ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩:
‘ইসলামী আন্দোলনের নামে চরমোনাই পীররা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পবিত্র ইসলামের অপব্যবহার করছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসাইন।
‘গাজায় হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকা আর দেশের জননির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ দাবি করা তাদের স্বার্থের জন্য ভন্ডামিই প্রমাণ করে’ বলেন তিনি।
রোববার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে পার্টির পক্ষে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। মাওলানা শাহ মোহাম্মদ ওমর ফারুক, মাওলানা মহিউদ্দিন ফারুকী, ড. মোশাররফ হোসেনসহ পার্টির নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা ইসমাইল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করে আসছি যে- ইসলামী আন্দোলনের নামে চরমোনাই পীররা ও হেফাজতে ইসলামের নামে কিছু নেতা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পবিত্র ধর্ম ইসলামের অপব্যবহার করছে। এ জন্য তারা নিজেদের মতো একটি ‘সিন্ডিকেট ইসলাম’ বানিয়েছে। অর্থাৎ সিন্ডিকেটের মনমতো হলে এটা ‘ইসলাম’ আর না হলে ‘ইসলাম’ নয়। অসাংবিধানিক রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মুসলমানদের হত্যার কোনো প্রতিবাদ করে না। মনে রাখতে হবে, ধর্মব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র ইসলামের শত্রু নয়, দেশ ও দশের শত্রু, মানবতার শত্রু।’
তিনি বলেন, ‘চরমোনাই পীর সাহেবকে আমরা বলেছিলাম- হয় পীরগিরি করবেন, না হয় রাজনীতি করবেন, কিন্তু মানুষের ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে পীরালীর নামে রাজনীতি চলবে না। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চরমোনাইর পীর সাহেবদের জমিদখলসহ বিভিন্ন তথ্যও জনগণ জানিয়েছে।’
সাংবাদিকদেরকে মাওলানা ইসমাইল বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে জানাতে চাই- চরমোনাইর পীর সাহেব কিভাবে বিএমডব্লিউ গাড়িতে চড়েন এবং পুলিশ প্রোটেকশন দিয়ে চলেন- হুজুর কি বলবেন এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছেন আপনি? সরকারের কাছ থেকে জানতে চাই, চরমোনাই পীর সাহেব কিভাবে পুলিশ প্রোটেকশন পায় জাতি তা জানতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘চরমোনাই পীর সাহেব হুন্ডির মাধ্যমে বহু টাকা বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেন বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে- এ বিষয়ে সরকারকে তদন্ত করতে হবে। চরমোনাই পীরের সব ব্যাংক-ব্যালেন্স, জায়গা-জমি আর যা কিছু নামে বেনামে আছে, দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
হেফাজতে ইসলাম প্রসংগে মাওলানা ইসমাইল বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠাতা আমীর আল্লামা শফীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে যেভাবে তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার কক্ষে নির্যাতন করা হয়েছে, অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়াসহ অমানবিক আচরণের করুণ দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলায়ও এ সব অভিযোগ করা হয়েছে, তার ভক্তবৃন্দও এর প্রতিবাদ জানিয়েছে উল্লেখ করে ইসমাইল বলেন, এই হত্যা ষড়যন্ত্র এবং তৎপরবর্তী মাদ্রাসা দখলের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।
‘দেশবাসী মনে করে নির্বাচনের আগে দেশবিরোধী চক্রের ইন্ধনে কিছু হেফাজত নেতা ও চরমোনাই পীর দেশে শান্তি বিনষ্ট করতে চায়’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সেই কারণেই বিতর্কিত হুজুর মামুনুল হককে নিয়ে এতদিন তারা চুপ থাকলেও হঠাৎ তার মুক্তির দাবিতে ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের ষড়যন্ত্রে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।’
মাওলানা ইসমাইল বলেন, ‘এদের ভন্ডামি যখন দেশবাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে তখন তারা ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে মিথ্যা বিবৃতির আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা এ সকল ভন্ড ও ফেতনা সৃষ্টিকারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি মুসলমান ভাই-বোনদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’