বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল অ্যাখায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই দল দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন হতে দিতে চায় না। মানুষ খুনই তাদের একমাত্র গুণ। এই খুনীদের বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অনুরোধ কেউ যদি গাড়িতে, মানুষের গায়ে আগুন দিতে চেষ্টা করে ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৪টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত ভাষণ দেন তিনি। দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটি মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ সময় উপস্থিত জনতা বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস আর স্লোগানের মাধ্যমে তাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান।
মহাসমাবেশে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই নৌকাই দেবে ৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
জনসভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। নৌকায় ভোট দিবেন কি-না বলেন, হাত উচিয়ে দেখান।’ এ সময় উপস্থিত জনতা দুই হাত তুলে সাড়া দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি/দেবার কিছু নাই/আছে শুধু ভালোবাসা/দিয়ে গেলাম তাই।’
বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে মহাসমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল সার্কিট হাউজ মাঠে এসে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। তাদের হাতে দলীয় প্রতীক নৌকাসহ বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি শোভা পাচ্ছিলো। সকালে ১০টায় পর থেকে খুলনা পরিণত হয়ে যেন মিছিলের নগরী। নগরীর সবগুলো রুট থেকে দলে দলে মানুষ সার্কিট হাউজ মাঠে যেতে থাকে। দুপুর ১২টার আগেই সার্কিট হাউজ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে জায়গা না পেয়ে মানুষ আশপাশের সড়কগুলোতে দাড়িয়ে মাইকে বক্তৃতা শুনেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ৩৭ মিনিটের ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিবরণ এবং বিএনপির সমালোচনা। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্রের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। আমি এক সময় দেখেছি বিদেশ থেকে কাপড় আনা হতো। মানুষ সেই পুরাতন কাপড় পড়ত। এখন আর পুরোনো কাপড় আনতে হয় না। এখন মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, ঘর পাচ্ছে। আশ্রয়ন প্রকল্প, বীর নিবাস গুচ্ছগ্রাম বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষকে ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি।’
গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে কারা আছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাছে আমার প্রশ্ন, ৯৬ সালে মজুরি ছিল ৮০০ টাকা, আমরা করেছি ১৬০০ টাকা। দ্বিতীয়বার ৩২০০ টাকা করা হলো। তৃতীয়বার ৮২০০ করা হয়েছে। চতুর্থবার ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন সরকার এটা করেছে? জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, আমরা সরকারি কর্মচারীদের ভাতা বাড়িয়েছি ৫ শতাংশ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়িয়েছে ৫৬ শতাশং। তারপরও তাদের আপত্তি।’