফিক সাদী, চরফ্যাশন বিএমএসএফ’র সভাপতি আদিত্য জাহিদ, পাইকগাছা বিএমএসএফ’র সভাপতি আব্দুল আজিজ সরদার, টেকনাফ বিএমএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সানি, কাউখালী বিএমএসএফ’র সভাপতি নুরুল হুদা বাবু, চাঁদপুরের সাংবাদিক দীন মোহাম্মদ, রাজাপুরের সাংবাদিক পলাশ ফরাজি, বরগুনার সাংবাদিক মিজানুর রহমান, ভোলার সাংবাদিক ইব্রাহিম আকাশ, সাভারের সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার, বগুড়া বিএমএসএফ’র সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রহিত, কোষাধ্যক্ষ ইমরানুল হক, লক্ষীপুরের কমলনগরের সাংবাদিক আল মামুন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। সভায় ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জোড়ালো দাবি করা হয়।