আজ যা বর্তমান, আগামীকাল তা অতীত। আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে এক মুহূর্তর জন্য যদি অতীত ফিরে পাও তবে কোথায় যেতে চাও? চোখ বন্ধ করে আমি বলব আমার শৈশব জীবনে। এর চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত আর কিছু নেই।
সময় চলে গেছে বহু দূর! কিন্তু মনে হয় এই তো সেদিন আমি ছোট ছিলাম। খুব ছোট। আহ্, কোথায় গেল সে দিন?
মাত্র কিছুদিন আগে কালো পেন্ট , নীল শার্ট পরে গ্রামের সবাইকে ডেকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ৩৩ নং চাঁপাইগাছি সরকারি বিদ্যালয়ে যেতাম। আমার জীবনের অনন্য এক অধ্যায়জুড়ে আছে ছোট বেলার খেলার সাথী । এমন জুটি ছিলো আমাদের , তা অন্যনদের ছিলো না ।
প্রাইমারি পেরিয়ে হাইস্কুলে যেতে যেতে পথ বদলে গেল। আমার বন্ধু চলে গেল, দহকুলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে , আর আমি গেলাম বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
শুরু হলো নতুন অধ্যায়। নতুন স্কুলে পেলাম নতুন বন্ধু বান্ধবী। প্রথম থেকে সবার সাথে খুব ভালো ভাব হলো। ভাঙ্গা পাঙ্কু সাইকেল নিয়ে পৌঁছে যেতাম স্কুলে। ঝড়, বৃষ্টি, শীত, গরম—এসব কোনো কিছুই সমস্যা ছিল না।
সকালের মিষ্টি রোদে বই হাতে ব্যাগ হাতে নিজের ছায়া দেখার মাঝেও আনন্দ ছিল। এখন বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেখলেও এসব স্মৃতি আমায় আনমনা করে।
সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়তো অনেক আগেই। সকাল দশটা বাজতেই ক্লাস শুরু। তার আগে জমা হতাম সবাই স্কুলের মাঠে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ দিয়ে শুরু হতো দিন। আকাশে-বাতাসে যেন সত্যিই সে গানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ত। ড্রামের বিটে বিটে তাল মেলাতাম আমরা ছোট ছোট কিছু প্রাণ।
পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা দিয়ে সেই চানাচুর ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মজাদার খাবার। মা-বাবার কাছে আমাদের বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। টিফিনের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই টাকা; সেও ছিল অনেক বেশি। মেয়েরা সবসময়ই মেধা তালিকায় থাকতো। তাই মাঝেমধ্যে পরীক্ষায় ভালো মার্ক পাইয়ে দেওয়ার জন্য সেই এক টাকার ভাগ তাঁদেরও দিতে হতো। কাজটা প্রীতি, শিমু,সুরাইয়া সুমাইয়া করেছে। তবে আমি আর শামিম প্রায় সময় বার্ষিক পরীক্ষায় আট আনা পয়সা ঠিক ছেড়ে দিতাম। কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সেটাও মাথায় থাকত। এখন মনে হলে মাঝেমধ্যে হাসি পায়।
স্কুলের অনেক বন্ধুবান্ধবী পরে কলেজজীবনে অনেক কাছের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। স্কুলের গল্প উঠলে সবারই মুখ থেকে এটা-সেটা বের হতো। তা ছাড়া শৈশব থেকে আমার জীবনে সিনিয়র ভাইয়ারা ছিলো। আবার ছোটবেলায় কিছু সঙ্গী দের সঙ্গে তেমন কথা না হলেও বড় হয়ে অনেকের সঙ্গে দেখা হতো। কাউকে চিনতাম আবার কাউকে চিনতাম না।
কলেজে এসে আমার জীবনের একটা ঝড় নেমে আসলো। দিনটি ছিলো ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ (শুক্রবার)। তারপর থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত রেলস্টেশনে রাত কাটলো। তারপর বড় ভাইয়ের বাসায় উঠলাম। নেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ।
বর্তমানে এমন এক যায়গা আছি, যা আমার জীবনটাকে ছায়া হিসেবে আছেন । তাদের পরিবারের একজন বানিয়ে নিয়েছেন । আমার জীবনে ঝড় আশার পর তারাই পাশে দাড়িয়েছে বটবৃক্ষের মতো । তাদের ভালোবাসায় বর্তমানে অনেক ভালো আছি। কিন্তু সেই শৈশব টা এখন আর নেই। শুধু মনে পড়ে।
আমার বাকী জীবন টা পর্বতী খামে দেওয়া হবে ৷ (এখন চলমান)