এম হাফিজুর রহমান শিমুলঃ আজ ২০ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা’র কালিগঞ্জ উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। প্রতিবছর এদিনটি উদযাপনে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, যুদ্ধকালীন সময়ে মেজার জলিলের নির্দেশক্রমে ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা ১৬০ জন সদস্য নিয়ে খানজিয়া বিওপি ক্যাম্প দখল নিতে পাকসেনাদের সাথে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয় । ৩০ মিনিটের এই প্রচন্ড যুদ্ধে পাক সেনাদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পাকসেনারা পরাজিত হয়ে পালায় তারা সাতক্ষীরা ও পারুলিয়া অবস্থান নেয়।এই যুদ্ধে যুদ্ধবন্দী হিসাবে ৪ জন পাক সেনা আহত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। ৩০ আগস্ট ১৯৭১: উকশা- গোবিন্দপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত ঘাটিতে ৪০০ পাকসেনা অতর্কিত আক্রমন চালালে উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ ঘন্টা যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধারা শত্রুসেনাদের পরাজিত করে এলাকা তেকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সীমান্তে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে ৮ জন পাকসেনা প্রাণ হারায়। পরে জানা যায় পাক মেজর গুরুতর আহত হলে তারা যুদ্ধ ফেলে পালিয়ে যায়। মুক্তি যোদ্ধাদের ফাঁদে পড়ে খানসেনারা জীবন দেয় বলে ঘটনাটি উকশার মরণ ফাঁদ নামে পরিচিতি। ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: পিরোজপুর গ্রামে গড়ে ওঠা মুক্তি যোদ্ধাদের ঘাঁটি আক্রমণ করতে আসা পাকবাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বহু পাকসেনা ও রাজাকার মারা পড়ে। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: সাব-সেক্টর কমান্ডার লে. মাহফুজ আলম বেগ ও কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের নেতৃত্বে আব্দুল হাকিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা কালিগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে তাদেরকে আত্মসর্মাপনে বাধ্য করে। একই দিনে কালিগঞ্জ বাজারে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের কালিগঞ্জ শাখা (বর্তমান সোনালী ব্যাংক) অপারেশন করে ব্যাংকের বেশ কয়েকটি বন্দুক হস্তগত করে। ২৯ সেপ্টম্বর ১৯৭১ : পাক বাহিনী দুললী মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প আক্রমন করে তাদের নিশ্চিন্ন করা জন্য অগ্রসর হয়।এই খবর মুক্তিযোদ্ধাদের গয়েন্দারা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পৌঁচ্ছে দেয়। পাক সেনাদের আক্রমনে মুক্তি যোদ্ধারা ভারি অস্ত্রের কাছে পেরে উঠতে না পেরে এই যুদ্ধের অধিনায়ক শেখ ওহেদুজ্জামান তার সহযোদ্ধাদের নিরাপদে স্থান ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। তা না হলে হয়ত অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই দিনেই শহীদ হতেন। মুক্তিযুদ্ধা রজব আলীর মাথায় আঘাত লাগায় তিনি গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন। ২০ নভেম্বর ১৯৭১: কালিগঞ্জ ওয়াপদা কলোনিতে অবস্থানরত পাকবাহিনী পশ্চিমা রেঞ্জার ও কিছু রাজাকারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা ভোর ৫ টায় আক্রমণ করলে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। ভোর ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত যুদ্ধে পাকবাহিনী পিছু হটে তবে বেশ কিছু পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়। এই ২ ঘন্টার সংঘষে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবে খান সেনারা তাদের যথেষ্ট জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয় তারা সবি গোপন রাখে। এই যুদ্ধে ৪০ জন পাকসেনা মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তার মধ্যে লে. আহসানউল্লাহ ২২ জন ও নায়েক সুবেদার গফুর ৬ জন খানসেনা বন্দী করেন। বাকী খান সেনারা কালিগঞ্জ থেকে পালিয়ে আলিপুর ও সাতক্ষীরার পুস্পকাটি নামক স্থানে শক্তিশালী ঘাটি করে। ফলে শত্রু মুক্ত হয় কালিগঞ্জ এই খবর মুহূত্বের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে কালিগঞ্জের গ্রামে গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের মানুষ জয় বাংলা মিছিলে মুখরিত করে কালিগঞ্জের রাস্তায় রাস্তায় সবাই মিলে কালিগঞ্জের ডাকবাংলা চত্তরের বকুল তলায় উত্তোলন করা হলো স্বাধীন বাংলার পতাকা। এই শুভক্ষণ আনন্দ মিশ্রিত অশ্রæসজাল মুহুত্ব আজও ভোলার নয়। কালিগঞ্জবাসী যা হারিয়েছে তার চেয়ে পেয়েছে অনেক কিছু স্বাধীনতার আনন্দ। এই দিনটি কালিগঞ্জ বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয় এটি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে আজীবন।